বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৬ অপরাহ্ন

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণা

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ২.০৩ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সোমবার তার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। নেতৃত্বের প্রতি বাড়তে থাকা অসন্তোষের মুখে, পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীর হঠাৎ পদত্যাগে সরকারের অস্থিরতা প্রকাশ পায়, যার ফলে ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া তার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।

“আমি লিবারেল পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করছি, তবে তা হবে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পার্টি যখন তার পরবর্তী নেতা নির্বাচন করবে,” তিনি জানান।

বিরোধীরা অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জানালেও, শিগগিরই সেই সম্ভাবনা কম। ট্রুডো পার্লামেন্টকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি (প্রোরোগ) রাখার প্রস্তাব করেছেন, যাতে জানুয়ারি ২৭-এ শুরু হতে যাওয়া অধিবেশনে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি না হতে হয়।

ট্রুডো অটোয়ায় তার বাসভবন রিডো কটেজের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে গভর্নর জেনারেল মেরি সাইমনের সঙ্গে দেখা করেন, প্রোরোগেশন নিশ্চিত করতে। তিনি জানান, রোববার সন্ধ্যায় লিবারেল পার্টির সভাপতিকে দলের নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর অনুরোধ করেন।

“যদি আমাকে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়েই লড়তে হয়, তবে আসন্ন নির্বাচনে আমি সেরা বিকল্প হতে পারব না,” তিনি বলেন।

একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, পার্লামেন্ট, যা জানুয়ারি ২৭-এ পুনরায় বসার কথা ছিল, তা ২৪ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। এই সময়ের মধ্যেই লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধান তিনটি বিরোধী দল জানিয়েছে, তারা পার্লামেন্ট বসামাত্রই লিবারেল সরকারকে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ফেলে দিতে চায়। ফলে বসন্তকালের মধ্যে নতুন স্থায়ী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য ফেডারেল নির্বাচন প্রায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল।

“আমি একজন যোদ্ধা,” ট্রুডো বলেন। তবে তিনি যোগ করেন, “পরিস্থিতি স্পষ্ট—আমি আর পরবর্তী ফেডারেল নির্বাচনে লিবারেলদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সঠিক ব্যক্তি নই।”

রবিবার রাতের খাবারের সময় সন্তানদের তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। ছুটির দিনগুলোতে তিনি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনার সুযোগ পেয়েছিলেন।

২০১৫ সালে, এক দশকের রক্ষণশীল শাসনের পর ক্ষমতায় আসেন ট্রুডো। কানাডাকে আবার উদারনৈতিক (লিবারাল) ধারায় ফিরিয়ে আনায় শুরুতে তিনি অনেকের কাছে প্রশংসিত হন। তবে কানাডার বিখ্যাত প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর এই ৫৩ বছর বয়সী সন্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা হারান। এর পেছনে ছিল খাদ্য ও আবাসনের উচ্চমূল্য, অভিবাসনের হার বাড়তে থাকায় জনমনে অসন্তোষ, এবং অন্যান্য কারণে অসন্তোষ।

২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে ট্রুডো লিবারেল পার্টির নেতা হন। ২০১৫ সালের গ্রীষ্ম নাগাদ, প্রধানমন্ত্রী পদে তার প্রচারজোর বাড়তে থাকে এবং অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ফেডারেল নির্বাচনে তিনি ঐতিহাসিক জয় লাভ করেন। ৩৩৮টি আসনের মধ্যে লিবারেলরা সেসময় ১৮৪টি আসন পায়।

প্রথম মেয়াদে তিনি বৈশ্বিক উদারপন্থী রাজনীতির আইকন হিসেবে পরিচিত হন। কিন্তু ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের সফরকালে অত্যধিক পোশাক বদল এবং মুম্বাইয়ে কানাডিয়ান হাই কমিশনের এক অনুষ্ঠানে সাজাপ্রাপ্ত খালিস্তানি উগ্রপন্থীর উপস্থিতি নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়।

২০১৯ সালের ফেডারেল নির্বাচনের আগে তার ‘ব্রাউনফেস’ ছবিগুলি ফাঁস হলে সমালোচনা চরমে ওঠে। তবু তিনি আবার ক্ষমতায় ফিরতে সক্ষম হন, যদিও লিবারেল পার্টি তখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ১৫৭টি আসনে নেমে আসে।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় ব্যাপক আর্থিক সাহায্যও ২০২১ সালের নির্বাচনে তাকে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দিতে পারেনি; সেবার তারা ১৬০টি আসনে জয় পায়।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, তথাকথিত ‘ফ্রিডম কনভয়’-এর বিক্ষোভ থামাতে তিনি প্রথমবারের মতো জাতীয় জরুরি আইন প্রয়োগ করেন, যা সরকারকে কিছুটা কর্তৃত্ববাদী হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর থেকেই তার শাসন আর আগের জনপ্রিয়তা ফিরে পায়নি।

২০২৪ সালের মধ্যেই বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছিল, ট্রুডো ও লিবারেলদের জনপ্রিয়তা পড়তির দিকে। সেই বছর জুনে টরন্টোর “সেইন্ট পলস” আসনের উপনির্বাচনে লিবারেলদের পরাজয়ে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। তীব্র অভিবাসনের চাপে বসবাসের খরচ বেড়ে যাওয়া, স্বাস্থ্য ও পরিবহন অবকাঠামোর ওপর চাপ এবং অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়গুলিকে অনেকে তার জনপ্রিয়তা হারানোর মূল কারণ বলে মনে করেন।

বছরের শেষে, তিনি দলের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের মুখোমুখি হন। ডিসেম্বর মাসে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের আকস্মিক পদত্যাগে সেই বিদ্রোহ আরও তীব্র আকার নেয়। অন্টারিও, কুইবেক ও আটলান্টিক অঞ্চলের বহু এমপি, প্রায় ১০০ জনের মতো, তার দ্রুত পদত্যাগের দাবি জানান।

সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনী ফলের দিকে এগোতে পারত। ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগই মূলত পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এখন তিনিই লিবারেল নেতৃত্বের শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজন হবেন। অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন মন্ত্রী মেলানি জোলি, ডমিনিক লে ব্লঁ, ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শঁপ্যাঁ, অনিতা আনন্দ (একজন ইন্দো-কানাডিয়ান)। ট্রুডো সরকারের বাইরের কিছু শীর্ষনামও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে পারেন, যেমন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সাবেক প্রিমিয়ার ক্রিস্টি ক্লার্ক এবং ব্যাংক অব কানাডা ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি।

ট্রুডোর পিতা পিয়েরে ট্রুডো ১৯৬৮ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং প্রায় ১৬ বছর কানাডা শাসন করেন। বহুমুখী অভিবাসনের সুযোগ প্রসারিত করার জন্য তিনি দেশের ইতিহাসে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। পিয়েরে ট্রুডোকে প্রায়ই জন এফ কেনেডির সঙ্গে তুলনা করা হয় এবং তিনি আমেরিকায় পরিচিত কয়েকজন কানাডিয়ান রাজনীতিবিদের অন্যতম।

সংসদে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভ্র বলেন, তিনি লিবারেলদের নতুন নেতৃত্বকেও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, “গত ৯ বছরে ট্রুডো যা যা করেছে, সবকিছুর সঙ্গেই লিবারেল এমপিরা একমত ছিল। এখন তারা শুধু নেতাকে বদলে আবার চার বছরের জন্য মানুষকে ফাঁকি দিতে চায়।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024