বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন

২০৩২ সালের পরে আমাদের বয়স বাড়া বন্ধ করে দিতে পারে AI

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ৯.০০ পিএম

রে কার্জওয়েইল

রে কার্জওয়েইল এমন এক ভবিষ্যতের কথা ভাবেনযেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বুদ্ধিমত্তাকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলবেবেশির ভাগ রোগ জয় করবে এবং মানুষের আয়ু ৫০০ বছর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করবে। এই ধারণা আমাদের জীবনের প্রকৃতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।

রে কার্জওয়েইল একজন বিজ্ঞানী এবং অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন ও টেক্সট-টু-স্পিচ সিনথেসাইসের মতো প্রযুক্তির অগ্রণী উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত। একই সঙ্গে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত সাহসী সব পূর্বাভাস দেওয়ার জন্যও বিখ্যাত।

২০০০ সালের কাছাকাছি সময়েকার্জওয়েইল সিঙ্গুলারিটির ধারণা তুলে ধরতে শুরু করেনযে মুহূর্তে AI সমগ্র মানবজাতির সম্মিলিত বুদ্ধিমত্তাকেও অতিক্রম করে exponentials হারে নিজেই নিজেকে আরো উন্নত করতে শুরু করবে। তিনি বলেনএই সিঙ্গুলারিটি ২০৪৫ সালে এসে পৌঁছাবে। এই ধারণা বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সম্প্রতি নিক্কেইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি AI-চালিত মানবজাতির সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলছেন, AI এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাবে যখন সেটি আরও উন্নত AI তৈরি করতে পারবে এবং আমাদের মস্তিষ্ককে এর সাথে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে। ফলে আমাদের বুদ্ধিমত্তা মিলিয়ন গুণ বৃদ্ধি পাবে।” কার্জওয়েইল বলেন, “আমাদের বুদ্ধিমত্তা কেবল মাথার ভেতর সীমাবদ্ধ থাকবে নাক্লাউডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে এবং অনির্দিষ্ট মাত্রায় প্রসারিত হতে পারবে।

এ ভবিষ্যতের আভাস হিসেবেই তিনি উল্লেখ করেন২০২৯ সালের মধ্যেই AI “মানুষের কাজের চেয়ে ভালো” হয়ে উঠবে। অর্থাৎ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্পূর্ণ নতুন এক ধাপে প্রবেশ করতে যাচ্ছেএ ধারণা তার দৃঢ় বিশ্বাস।অতীতের সাধারণ ধারণা ইতিমধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ChatGPT-এর মতো অত্যাধুনিক সংলাপকেন্দ্রিক AI-এর আবির্ভাবে সমাজে বড় রকমের পরিবর্তন আসছে।

কার্জওয়েইল যখন প্রথম ২০২৯ সালের মধ্যে AI মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা দিয়েছিলেনতখন অনেকেই এটিকে অত্যন্ত আশাবাদী” এবং আশ্চর্যজনক” বলে মনে করেছিলেন। এমনকি নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীরাও তখন বলেছিলেনএ কাজে ১০০ বছর লেগে যেতে পারে। কিন্তু এখন ২০২৯ সালের ভবিষ্যদ্বাণীকেও অনেকে সংযত” বলে মনে করছেন।

সিঙ্গুলারিটির পর সমাজ কীভাবে বদলে যাবেকার্জওয়েইলের ধারণায় সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে। বিভিন্ন রোগ চিকিৎসায় প্রোটিনের গঠন চিহ্নিত করার মতো ক্ষেত্রে AI ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সহায়তা করছে। কার্জওয়েইল বলেন, AI “আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সবকিছু বদলে দেবে,” এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণে একটি বিপ্লব” নিয়ে আসবে।

কার্জওয়েইলের এমনকি ধারণা, “আমরা বেশিরভাগ রোগের চিকিৎসা পেয়ে যাব” এবং বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও থামিয়ে দিতে পারব। এখন যেমন এক বছর পার হলে মানুষের আয়ুর এক বছর কমেকিন্তু AI-সমৃদ্ধ চিকিৎসা প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় আমরা প্রতিটি অতিক্রান্ত বছরের জন্য আবারও এক বছর আয়ু ফিরে পেতে পারব।

তিনি বলেন, “২০৩২ সালের কাছাকাছি সময়ে আপনি পুরো এক বছর আয়ু ফিরিয়ে নিতে পারবেন। আপনি একটা বছর অতিবাহিত করবেন বটেকিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে আবার সেই বছরই ফিরিয়ে আনতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার বয়স আর বাড়বে না।

এর মানেমানুষ কার্যত বয়স বৃদ্ধিকে থামিয়ে দিতে পারবে। কার্জওয়েইল এই অবস্থাকে বলেন দীর্ঘায়ু পলায়ন বেগ,” যার মাধ্যমে মানুষEventually ৫০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।

তবে দীর্ঘ আয়ুই যে মানবজীবনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থপূর্ণতা নিয়ে আসবেতা নয়। অনেকে দীর্ঘায়ু পেতে চাইবে নাএ বিষয়টি বিতর্কিত বলে তিনি স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেনকারণ আমরা এমন অনেক কিছু করতে পারবযা আগে কখনও সম্ভব ছিল না।” তিনি আরও বলেন, “আমি এমন লোকজনকে জানি যারা হয়তো ৯৫ বছর বয়সে এসে জীবন শেষ করতে চাইতেনকিন্তু যখন তারা ৯৫ ছোঁয়তখনও তারা পরের দিনটা দেখতে চান।

কিছু গবেষক এখন দাবি করছেন যে মানুষের মতো যেকোনো সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা নিয়ে এজিআই (Artificial General Intelligence) মাত্র দুই বছরের মধ্যেই বাস্তবে রূপ নিতে পারে। আর এজিআই মানুষের মতো আচরণ শুরু করলে এর মধ্যে চেতনা” বা সচেতনতা আছে কি নাতা নিয়ে বহুদিন ধরেই বিতর্ক চলছে।

এ প্রসঙ্গে কার্জওয়েইল বলেন, “কোনো ব্যক্তি সচেতন কিনাসে প্রশ্নটি আসলে দার্শনিক।” AI সচেতন কি নাতার কোনো বৈজ্ঞানিক নির্ধারণী পদ্ধতি নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তবে তিনি ধারণা দেন, “শেষ পর্যন্ত আমরা বিশ্বাস করব যে ওরা সচেতন।

প্রভাবশালী AI গবেষকদের মধ্যেও এখন এই প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশজনিত বিপদের ব্যাপারে উদ্বেগ বাড়ছে। কার্জওয়েইল স্বীকার করেন, “প্রযুক্তির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার সময় ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করাটা আমাদের নৈতিক কর্তব্য।” তবুও তিনি আশাবাদী।

তিনি বলেন, “ঝুঁকি আছে ঠিকইতবে তা সর্বদাই ছিল। আমরা কি ৮,০০০ বছর পেছনে গিয়ে মানুষের গড় আয়ু ২০ বছরে নামিয়ে আনতে চাইআমরা ঝুঁকির মধ্য দিয়েই অগ্রগতি করেছি।” তার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে রয়েছে এই বিশ্বাস যে মানুষযারা পরমাণু বোমা বানাতে সক্ষমতারাই বাস্তবে কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক হতে পারে।

কার্জওয়েইল গত বছর ৭৬ বছরে পা রেখেছেন। এখন থেকে তার প্রত্যাশিত সিঙ্গুলারিটির সময়সীমা ২০ বছর বাকি। ক্রমবর্ধমান বিভক্ত এবং বিশৃঙ্খল বিশ্বে তিনি আশা করেননিজে বেঁচে থেকে এই যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

তিনি আত্মবিশ্বাসী যে মানুষ AI-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে এক নতুন পৃথিবী গড়বেআর তাতেই উন্নতি সাধিত হবে। মানুষ আর AI-এর সংমিশ্রণে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ হবেসেটা কেবল মানুষের ওপর নির্ভর করার চেয়ে ভালো হবে। আমি মনে করি AI-য়ের ওপর আস্থাশীল হওয়া আমাদের জন্য উপকারী হবেমানুষের হাতে সবকিছু ছেড়ে দেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024