অ্যান্ড্রু কোয়েন
কানাডায় এখন একজন ক্ষমতাহীন প্রধানমন্ত্রী, বন্ধ পার্লামেন্ট এবং বৈধতা-হীন এক সরকার। “আমি সব সময় কানাডিয়ানদের সর্বোত্তম স্বার্থের কথা ভাবি,”— নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় এমনটাই বলেছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্তে মনে হচ্ছে দেশের স্বার্থের চেয়ে লিবারেল পার্টির স্বার্থই বড় হয়ে উঠেছে।
এক মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমরা এখন বিশ্বে একটি সংকটময় মুহূর্তে আছি।” এটুকু অন্তত ঠিক বলেছেন তিনি, বিশেষত কানাডার দিক থেকে বিষয়টি জরুরি। দেশটি এখন একাধিক দিক থেকে হুমকির সম্মুখীন: চীনের কাছ থেকে, ভারতের কাছ থেকে, রাশিয়ার কাছ থেকে, তবে সবচেয়ে অবিশ্বাস্যভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে—যেখানে নতুন রাষ্ট্রপতি কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই আমাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এবং পরবর্তী কয়েক মাসে আমরা কিছু করার আগে কেবল নিশ্চুপ বসে থাকতে হবে—কারণ প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন, কিন্তু আবার তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি থাকছেন।
একাকী তাঁর কার্যালয়ে—যেখানে তাঁর কর্মীরা অন্যত্র চাকরি খোঁজার প্রস্তুতিতে—প্রধানমন্ত্রী হয়তো কথা বলবেন, কিন্তু কেউ শুনবে না। পুরোনো পরিচিত সব কটি শিকল টানবেন, কিন্তু দেখবেন কোনো কিছুর সঙ্গেই সেগুলো আর সংযোগ নেই।
নেতা পদে থেকে উত্তরসূরি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত থাকার মধ্যে মূলত কোনো সমস্যা নেই। পার্লামেন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত বা প্ররোগ করার বিষয়টিও নীতিগতভাবে অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যেভাবে এবং যে সময়ে এটি করা হচ্ছে, সেটিই আসল সমস্যা।
প্রধানমন্ত্রী গভর্নর জেনারেলকে পরামর্শ দিয়েছেন পার্লামেন্ট ২৪শে মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রাখতে—অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় তিন মাস। এটি তিনি নিজেই বেছে নিয়েছেন। যে কারণ দেখানো হচ্ছে—পার্লামেন্ট “অচল” অবস্থায় রয়েছে এবং “পুনর্বিন্যাস” দরকার—তা আদতে অবান্তর: সংসদে চেয়ে বসা নথিপত্র সরবরাহ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব ছিল। সরকার যদি তা মেনে নিত, তাহলে অচলাবস্থা অনেক আগেই কেটে যেত।
বরং ধরুন, যদি সত্যিই “পুনর্বিন্যাস” দরকার হয়, সেটি এক দিনে সম্ভব। এত দীর্ঘ সময় পার্লামেন্ট বন্ধ রাখার একটিই কারণ: এই সরকারকে অনাস্থা ভোটের মুখে পড়া থেকে বিরত রাখা, যখন লিবারেলরা নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। অথচ ওই নির্বাচন চাইলে কয়েক দিনের মধ্যেই—সবোর্চ্চ দুই সপ্তাহ—সম্মন্ন করা যেত, যাতে পার্লামেন্ট পূর্বনির্ধারিত ২৭শে জানুয়ারিতে ফের বসতে পারে। সময় আরেকটু কমে আসছে, কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব শিগগিরই হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করছেন। অবশ্য দুই সপ্তাহে সবার অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী এক-ব্যক্তি-এক-ভোট পদ্ধতির নেতৃত্ব নির্বাচন করা কঠিন। কিন্তু সেটিই বা দরকার কী? সদস্যপদ জোগাড় করে নেতৃত্ব নির্বাচন করা এমনিতেই সবসময় সেরা পদ্ধতি নয়। আর যদি কখনো ককাসের সদস্যদের হাতে নেতা বেছে নেওয়ার সময় থাকে, সেটি এখনই।
ফলে আমরা তিনটি বড় রকমের দায়িত্বহীনতার মুখোমুখি হচ্ছি। প্রথমত, বহু সপ্তাহ ধরে কার্যত দেশ নেতাবিহীন থাকবে। দ্বিতীয়ত, পার্লামেন্ট পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। তৃতীয়ত, এই সময়ে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের কোন্দলে ব্যস্ত থাকবে, দেশের কাজ নিয়ে মনোযোগী হওয়ার বদলে—যেন হ্যামলেট নাটকের শেষ দৃশ্যে ফোর্টিনট্রাম্পের সেনাবাহিনীর আগমন সম্পূর্ণ অগোচরে থেকে যায়।
এর উপরে আছে আরেক শঙ্কা—বিদেশি হোক বা দেশীয়, যে কেউ নেতৃত্ব নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাতে পারে। এ নিয়ে আগ থেকেই উদ্বেগ ছিল, আর এখনকার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে এটা যেন পাঁচ-আলেয়ার সতর্কসংকেত।
এটি কোনোভাবেই দেশের স্বার্থকে সবার আগে রাখার দৃষ্টান্ত নয়। অনেকে মনে করতে পারেন, এর আগেই ট্রুডোর সরে দাঁড়ানো উচিত ছিল, কিন্তু এখন যখন তিনি যাচ্ছেন বলেই স্থির করেছেন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এর নিষ্পত্তি হওয়া দরকার—এবং তার দলকেও দ্রুততা নিশ্চিত করতে হবে। এখন দেশের যা প্রয়োজন, তা কোনো দলের নেতৃত্ব নির্বাচন নয়, বরং একটি সাধারণ নির্বাচন।
অন্তত, আস্থাভোটের বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। যে কোনো সরকার, যার বিরুদ্ধে সংসদের আস্থা নিয়ে সংশয় আছে, তাদের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা করা এমনিতেই খারাপ। আর বর্তমান সংকটে এটি বিপর্যয় ডেকে আনবে। যে সরকার পার্লামেন্টের কাছ থেকে পালাতে চায়, তাদের সরকারে থাকার কোনো অধিকার নেই। লিবারেলরা হয়তো তাদের নতুন নেতা নিয়েই এই আস্থাভোটে যেতে চাইবে। কিন্তু যদি সত্যিই দেশের কল্যাণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়, তবে আস্থাভোটের তারিখের সঙ্গেই নেতৃত্ব নির্বাচন-প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করা হবে, তার উল্টোটা নয়। লিবারেল দলের সাংবিধানিক নিয়ম পূর্বেও নমনীয়তার পরিচয় দিয়েছে, এখন আবারও ককাসভিত্তিক দ্রুত নেতা নির্বাচনের পথ খুলে দিতে পারে।
নতুন নেতা এলে, হয়তো সরকারের পক্ষে আস্থাভোটে টিকে থাকা সম্ভব হতে পারে, এনডিপি নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্য সত্ত্বেও। এর চেয়েও অদ্ভুত ঘটনা রাজনীতিতে ঘটেছে। কিন্তু তাতে না হলে, সেটাই হবে সঠিক পরিণতি। এখন কোনো সময় ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। দেশের এখন নেতৃত্ব চাই, আর বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটির জন্য দরকার একটি নতুন ম্যান্ডেট। তিন মাস পর না, চার বা পাঁচ মাস পরও নয়, এখনই।
Leave a Reply