বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন

শৈত্যপ্রবাহ আসছে, থাকবে কতদিন? কোন কোন জেলায় শীত বেশি পড়বে?

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ২.৪৭ পিএম
শীতে উষ্ণতা পেতে আগুন জ্বালিয়ে তাপ পোহাচ্ছেন অনেকে

তারেকুজ্জামান শিমুল

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আকারের দিক থেকে শৈত্যপ্রবাহটি মৃদু থেকে মাঝারী হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

ওই সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা গড়ে দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় ঘন কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

“ইতোমধ্যেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে, যা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

তাপমাত্রা কমতে থাকায় বাড়ছে কুয়াশা, যার দাপট দেখা যাচ্ছে প্রকৃতিতে। ঘন কুয়াশার কারণের বুধবার ঢাকাসহ বেশিরভাগ জেলায় দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখা যায়নি।

এর মধ্যেই বইছে হিমশীতল বাতাস, যার ফলে জনজীবন বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে, ঠাণ্ডা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ। শিশু ও বৃদ্ধরাই এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

গত কয়েকদিনে ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জেলা শহরগুলোতেও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে।

কিন্তু এই অবস্থা আর কতদিন থাকবে?

সারা দেশে হঠাৎ ঘন কুয়াশা পড়তে দেখা যাচ্ছে

জেঁকে বসছে শীত, কাঁপছে সারা দেশ

বেশ কয়েকদিন বিরতির পর সারা দেশে আবারও শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে।

বুধবার ঢাকাসহ প্রায় সব জেলায় লম্বা সময় ধরে ঘন কুয়াশা লক্ষ্য করা গেছে। ঠাণ্ডা বাতাসের সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতাও।

অথচ শৈত্যপ্রবাহ এখনও শুরু হয়নি বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।

“এটাকে শৈত্যপ্রবাহের পূর্বলক্ষণ বলা যেতে পারে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান।

পরের কয়েকদিন সারা দেশের গড় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইতোমধ্যেই ঢাকার তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে, শহরটির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

“ঢাকায় গত তিন-চার দিনে দিনের বেলা শীতের কাপড় করার প্রয়োজন পড়েনি। অথচ আজ (বুধবার) দুপুর বেলাতেও রীতিমত জ্যাকেট পরে বের হতে হয়েছে,” বলছিলেন ঢাকার একজন বাসিন্দা রুহুল আমিন।

ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে ১২ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর চেয়ে সামান্য বেশি ছিল শ্রীমঙ্গলে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা বাড়তেও দেখা গেছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বুধবার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এছাড়া উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলোতেও তাপমাত্রা খুব একটা কমতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারপরও জেলাগুলোতে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

“ঠাণ্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণেই শীতের তীব্রতা বেশি মনে হচ্ছে,” বলেন আবহাওয়াবিদ মি. মল্লিক।

শীতে অনেক জায়গায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে

শৈত্যপ্রবাহ শুরু কবে?

বুধবার রাতে থেকেই সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

“এসময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে, যা পরবর্তী দুই-তিন দিন পর্যন্ত চলতে পারে,” বলেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

সব মিলিয়ে আগামী ১৪ই জানুয়ারির মধ্যে দেশজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার একটি শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

“তবে সেটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। খুব স্বল্প সময়ের জন্য থাকতে পারে,” বলছিলেন মি. মল্লিক।

উল্লেখ্য যে, তাপমাত্রা আট থেকে দশ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

এছাড়া ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

১৪ই জানুয়ারির পর আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

“এর কয়েকদিন পর জানুয়ারির শেষ দশ দিনে আরও এক থেকে দু’টি মৃদু থেকে মাঝারী শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. মল্লিক।

ওই সময় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া এবং চুয়াডাঙ্গায় শীত বেশি অনুভূত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর

হঠাৎ কুয়াশা বাড়ছে কেন?

যেসব কারণে বাংলাদেশে এ বছর শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে, সেগুলোর একটি হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা পড়া। বুধবার প্রায় সারাদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কুয়াশা পড়তে দেখা গেছে।

হঠাৎ এই কুয়াশা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বায়ু দূষণকে দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদরা। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের সূচকে ঢাকা এখন বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় রয়েছে।

যানবাহন, ইটভাটা ও শিল্প-কারখানার দূষিত ধোঁয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানান কারণে সারাদেশেই আগের চেয়ে বায়ু দূষণ বেড়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে।

এর মধ্যেই আবার জানুয়ারিতে দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে দূষিত বায়ু প্রবেশের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

“দূষিত এই বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা মিশে রয়েছে, যা মেঘ ও কুয়াশা তৈরিতে নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখছে” বিবিসি বাংলাকে বলেন আবহাওয়াবিদ মি. মল্লিক।

অন্যদিকে, দীর্ঘ সময়ের কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণকাল কমে এসেছে। অর্থাৎ সূর্যের আলো বেশিক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না।

“স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল আট থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন কুয়াশার কারণে সেটি কমে আসছে”, বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. মল্লিক।

এতে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় দিনের ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে।

“এর ফলে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে,” বলেন মি. মল্লিক।

শীতল আবহাওয়ায় বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা

চাপ বাড়ছে হাসপাতালে

শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে, শিশু ও বৃদ্ধরাই এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

গত কয়েক সপ্তাহে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে ঢাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি)।

“আগে দিনে যেখানে চারশ থেকে সাড়ে চারশ’র মতো রোগী আসতো, সেটি এখন বেড়ে এখন প্রায় হাজার ছুঁতে চলেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন প্রতিষ্ঠানটির এসএসইউ ওয়ার্ডের ক্লিনিক্যাল লিড ডা. শোয়েব বিন ইসলাম।

মূলতঃ রোটা ভাইরাসের কারণেই শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান এই চিকিৎসক।

“শীত আসলেই শিশুদের মধ্যে এই রোগ বাড়তে দেখা যায়। ডায়রিয়ার সঙ্গে অনেকে নিউমোনিয়া নিয়েও ভর্তি হচ্ছে,” বলেন মি. ইসলাম।

একই কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা।

শীতের কারণে দিনের বেলায় গরম কাপড় পরে বের হতে হচ্ছে

গত এক সপ্তাহে হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় দশ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুল হক।

“সারা দেশ থেকেই এসব রোগী আসছে,” বলছিলেন মি. হক।

ঢাকার বাইরে জেলা শহরগুলোতেও শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরেই যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, সিলেটসহ অনেক জেলায় তাপমাত্রা কমতে দেখা গেছে। সেখানকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট নিয়ে অনেকে রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

“গত এক সপ্তাহে যশোর সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দশ গুণ বেড়েছে। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি,” বিবিসি বাংলাকে বলেন যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. নাজমুস সাদিক।

তবে কেবল শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কোথাও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

বিবিসি নিউজ বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024