বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩০ অপরাহ্ন

২০২৫ সালে কোথায় ভ্রমণ করবেন: দেখার জন্য সেরা জায়গাগুলি

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ৬.৪৯ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

পৃথিবী এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বড় ও পরস্পর সংযুক্ত। আধুনিক উড়োজাহাজ নিউ ইয়র্ক থেকে সিঙ্গাপুর বা লন্ডন থেকে কেপ টাউন এমনভাবে পৌঁছে দেয়যা কয়েক প্রজন্ম আগেও কল্পনাতীত ছিল। কিন্তু ভ্রমণের অসংখ্য বিকল্পে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যানকোথায় যাবেনপ্রতিটি জায়গার নিজস্ব আকর্ষণ আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবু এই তালিকায় এমন ২৫টি গন্তব্যকে তুলে ধরা হলোযেগুলো আমাদের মতে ২০২৫ সালে বিশেষভাবে মূল্যবান ও চমৎকার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দিতে পারে।

১) আলমাটিকাজাখস্তান

কেন্দ্রীয় এশিয়ার রুক্ষ প্রকৃতি ও অনন্য শহরগুলি এখন খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো কাজাখস্তানের বৃহত্তম শহর আলমাটিসম্প্রতি একে বলা হচ্ছে মধ্য এশিয়ার নতুন ক্যাপিটাল অফ কুল
শহরটি বৈচিত্র্যময়: সুস্বাদু খাবারজমকালো নাইটলাইফদ্রুত বিকাশমান শিল্প-সংস্কৃতি এবং তিয়ান শান পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় হাতের কাছেই অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আলমাটির মেট্রো স্টেশনগুলো সত্যিকারের শিল্পকর্মের মতোযা শহরের বিখ্যাত জাদুঘরগুলোর পরিপূরকযেমন আবিলখান কাস্তিয়েভ স্টেট আর্ট মিউজিয়াম (২০ হাজারের বেশি শিল্পকর্ম) এবং ২০২৫ সালে নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হতে যাওয়া ত্সেলিন্নি সেন্টার অফ কনটেম্পোরারি কালচার।
খাবারের ক্ষেত্রে আলমাটি নিও নোম্যাড কুইজিন”-এর সূতিকাগার হিসেবে পরিচিতসমসাময়িক রান্নার কৌশল ও ঐতিহ্যবাহী উপকরণের মিশেল। শুরুটা করতে পারেন শহরের দক্ষিণে মেদেউ ভ্যালিতে অবস্থিত অত্যাশ্চর্য আউইল রেস্তোরাঁ থেকে।
ইউরোপএশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু শহর থেকে সরাসরি ফ্লাইটে আলমাটি যাওয়া যায়। তাছাড়া কাজাখস্তান যুক্তরাষ্ট্রকানাডাঅস্ট্রেলিয়াযুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়।

২) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জভারত

ভারতের এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বঙ্গোপসাগরের অনেকটা ভেতরে অবস্থিত। এতদিন সাধারণ পর্যটকদের জন্য বেশ দুর্গম ছিল। তবে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে প্রথম আন্তর্জাতিক নির্ধারিত যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালু হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।
অনেকেই এ অঞ্চলের নাম শুনে সম্ভবত ভুলভাবে নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপে এক অভিযাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাকে মনে করবেন। তবে অতি দুর্গম ও প্রবেশ নিষেধাজ্ঞাসহ নানা কারণে ঐ দ্বীপে যাওয়াই অবৈধ এবং মূল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপগুলোর আতিথেয়তা সেখানকার ভিন্ন বাস্তবতা।
সুবিশাল সমুদ্রতটের পাশে স্থানীয় মালিকানাধীন ক্যাফেতে তাজা জুসচা ও পরোটানিরিবিলি সমুদ্রসৈকত আর অতল নীল জলরাশিতে স্নরকেলিং-কায়াকিংয়ের মতো অফুরন্ত সুযোগ পাবেন। ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বারেন আইল্যান্ডে ব্যক্তিগত নৌকায় যাওয়া যায়। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ফেরিতে সওয়ার দ্বীপ (স্বরাজ দ্বীপ) স্কুবা ডাইভিংয়ের স্বর্গরাজ্য।
ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল হওয়ায় সত্যিকারের ডিজিটাল ডিটক্স” বা নিরিবিলিতে ছুটি কাটানোর সুযোগ এখানে অপেক্ষা করছে।

৩) বেকুয়াসেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডিনস

এভরি বডি ড্রিমস আ ফি গো ইংল্যান্ডমাই ড্রিমস টু গো বেকুয়া,” গায়ক মারলো বেন-এর সোকার কথায় বোঝা যায় কারিবিয়ানের এই ছোট্ট দ্বীপ কতটা আকর্ষণীয়। এর উচ্চারণ বেক-ওয়ে। মাত্র সাত বর্গমাইলের দ্বীপে সাদা বালির সৈকতসারা বছর উষ্ণ আবহাওয়া এবং অপূর্ব সবুজের সমারোহ।
বার্বাডোজ থেকে মাত্র আধা ঘণ্টার ফ্লাইটে পৌঁছে যাবেন সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডিনস-এর ৩২টি দ্বীপের অন্যতম বেকুয়ায়। পাশের মাস্টিক দ্বীপের নাম বেশি পরিচিত হলেও বেকুয়া সৌন্দর্যে অনবদ্য। ২০২৪ সালে ক্যাটাগরি ৪ হারিকেন বেরিলের আঘাত সত্ত্বেও দ্বীপটি নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আগের তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে।
সাদা বালির প্রিন্সেস মার্গারেট বিচ (রানী এলিজাবেথের ছোট বোন প্রিন্সেস মার্গারেটের নামে) সবচেয়ে বিখ্যাতপাশাপাশি সবচেয়ে সুন্দরও। দ্বীপের হেরিটেজ মিউজিয়ামে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যাবেযেখানে স্থানীয় তিমি শিকারের ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবছর গ্রেনাডিনসের সামুদ্রিক ঐতিহ্য উদ্‌যাপন করতে অনুষ্ঠিত ট্রেডউইন্ডস ইয়ট ইভেন্ট বেশ দর্শনার্থী টানে।

৪) বলিভিয়া

২০২৫ সালের ৬ আগস্ট বলিভিয়ার স্পেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার ২০০ বছর পূর্তি হবে। স্বাধীনতার নেতা সিমন বোলিভার ছিলেন দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট। এখনো আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা গোপন রাখা হলেও ২০২৫ সাল হবে বলিভিয়ায় বড় উৎসবের বছর।
অনেক পর্যটক পেরু ভ্রমণের পথে বলিভিয়ায় ঢুঁ মারেনকিন্তু এখানে আপনার পুরো ছুটি কাটানোর মতোই বৈচিত্র্য আছে। লা পাজের রেস্তোরাঁর দৃশ্য বর্তমানে লিমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেবিশেষ করে ক্লাউস মেয়ার (নোমার সহ-প্রতিষ্ঠাতা) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং এখন স্থানীয় শেফ মারসিয়া তাহার পরিচালিত গুস্তু রেস্তোরাঁ। এখানে অ্যালিগেটর থেকে ল্লামানানা উপকরণ ও অভিনব উপায়ে পরিবেশন করা হয়।
উচ্চতায় (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,৬৫০ মিটার) লা পাজের মতো শহরে আতিক্স হোটেলের মতো উচ্চমানের থাকার জায়গা পাবেনআর উইয়ুনি লবণmeer-এ (সালার দে উইয়ুনি) আছে বিলাসবহুল এয়ারস্ট্রিম ক্যাম্পার ভাড়া করার সুযোগ।
লা পাজ থেকে লেক টিটিকাকা বা প্রাচীন তিওয়ানাকু সভ্যতার নিদর্শনকিংবা ঔপনিবেশিক স্থাপত্যসমৃদ্ধ ইউনেস্কো স্বীকৃত সুক্রে শহরসবখানেই তুলনামূলক পর্যটকের ভিড় কম।

৫) কেমনিজজার্মানি

জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এই শহরের কেন্দ্রে কার্ল মার্ক্সের বিশাল ব্রোঞ্জের মাথার ভাস্কর্য আছেলম্বায় যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবক্ষ ভাস্কর্য। ১৯৭১ সালে স্থাপিত এই ভাস্কর্য শহরটির ঐতিহাসিক পটভূমির অন্যতম প্রতীক।
২০২৫ সালে কেমনিজ হবে ইউরোপের অন্যতম কালচারাল ক্যাপিটাল (স্লোভেনিয়ার নোভা গোরিচার সঙ্গে)। শহরটি একসময় জার্মানির সবচেয়ে ধনী শহরগুলোর মধ্যে ছিল। বর্তমানে জ্যাজইন্ডি ও ড্যান্স ফেস্টিভ্যালস্ট্রিট আর্টভিনটেজ গাড়ির প্রদর্শনী ও নানা প্রদর্শনীতে বৈচিত্র্যের প্রকাশ ঘটছে।
শহরটির স্থাপত্যরীতি বেশ বৈচিত্র্যময়পুরোনো টাউন হল (পঞ্চদশ শতকের) ও তার পাশের আর্ট নুভো ধাঁচের নতুন টাউন হল (বিশ শতকের গোড়ার দিকের) অন্যতম সুন্দর দৃষ্টান্ত। সি দ্য আনসিন” মূলমন্ত্রে Purple Path নামে একটি ভাস্কর্য ও শিল্পচর্চার পথ শহরটিকে সংলগ্ন আরও ৩৮টি পৌর এলাকায় যুক্ত করেছে।

৬) ইংল্যান্ডের ফুটপাথ

ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলে সহস্র কিলোমিটার পায়ে হাঁটার পথব্রিডলওয়ে ও বাইওয়ে রয়েছেঅনেকগুলোই আদিম যুগ থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছে। ৭৫ বছরেরও বেশি সময় আগে পাস হওয়া আইনের ফলে জমির মালিকানা নির্বিশেষে এগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
ইংল্যান্ডে পর্বত নেই বলা চলেকিন্তু ঘরের দরজার সামনেই হয়তো দেখবেন সবুজ গলিপথগাছের ছায়ায় তৈরি সুড়ঙ্গবা উঁচু মোয়ারে হারিয়ে যাবার পথ। লম্বা পথের মধ্যে পেনাইন ওয়ে (যেটি ২০২৫ সালে ৬০ পূর্ণ করবে)কোস্ট-টু-কোস্টসাউথ ডাউনস ওয়ে ইত্যাদি বিখ্যাত। তবে কিছুটা নিরিবিলি অঞ্চলে নিজেই মানচিত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়া যায়।
লন্ডনে থাকলে ক্যাপিটাল রিং ওয়াক” ঘুরতে পারেনশহরের আশপাশে বৃত্তাকারে সাজানো পথ। অথবা লন্ডন অ্যান্ডারগ্রাউন্ডের মেট্রোপলিটান লাইন ধরে চেশহাম গিয়ে রিকম্যান্সওয়ার্থ পর্যন্ত ১০ মাইল দীর্ঘ চেস ভ্যালি ওয়াক করতে পারেনঅবসরের জন্য চমৎকার।

৭) এসওয়াতিনি ও এমপুমালাঙ্গা প্রদেশদক্ষিণ আফ্রিকা

আগে স্বাজিল্যান্ড নামে পরিচিত এই দেশটি দক্ষিণ আফ্রিকার এমপুমালাঙ্গা প্রদেশ ও প্রতিবেশী মোজাম্বিকের সঙ্গে মিলে ট্রিল্যান্ড ২০২৪-২০২৫ প্রকল্প চালু করেছে। উদ্দেশ্যদক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার এই অঞ্চলে পর্যটন করিডর তৈরি করা।
এমপুমালাঙ্গা প্রদেশে রয়েছে ব্লাইড রিভার ক্যানিয়ন নেচার রিজার্ভযা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ও নামিবিয়ার ফিশ রিভার ক্যানিয়নের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ক্যানিয়ন। তবে এটি সবুজ গাছপালায় আচ্ছন্ন। এখানকার গডস উইন্ডো দর্শনীয় স্থান এবং ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কও মাত্র ঘণ্টাখানেক দূরত্বে।
এসওয়াতিনির সিবেবি রক আফ্রিকার উলুরু”—গ্রানাইটের বিশাল প্লুটন। রাজধানী মবাবানের মাত্র ১০ কিলোমিটার উত্তরে। নির্দেশিত পথে গাইডসহ হাইকিং করলে বিশাল সে পাথরের চূড়ায় ওঠা যায়। শুষ্ক মৌসুম (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) এই কাজে উত্তম।

৮) গদানস্কপোল্যান্ড

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনার আনুষ্ঠানিক ঘটনাস্থল এবং পোল্যান্ডের কমিউনিস্ট পতনের ক্ষেত্রে সলিডারিটি আন্দোলনের জন্মস্থান হিসেবে গদানস্ক বিখ্যাত। তবে বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত এই শহরে ঐতিহাসিক তাৎপর্য ছাড়াও রয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য।
দানজিগ” নামেও পরিচিত গদানস্ক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলপরে এটি নতুনভাবে গড়ে ওঠে এবং এখন পোল্যান্ডের অন্যতম রঙিন ও সুন্দর নগরী। গদানস্কের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাদুঘরনদীর তীরে প্রিজম আকৃতির সুউচ্চ ভবন। এছাড়া চতুর্দশ শতকের আর্টাস কোর্ট বা ওল্ড টাউনের সেন্ট মেরিস চার্চও দেখার মতোএটি ইট দিয়ে তৈরি বিশ্বের অন্যতম বড় গির্জা (উচ্চতা ৭৮ মিটার)।
২০২৩ সালে ইউরোপীয় কমিশনের কোয়ালিটি অব লাইফ ইন ইউরোপিয়ান সিটিজ” প্রতিবেদনে গদানস্ককে ইউরোপের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরগুলোর একটি বলা হয়।
২০২৫ সালে শহরের গেম-চেঞ্জিং” নতুন বন্দর টার্মিনাল তৈরি শেষ হওয়ায় গদানস্ক মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের প্রধান প্রবেশদ্বার হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগোবে।

৯) গিলগিট-বালতিস্তানপাকিস্তান

১৯৭০-এর দশকে পাকিস্তান অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় ছিলবিশেষ করে সুবিস্তৃত কারাকোরাম পর্বতমালার অপূর্ব সৌন্দর্যের জন্য। রাজনীতি ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জে জনপ্রিয়তা কমে গেলেও পর্বতগুলো তো রয়েই গেছে।
গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চল খুব সহজে পৌঁছানো যায় নাফ্লাইট সূচি অনিশ্চিতবরফে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু যাদের পর্বতপ্রেম আছেতাদের জন্য এটা স্বর্গ। হিমবাহের মতো তুলনায় দুর্গম হলেও এ অঞ্চলে আছে বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত কেটু (দুনিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্বতগুলোর অন্যতম) সহ মোট পাঁচটি এইট-থাউজ্যান্ডার” পর্বত।
এখন আন্তর্জাতিক কিছু ভ্রমণ সংস্থা এখানে সংগঠিত ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে। ইন্ট্রেপিডের মতো কোম্পানিগুলো লিটল তিব্বত” খ্যাত এলাকায় ১০ দিনের ট্রেকের প্যাকেজ রাখছেযার খরচ আনুমানিক ৩,০০০ ডলারের মতো।

১০) ইতালির ট্রেন

২০২৫ সালের এপ্রিলে চালু হতে যাওয়া লা দোলচে ভিটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ইতালিজুড়ে সুদৃশ্য যাত্রার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। মোট আটটি ভিন্ন রুটে ভেনিস ও টাস্কানি থেকে শুরু করে আব্রুত্সোবাসিলিকাটাসিসিলি থেকে রোম পর্যন্ত ঘুরবে এটি।
তবে বিলাসবহুল এই ট্রেনে চড়তে অনেক অর্থের দরকার হলেও ইতালির ট্রেনযোগে ভ্রমণের অনেক সহজ উপায়ও আছে। ইউরোপীয় রেলব্যবস্থার মধ্যে ট্রেনিতালিয়া শীর্ষস্থানীয়যার দ্রুতগতির ফ্রেচে ট্রেন ইতালির প্রায় সব প্রধান শহরকে সংযুক্ত করে। এক্সিকিউটিভ ক্লাসে অতিরিক্ত বিলাসিতা ও বাটলার পরিষেবাও পাওয়া যায়।
এছাড়া আছে ট্রেনি টুরিস্তিচি ইতালিয়ানি” বা টিটিআইযেখানে পুরোনো ট্রেনকে সংস্কার করে বিলাসী অভিজ্ঞতা দেওয়া হয়। ২০২৫ সালে মিলান থেকে ফ্রান্সের সাঁ-রাফায়েল পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন নতুন রুট এবং রোম থেকে লেচে পর্যন্ত রাতের ট্রেন চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

১১) কাজকার পর্বতমালাতুরস্ক

তুরস্কের উত্তর-পূর্ব কোণে কৃষ্ণসাগর ও জর্জিয়ার মাঝে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ কাজকার পর্বতমালা। এখানকার জলবায়ু আর্দ্র ও মৃদুফলে ফুল-ফল ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই এলাকা।
গ্রীষ্মে পাহাড়ের গা বুনোফুলে ঢেকে যায়ফেলে দেয় রঙের ছটা। স্থানীয় চা-বাগান ও হ্যাজেলনাট ক্ষেত গুণগতমানের কৃষিপণ্য নিশ্চিত করে। এখানকার ককেশীয় মধুও খুব বিখ্যাত।
শরত্কালে পাতাঝরার দারুণ হলুদ-লাল আভা দেখা যায়। সবচেয়ে উঁচু চূড়াগুলো প্রায় ৪ হাজার মিটার পর্যন্ত উঠে গেছেযেখানে হিমবাহ ও হ্রদ রয়েছে। বড় বড় জলপ্রপাত ও ঝর্ণায় ভরপুর এলাকা। মারাল জলপ্রপাত তুরস্কের অন্যতম উঁচু৬৩ মিটার।
শীতকালে স্কি ও হেলি-স্কির জনপ্রিয়তা বাড়লেও এখনো ব্যাপক পর্যটক সমাগম হয়নি। ২০২২ সালে রিজে-আরতভিন বিমানবন্দর চালু হওয়ায় কাজকার পর্বতমালা এখন সহজে পৌঁছানো যায়ইস্তানবুল থেকে ফ্লাইটে প্রায় দুই ঘণ্টা।

১২) কানসাইজাপান

২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ওসাকায় অনুষ্ঠিত হবে এক্সপো ২০২৫।” ওসাকা ইতিমধ্যেই জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে কেবল এই শহরে না থেকে ট্রেনে পুরো কানসাই অঞ্চল ঘুরে দেখতে পারেনযার অন্তর্গত ১০টি প্রশাসনিক অঞ্চল।
নারা শহরে ইউনেসকো স্বীকৃত বিভিন্ন মন্দির সন্ধ্যায় ঘুরে দেখতে পারেনযখন বিখ্যাত হরিণরা এসে মানুষের হাত থেকে খাবার খায়। হায়োগো প্রদেশের কোবে শহরে বিখ্যাত কোবে গরুর মাংস সাশ্রয়ী দাম থেকে শুরু করে মিশেলিন-তারকাবিশিষ্ট বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায়। শহরে শিল্পচর্চার নতুন ধারা ও ২০১৫ সালে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত জলসীমা অঞ্চলের স্মৃতিস্তম্ভও দেখতে পারেন।
সেখান থেকে হিমেজি ক্যাসলের দিকে যেতে পারেন—“হোয়াইট হেরন” নামে পরিচিত এই দুর্গ যেন উড়ন্ত এক বক। ২০২৬ সালে এর টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছেতাই আগেই দেখে ফেলুন।

১৩) মেন্দোজাআর্জেন্টিনা

বুয়েনস আইরেস তার অসাধারণ খাবারের জন্য জনপ্রিয়তবে মেন্দোজা গর্ব করে বলতে পারে—“আমাদের কথা ভুলে যেও না!” মেন্দোজা শহর আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ওয়াইন অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্রপ্রায় ১,২০০টি ওয়াইনারি আছে এখানে। মালবেক সবচেয়ে জনপ্রিয় আঙ্গুরজাত ওয়াইন।
শহরটির রেস্তোরাঁ ও স্পা বিশ্বমানেররৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া ও রাস্তার দুপাশের গাছ সব মিলিয়ে খুব মনোরম পরিবেশ। শহরের পেছনে আকাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আন্ডিজ পর্বতমালা।
শীতের শেষে (আর্জেন্টিনার গ্রীষ্ম)অর্থাৎ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে মেন্দোজা প্রদেশে শুরু হয় বার্ষিক ভেন্ডিমিয়া উৎসব। মার্চে তার চূড়ান্ত পর্বে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ স্থানীয় ওয়াইন আস্বাদনে আসেন।
বিখ্যাত জেনারেল সান মার্টিন পার্কে প্রায় ৫০০ প্রজাতির গোলাপ ও একটি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান জাদুঘর আছে। এছাড়া কাছের কাচেউতা উষ্ণ প্রস্রবণে গিয়ে গোসল ও বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছেবাসে করেও সাশ্রয়ী মূল্যে যাওয়া যায়।

১৪) ন্যাশভিলটেনেসিযুক্তরাষ্ট্র

সঙ্গীতের শহর ন্যাশভিল ২০২৫ সালে আরও জমজমাট হবেকারণ গ্র্যান্ড ওলে অপ্রি ১০০ বছরে পা দিচ্ছে। ১৯২৫ সালের ২৮ নভেম্বর রেডিও স্টেশন ডব্লিউএসএম-এ বার্ন ড্যান্স” নামে যে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিলসেটিই আজকের বিশ্ববিখ্যাত কান্ট্রি মিউজিক শো। হাজারো কিংবদন্তি শিল্পীহ্যাঙ্ক উইলিয়ামসপ্যাটসি ক্লাইনউইলি নেলসনডলি পার্টনএখানে পারফর্ম করেছেন।
রাইমন অডিটোরিয়ামযাকে মাদার চার্চ অফ কান্ট্রি মিউজিক” বলা হয়অপ্রির আসল বাড়ি ছিলপরে ১৯৭৪ সালে নতুন অপ্রি হাউসে স্থানান্তরিত হয়। উভয় জায়গায়ই দর্শনার্থীদের জন্য ট্যুর আছেআর ২০২৫ সালে শতবার্ষিকী উপলক্ষে বাড়তি অনুষ্ঠান ও বিশেষ শো হবে।
এছাড়া ন্যাশভিল ইয়ার্ডস নামে নতুন ডেভেলপমেন্টে ৪,৫০০ আসনের একটি নতুন সঙ্গীত ভেন্যু দ্য পিনাকল ২০২৫ সালে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। শহরের অভিবাসী সম্প্রদায় বড় হওয়ায় এখন ন্যাশভিলে একটি চায়নাটাউন গড়ে তোলার প্রকল্প শুরু হয়েছে।

১৫) নিউয়ে

প্রশান্ত মহাসাগরের অনেক দ্বীপই নিরিবিলি গন্তব্য হিসেবে পরিচিততবে নিউয়ে অন্য সবার থেকে আলাদা। দ্বীপটি নিউজিল্যান্ডের সাথে ফ্রি এসোসিয়েশন’ সম্পর্ক রক্ষা করেবাসিন্দারা নিউজিল্যান্ডের পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। ফিজি ও কুক দ্বীপপুঞ্জের মধ্যখানে অবস্থিত।
২০২২ সালে নিউয়ের ১০০% জলসীমাকে মাল্টি-ইউজ মেরিন পার্ক ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে থাকায় গ্রে রিফ হাঙর ও স্থানীয় সামুদ্রিক সাপের নিরাপদ আবাস। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হাম্পব্যাক তিমি আসেএসময় স্নরকেল বা স্কুবা ডাইভিংয়ের সুবর্ণ সুযোগ থাকে। স্বচ্ছ জলের কারণে ১৬০ ফুট পর্যন্ত দেখা যায়।
শুধু হোটেলে বসেও তিমি দেখা যায়সিনিক মাতাভাই রিসোর্টে হোয়েল বেল” বাজানো হয় তিমি এলে। সৈকতে যেতে হালা তাহি (সামুদ্রিক প্রবাল কাতালানো পথ) ব্যবহার করতে পারেনচুনাপাথরের গুহাপ্রাকৃতিক সুইমিং পুল আর চমৎকার দৃশ্যের দেখা মিলবে। জনসংখ্যা মাত্র ১,৭০০ জনরাজধানী আলোফিতে থাকে প্রায় ৬০০ জন।
নিউ জিল্যান্ডের অকল্যান্ড থেকে এয়ার নিউ জিল্যান্ডের ফ্লাইট সপ্তাহে কয়েকদিন মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় এখানে পৌঁছায়তাই পর্যটক সংখ্যাও নিয়ন্ত্রিত।

১৬) নুকগ্রিনল্যান্ড

গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক-এ সম্প্রতি চালু হয়েছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরযার ২,২০০ মিটার দীর্ঘ রানওয়ে বড় উড়োজাহাজ অবতরণের সুযোগ দিয়েছে। ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের সরাসরি ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথমবারের মতো গ্রিনল্যান্ড যাওয়া যাবে।
শহরটি গ্রিনল্যান্ডের অন্য অঞ্চল ঘুরতে আদর্শ কেন্দ্র। ইলুলিসাতের আইসফিয়র্ড সেন্টারে স্থানীয় ইনুইট সংস্কৃতি আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারেন। ডিসকো বেতে বরফখণ্ডের বিশাল সমারোহ অতুলনীয়।
নুক শহর নিজেই দেখার মতোন্যাশনাল মিউজিয়াম অ্যান্ড আর্কাইভসসমুদ্রতীরে ইনুইট সাগরদেবী সেদনার সম্মানে তৈরি ভাস্কর্য উল্লেখযোগ্য। শহরে বা আশপাশের এলাকায় ঘুরতে স্থানীয় গাইড নিয়োগ করে টেকসই পর্যটনের উন্নয়নেও সহযোগিতা করতে পারেন।

১৭) দ্য ওজার্কসযুক্তরাষ্ট্র

মিজৌরি ও আরকানসাসের এক বিস্তীর্ণ পার্বত্য অঞ্চল দ্য ওজার্কসনদীজলপ্রপাতগুহা ও খাড়া খাঁজের অনন্য ভূপ্রকৃতির দেখা মেলে।
সবচেয়ে পরিচিত পর্যটনকেন্দ্র ব্র্যানসনএখানে ডলি পার্টনের স্ট্যাম্পিড ও সিলভার ডলার সিটি থিম পার্ক আছে (২০২৫ সালে নতুন স্প্রিং এক্সপোজিশন ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হবে এবং ফায়ার ইন দ্য হোল রাইড নতুন রূপে ফিরে এসেছে)।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খোঁজে যেতে পারেন জনি মরিস কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের ডগউড ক্যানিয়ন নেচার পার্কেএখানে মাছ ধরাশতাব্দীপ্রাচীন চার্চবাইকিংট্রেকিং এবং ট্রামে করে উন্মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো বাইসন ও এলক দেখা যায়।
আরকানসাসের ইউরেকা স্প্রিংস মজাদার একটি শহরএলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের জন্যও এটি বন্ধুত্বপূর্ণ। ফায়েটভিলের কাছে উইদো স্প্রিং স্টেট পার্কে মাছ ধরাভেসে বেড়ানোশীতকালে মনোরম দৃশ্য সবই উপভোগ্য। মাউন্ট ম্যাগাজিন সিনিক বাইওয়ে গাড়িতে ঘুরে দেখতে দারুণ।

১৮) রাবাতমরক্কো

মারাক্কেশএসসাউইরাফেজএমনকি ক্যাসাব্লাঙ্কাসবার মুখে শোনা গেলেও মরক্কোর আধুনিক রাজধানী রাবাত তুলনামূলক কম পরিচিত। তবে ২০২৫ সালে এখানে অনেক কিছু বদলাবে: নতুন খুলেছে ফোর সিজনস হোটেল রাবাত অ্যাট কাসর আল বাহর (অক্টোবর ২০২৪-এ) এবং প্রয়াত কিংবদন্তি স্থপতি জাহা হাদিদের ডিজাইনের রয়্যাল থিয়েটার ২০২৫ সালে চালু হবে।
২০২৩ সালে আাস পর্বতমালায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলে দেশটির পর্যটন শিল্প পুনরুদ্ধার হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী২০২৪ সালে পর্যটকের সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২০% বেড়েছে। ২০২৫ সালে আরও বাড়তে পারেকারণ রয়্যাল এয়ার মারোক লস অ্যাঞ্জেলস থেকে ক্যাসাব্লাঙ্কা রুট চালু করেছে এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স নিউয়ার্ক থেকে মারাক্কেশ রুট চালুর পরিকল্পনা করছে।
স্পোর্টসপ্রেমীদের জন্য ডিসেম্বরের আফ্রিকা কাপ অফ নেশন্স (AFCON) মরক্কোতে হবে২০২২ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠা মরক্কো দলের জন্য এটি গর্বের বিষয়। ইনক্লুসিভ মরক্কোর মতো স্থানীয় ট্যুর অপারেটরদের সাথে ভ্রমণের মাধ্যমে দেশ ঘুরে দেখতে পারেন।

১৯) রোমানিয়া

ইউরোপে এখনো এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে ভিড় কমরোমানিয়া তার মধ্যে একটি। এই দেশে আছে কৃষ্ণসাগরের সৈকতচোখ জুড়ানো কার্পাথিয়ান পর্বতমালা আর মধ্যযুগীয় দুর্গ ও শহর। ব্রান ক্যাসলের ড্রাকুলা” কিংবদন্তি খ্যাততবে শুধু সেটুকুই নাটিমিসোয়ারাক্লুজ নাপোকাসিবিউব্রাসোভসেবেসসবকিছুতেই ঐতিহাসিক পরিবেশ। রাজধানী বুখারেস্টের পুরোনো অংশে ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্য ও খাবারের স্থান থাকলেও সাম্প্রতিক অতীতের ইতিহাসও দেখার মতোসাবেক স্বৈরশাসক চওসেস্কুর প্রাসাদ আর সংসদ ভবন বিশালাকার।
সেই যন্ত্রণাময় যুগের চিত্র খুঁজে পাবেন ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মিউজিয়াম অফ কমিউনিজমে। গ্রামাঞ্চলে গেলে দেখবেন সনাতন জীবনযাত্রার চিত্র এখনো অটুট। এগুলো দেখার উত্তম উপায় হলো নতুন চালু হওয়া প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভিয়া ট্রানসিলভানিকা ট্রেইল ধরে হাঁটা।

২০) সান ফ্রানসিসকো দে কামপেচেমেক্সিকো

ইউকাতান উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই বন্দর শহরযার জনসংখ্যা আনুমানিক ২,৫০,০০০। ভ্রমণ কেন্দ্র হিসেবে নিরিবিলি হলেও পর্যটন-সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মেক্সিকো সিটির মতো ব্যস্ত মহানগরী কিংবা কাবো বা কোজুমেলের মতো বিখ্যাত সমুদ্রসৈকত থেকে ভিন্ন স্বাদ চাইলে এখানে আসুন। ক্যাম্পেচে রাজ্য মেক্সিকোর অন্যতম নিরাপদ অঞ্চল।
সৈকতে পাবেন পম্পানোডগফিশের প্যান দে কাসনবিভিন্ন চিংড়ি পদ ইত্যাদি সুস্বাদু খাবার। সান ফ্রানসিসকো দে কামপেচের প্রাচীরঘেরা পুরোনো শহর ইউনেস্কো ঘোষিত ঐতিহ্য। ঔপনিবেশিক দুর্গ ও বাস্তিয়ন আছে। চারপাশে সিহোপ্লায়াসেয়বাপ্লায়ার মতো সৈকত ও কাছাকাছি ক্যালাকমুলের মায়ান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ ও সবুজ বনাঞ্চল।
শহরটিতে ২০২৫ সালে হালকা রেলব্যবস্থা চালু হওয়ার কথাযা অভ্যন্তরীণ যাতায়াত সহজ করবে।

২১) সিয়েরা লিয়ন

ইংরেজিভাষী পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশ ভ্রমণপিপাসুদের জন্য মনোমুগ্ধকর হতে পারেযদিও পৌছানো কঠিন। এখনো ব্রাসেলস ও কাসাব্লাঙ্কা রুট ছাড়া সরাসরি লন্ডন থেকে ফ্রাইট চালুর প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।
দ্বিগুণ বিপর্যয়ের (গৃহযুদ্ধ ও ইবোলা) দুই দশক পেরিয়ে সিয়েরা লিয়ন এখনো পর্যটনের সূচনাপর্বে। তাই এখানে অতিরিক্ত মানুষের ভিড় নেই। বিস্ময়কর সৌন্দর্যের সমুদ্র সৈকত আছেটার্টল আইল্যান্ডবুরেহ ও রিভার নম্বর টু-র সৈকতে স্ফটিক স্বচ্ছ পানি ও সোনালি বালি। রাজধানী ফ্রিটাউনে বাজারজাদুঘর ও ঐতিহাসিক বান্স দ্বীপের ধ্বংসাবশেষ (দাসবাণিজ্যের স্মৃতিবাহী) দেখতে পারেন। অভ্যন্তরীণ বনে ট্রেক ও শিম্পাঞ্জি দেখার সুযোগও আছে।
ভ্রমণ ব্লগার হেলেন ডেভিস বলছেন, “সিয়েরা লিয়ন আফ্রিকার অন্যতম নিরাপদ ও বন্ধুবৎসল দেশ। এখানকার মানুষ দারুণ উষ্ণ ও আন্তরিক। দেশটি কাঁচারুক্ষপ্রকৃতির কাছাকাছিযা কল্পসেবি ভ্রমণকারীদের জন্য অসাধারণ।

২২) স্টকহোমসুইডেন

স্টকহোম শহরে ঘুরলে দেখা যাবে স্বচ্ছ বাতাসখোলামেলা আকাশ আর সর্বত্র জলের উপস্থিতিএর ১৪টি দ্বীপ সেতু ও ফেরিতে পরস্পর যুক্ত। স্টকহোমের বাইরের দ্বীপপুঞ্জও (প্রায় ৩০,০০০ দ্বীপ) অনন্য সৌন্দর্যের আধার।
সম্প্রতি ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি নতুন হাইকিং ট্রেইল উদ্বোধন করা হয়েছেযা এই বহিঃদ্বীপপুঞ্জের ওপর দিয়ে গেছে। ওয়েবসাইটে রুট-প্ল্যানিংসহ সব দরকারি তথ্য মিলবে।
শহরের মধ্যে ভাসা মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ১৭শ শতকের জাহাজ ও স্ক্যানসেন মিউজিয়ামে সুইডেনের স্থাপত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস দেখতে পারেন। পপ সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য আছে আাবা মিউজিয়াম।
অনেক হাঁটা-চলার পর সুইডিশ ফিকা” (এক কাপ কফি বা গরম পানীয় ও পেস্ট্রি নিয়ে বিরতি) উপভোগ করতে ভুলবেন না। সিমেটিক স্যাটারনুস বা পুরস্কারজয়ী রবিন ডেলসেলিয়াস বাগেরিতে দারুণ সিনামন বান খেতে পারেন।

২৩) তাওপোনিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপ বিশ্বের কাছে বেশ জনপ্রিয়তবে উত্তরের তাওপোতে লুকিয়ে আছে সিনেমাটিক সৌন্দর্য। তাওপো হ্রদের ধারে ন্গাতোরোইরাঙ্গি মাইন বের মাওরি পাথর খোদাই ওয়ান অবজারভেশন পয়েন্ট১৪ মিটার উঁচু ওই ভাস্কর্য বিখ্যাত শিল্পী মাতাহি ব্রাইটওয়েলের পূর্বপুরুষের মুখচ্ছবি তুলে ধরে।
শহরের কাছেই হুকা ফলসযেখানে প্রতি সেকেন্ডে আড়াই লাখ লিটার পানি প্রবল বেগে পড়ে।
তাওপোর খাবারের জগৎও জনপ্রিয়তা পাচ্ছেসদ্য (২০২৪ সালে) শেষ হলো প্রথম ট্রিটস অফ তাওপো” উৎসব। তবে এমন আভিজাত্যের মাঝেও মজার ব্যাপার হলো তাওপোতে একটি ব্যতিক্রমী ম্যাকডোনাল্ডস রয়েছেসেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার-সময়ের একটি ডগলাস ডিসি-৩ বিমানের ভেতরে বসে খাওয়ার সুযোগ।
থাকার জায়গার মধ্যে শতবর্ষী হুকা লজ ২০২৪ সালে সংস্কার করা হয়েছেএটি ২০২৫ সালের মার্চে নতুনভাবে খুলবে। ওয়াইকার্তো নদীর ধারে ২০টি স্যুট ও দুটি কটেজ রয়েছে।

২৪) ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপকানাডা

প্রায় ২৮৫ মাইল দীর্ঘ এই দ্বীপটি ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। পশ্চিম তীরে প্রশান্ত রিম ন্যাশনাল পার্ক রিজার্ভের অন্তর্ভুক্তসেখানে ওয়েস্ট কোস্ট ট্রেইল পাড়ি দেওয়া পারেন অভিজ্ঞ ব্যাকপ্যাকাররা। আর তুলনামূলক আরামদায়ক ভ্রমণ চাইলে লং বিচ ইউনিটের কাছে ইউকলুলেট ও টোফিনোর লজগুলোতে থাকতে পারেনসামুদ্রিক জীবনরেইনফরেস্ট ও সার্ফিংয়ের জন্য বিখ্যাত এলাকা।
офিনোর উত্তরে কোয়াইট বেতে একসময় টোফিনো উইলডারনেস রিসোর্ট নামে একটি ভাসমান লজ ছিল২০২২ সালে আহাউসাত ফার্স্ট নেশন এটি কিনে নেয়। ২০২৫ সালের জুনে নতুন নামে নতুনভাবে চালু হওয়ার কথা।
আর যদি স্পা পছন্দ করেনইস্ট কোস্টের কোর্টেনেতে কিংফিশার প্যাসিফিক রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা-তে ছয়টি গুহাময় কক্ষ নিয়ে নবনির্মিত থেরাপি সার্কিট চালু হবে।
ফুলের সৌন্দর্য দেখতে বুঁচার্ট গার্ডেনের তুলনা নেই। দক্ষিণ প্রান্তে ভিক্টোরার কাছে অবস্থিত ৫৫ একরের এই উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ সানকেন গার্ডেন ও গোলাপের রাজ্য। চাইলে এখানে সুস্বাদু আফটারনুন টি”-ও উপভোগ করা যায়।

২৫) ভারমন্টের রেল ট্রেইল

বরফে ঢাকা শীতরঙিন শরৎ আর সবুজ গ্রীষ্মপ্রতি ঋতুতেই যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট রাজ্যের পুরনো রেলপথ থেকে তৈরি করা রেল ট্রেইলগুলোতে প্রকৃতির অপরূপ রূপ দেখা যায়। এই পথগুলোতে হাঁটাসাইকেল চালানোঘোড়ায় চড়াবরফে হাঁটা কিংবা নর্ডিক স্কি করা যায়। শীতকালে স্নোমোবাইলও চলে।
সবচেয়ে নতুন রুট লামোইল ভ্যালি রেল ট্রেইল। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের বন্যায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছেপরে আবার উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ৯৩ মাইল লম্বা এই পথ নিউ ইংল্যান্ডের সর্বাধিক দৈর্ঘ্যের রেল ট্রেইলস্বানটন থেকে সেন্ট জনসবারি পর্যন্ত বিস্তৃত। কিছু অংশে এখনো সাময়িক বিচ্ছিন্নতা আছেতবে বেশিরভাগই খুলে গেছে।
পথে মরিস্টাউনে থেমে ব্রিউয়ারিরেস্তোরাঁ ও স্থানীয় দোকান দেখে নিতে পারেন কিংবা ড্যানভিলের ১৫০ বছরের পুরোনো ট্রেন স্টেশনও দেখতে পারেন।

উপসংহার

বিশ্ব দ্রুত বদলাচ্ছে। প্রযুক্তি আর কানেক্টিভিটির কল্যাণে আমরা সহজে বহুদূর অতিক্রম করতে পারি। কিন্তু ভ্রমণে নতুনত্বের স্বাদ পেতে কখনো কখনো পরিচিত গন্ডি পেরোনোই ভালো। ২০২৫ সালে এই ২৫টি জায়গা বিশ্বকে নতুনভাবে দেখার সুযোগ করে দেবে। দেশ-শহর-প্রকৃতি-সংস্কৃতির বৈচিত্র্য আর স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা মিলে আপনার স্মরণীয় ভ্রমণ হয়ে উঠবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024