বিদ্যা রঙ্গনাথান
ইউরোপ ও বৈশ্বিক বাজার নিয়ে আজকের দিনের পূর্বাভাস
সাম্প্রতিক জার্মানি ও স্পেনের মূল্যস্ফীতির তথ্যের ভিত্তিতে যদি বিচার করা যায়, তবে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) প্রায় এক শতাংশ হার কমাবে বলে যারা আশা করছেন, তারা হতাশ হতে পারেন।
আজ ইউরো অঞ্চলের ভোক্তা মূল্যসূচক (এইচআইসিপি) প্রকাশিত হওয়ার কথা, যেখানে ধারণা করা হচ্ছে ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ২.৪% পর্যন্ত উঠতে পারে, যা নভেম্বরে ছিল ২.২%।
ইতিমধ্যেই প্রকাশিত বিভিন্ন সূচকে দেখা গেছে, স্পেন ও জার্মানিতে প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত হারে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
এই সপ্তাহের মূল্যস্ফীতির তথ্য ইসিবির ৩০ জানুয়ারির পরবর্তী বৈঠকের আগে শেষ বড় ধরনের সূচক। মূল্যস্ফীতির প্রবাহ আরও শিথিল হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেলে, মন্দার সঙ্গে লড়াইয়ে ইসিবির নীতি শিথিল করার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
তবে জ্বালানি খাতে বেড়ে যাওয়া ব্যয় ইসিবির জন্য বাধার সৃষ্টি করতে পারে, কেননা প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বর্তমানে ১৪ মাসের উচ্চতায়। জার্মানিতে ডিসেম্বরে প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুতগতির মূল্যস্ফীতির পেছনে অন্যতম কারণ ছিল জ্বালানির দামের তুলনামূলক কম হ্রাস।
২০২২ সালের মতো অতিরিক্ত গতিতে দাম বাড়বে না বটে, তবে সামগ্রিকভাবে মূল্য স্তর উচ্চই থাকছে, কারণ আগের বছরের তুলনায় ইউরোপে গ্যাসের মজুদ কম এবং ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ-চুক্তি সমাপ্ত হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে দাম চাপে রাখতে পারে।
ব্রিটেনও একই ধরনের চাপে পড়েছে, কারণ মজুরি বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ তীব্র হচ্ছে। সোমবার ৩০ বছরের ব্রিটিশ সরকারি বন্ডের ফলন ১৯৯৮ সালের পর সর্বোচ্চ অবস্থানের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
অন্যদিকে, বাজারে এখনো ধারণা করা হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ততটা আক্রমণাত্মক হবে না যতটা আশঙ্কা করা হচ্ছিল। যদিও ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনের পর ট্রাম্প অস্বীকার করেছেন যে তিনি শুল্ক আরোপে নরম হচ্ছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ারবাজার দ্বিতীয় দিনের মতো ঊর্ধ্বমুখী ছিল, আর ডলারও উন্নত ও উদীয়মান দুই ধরনের মুদ্রার বিপরীতে দুর্বল হয়েছে। এর জেরে এশিয়ার শেয়ারবাজারও মঙ্গলবার ঊর্ধ্বমুখী ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, ইউরোপ ও বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের ইতিবাচক প্রবণতাকে অনুসরণ করে।
সোমবার ইউরোপের প্রধান শেয়ারবাজারগুলোতে বড় ধরনের উত্থান দেখা গেছে। ফ্রান্সের CAC 40 সূচক ২.২% বেড়েছে, জার্মানির DAX সূচক ১.৫% উপরে উঠেছে। অটো খাত প্রায় ৩% লাফিয়ে উঠে বছরের সেরা পারফরম্যান্স দেখায়।
যদি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির তুলনায় কম হয় এবং কেবলমাত্র “গুরুত্বপূর্ণ” খাতগুলোতে আরোপিত হয়, তবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উন্নত হবে এবং ডলার দুর্বল থাকবে বলে বাজারে ধরণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের অস্বীকৃতির কারণে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ফলন উচ্চই থাকছে, বিশেষ করে এই সপ্তাহের ঋণ-বিক্রির কর্মসূচির আগে। ৩০ বছরের ট্রেজারি ফলন এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, এবং ৫.০০%-এর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
অন্য খবর অনুযায়ী, কানাডায় রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে কারণ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।
আজকের যেসব তথ্য ও ঘটনা বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে: • অর্থনৈতিক তথ্য: যুক্তরাজ্যের হ্যালিফ্যাক্স হাউস প্রাইস সূচক, ইতালির ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই), ফ্রান্সের সিপিআই, ইউরো অঞ্চলের এইচআইসিপি ও বেকারত্বের হার, যুক্তরাষ্ট্রের আইএসএম নন-ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই।
• ফেডারেল রিজার্ভের বক্তব্য: রিচমন্ড ফেডের প্রেসিডেন্ট থমাস বার্কিন র্যালিতে বক্তব্য রাখবেন।
• ঋণ নিলাম: জার্মানির ২ বছর মেয়াদি পুনরায় চালু করা বন্ড নিলাম, যুক্তরাজ্যের ৩০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড নিলাম।
ইউরোপ ও বৈশ্বিক বাজার সম্পর্কে প্রতিদিনের এমন বিশ্লেষণ পেতে “মর্নিং বিড ইউরোপ” নিউজলেটারে সাইন আপ করতে পারেন।
Leave a Reply