ড. লিউক রেন্ডেল
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের নিউ ক্যালেডোনিয়া এলাকার প্রজননস্থলে পুরুষ হাম্পব্যাক তিমিদের মধ্যে মাত্র ৭% বাবা হওয়ার সুযোগ পেয়েছে বলে এক গবেষণায় জানা গেছে।
২৫ বছরব্যাপী এই গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৩% পুরুষ তিমির জেনেটিকভাবে সন্তানের পিতৃত্বের কোনো প্রমাণ মেলেনি এবং কোনো পুরুষই দুইটির বেশি শাবকের পিতা হতে পারেনি।
গবেষকরা জানান, কেন কিছু পুরুষ অন্যদের তুলনায় বেশি সফল হলো, তা স্পষ্ট নয়। কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ তারা তুলে ধরেছেন।
“এটি নির্দেশ করে যে একটি হাম্পব্যাক পুরুষের জন্য বাবা হওয়া একটি অত্যন্ত দুর্লভ ঘটনা, যার জন্য তাদের খুব জোরালো প্রতিযোগিতা করতে হয়,” বলছেন অধ্যাপক লিউক রেন্ডেল, যিনি যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণার সহ-লেখক। তিনি উল্লেখ করেন, পুরুষ তিমিরা হয়তো অন্য পুরুষদের সঙ্গে লড়াই করে বা গান শুনিয়ে স্ত্রী তিমিদের মুগ্ধ করার মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় নামে।
“এই ব্যতিক্রমী গান পরিবেশনার কারণ এখান থেকে আংশিক ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। পুরুষ হাম্পব্যাক তিমিরা প্রজনন মৌসুমে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে প্রাণিজগতের অন্যতম জটিল গান পরিবেশনে,” যোগ করেন রেন্ডেল।
রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধে গবেষকরা জানান, ১৯৯৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে মাঠপর্যায়ে জরিপ চালিয়ে হাম্পব্যাক তিমির ছবি ও জেনেটিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
এরপর তারা ৯৩৬টি পরিণত বয়সী পুরুষের জেনেটিক তথ্য বিশ্লেষণ করে ১৭৭টি মা-শাবক জুটির পিতৃত্ব নির্ধারণ করেন।
ফলাফলে দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৭৯টি শাবকের পিতা শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে; এর মধ্যে ৬৬টি নমুনাভুক্ত পুরুষ তিমি পিতৃত্বের প্রমাণ দিয়েছে।
অর্থাৎ ৯৩% পুরুষ তিমির কোনো সন্তানের পিতৃত্বের প্রমাণ মেলেনি।
বাকি পিতাদের প্রসঙ্গে রেন্ডেল বলেছেন, তারা হয়তো নমুনার বাইরে থাকা পুরুষ তিমি—হোক তা নিউ ক্যালেডোনিয়ার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশ বা অন্য কোথাও থেকে আসা। আরেকটি জেনেটিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় ২,০০০ থেকে ২,৬০০ পুরুষ তিমি এই শাবকদের পিতা হতে পারত, যার মধ্যে অল্প কমবেশি অর্ধেকের নমুনা নেওয়া হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা যায়, যেসব পুরুষ তিমি সন্তান জন্ম দিয়েছে, তাদের মধ্যে কেউই তিন বা তার বেশি শাবকের পিতা হতে পারেনি।
“পুরুষদের প্রতিযোগিতা হয়তো অনেকগুলো সন্তানের পিতা হওয়ার বদলে অন্তত একবার হলেও পিতা হতে পারার দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে,” গবেষকরা লিখেছেন।
তবে এলোমেলো প্রজনন ঘটলে যেরকম আশা করা যেত, বাস্তবে তার চেয়ে অন্তত তিনগুণেরও বেশি হারে একজন পুরুষ একাধিক সন্তানের পিতা হয়েছে বলে দেখা গেছে।
গবেষকরা বলেন, প্রজননস্থলে পুরুষের সংখ্যা মাদির তুলনায় বেশি এবং মাদিরা বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকে। তবু ফলাফল বলে দেয়, কিছু পুরুষ অন্যদের তুলনায় বাবা হতে অধিক সফল।
তারা আরও উল্লেখ করেন, যদি খুব অল্পসংখ্যক পুরুষই পিতৃত্বে সফল হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর জেনেটিক বৈচিত্র্য কমে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে প্রতিবেশী অন্যান্য তিমি-জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশ্রণের ফলে এই ঝুঁকি কিছুটা লাঘব হতে পারে।
Leave a Reply