কেলি এনজি
তবে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৃদ্ধিটা প্রত্যাশিত মৌসুমি প্রবণতারই অংশ। এই ভাইরাসটি সাধারণত শীতের শেষ এবং বসন্তে বেশি সক্রিয় থাকে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় মানুষ ঘরের ভেতরে বেশিক্ষণ অবস্থান করায় ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এটি কী এবং কীভাবে ছড়ায়
এইচএমপিভি মূলত ফ্লু-সদৃশ ভাইরাস। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এটি হালকা উপসর্গ তৈরি করে, যার মধ্যে কাশি, জ্বর ও নাক বন্ধ থাকার মতো সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রথমবারের মতো এটি শনাক্ত করা হয়। সাধারণত ভাইরাসটি মানুষে মানুষে ছড়ায় অথবা ভাইরাস-দূষিত কোনো পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর চোখ-মুখে হাত দিলে সংক্রমণ ঘটে।
সাধারণভাবে এইচএমপিভি ততটা গুরুতর নয়। তবে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য এটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল—যেমন বয়স্ক মানুষ বা উন্নত পর্যায়ের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী—তাদের ক্ষেত্রেও ভাইরাসটি বেশ বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে। এ ধরনের ব্যক্তিরা সংক্রমিত হলে ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট, হুইজিং (শ্বাসকালে বাঁশির মতো শব্দ) বা ক্রুপের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এদের মধ্যে অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় এবং ছোট একটি অংশের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
চীনে কেন বাড়ছে
বেশিরভাগ শ্বাসযন্ত্রজনিত সংক্রমণ শীতের শেষ ও বসন্তকালে বেড়ে যায়। চীনের উত্তরাঞ্চলে এখন যে সময়টা চলছে, তা এইচএমপিভির প্রকোপ বাড়ার জন্য অনুকূল। বেশ ঠান্ডা আবহাওয়া মার্চ পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে, ফলে ভাইরাসটি এই সময়ে সক্রিয় থাকার সম্ভাবনাও বেশি।
অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডারস ইউনিভার্সিটির একজন মহামারিবিদ জানিয়েছেন, শুধুমাত্র চীন নয়, বর্তমানে গোটা উত্তর গোলার্ধেই এইচএমপিভির সংক্রমণ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও গত অক্টোবর থেকে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে এটি সাধারণ মৌসুমি বিস্তারের অংশ বলেই মনে করছেন গবেষকরা।
কোভিড-১৯-এর মতো আরেকটি মহামারি হবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯-এর মতো নতুন করে বৈশ্বিক মহামারির আশঙ্কা অযৌক্তিক, কেননা এইচএমপিভি বহু দশক ধরে পরিচিত একটি ভাইরাস। নতুন কোনো জীবাণু সাধারণত বৈশ্বিক মহামারির কারণ হয়ে থাকে। কিন্তু এইচএমপিভি বিদ্যমান হওয়ায় বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের এর বিরুদ্ধে অন্তত কিছুটা প্রাকৃতিক রোগপ্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে প্রায় প্রতিটি শিশুই অন্তত একবার করে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হয়। পরবর্তীকালে জীবনের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং, এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসকে ঘিরে কোনো বৃহত্তর বৈশ্বিক সংকট তৈরি হওয়ার লক্ষণ নেই।
কী করণীয়
বিশেষজ্ঞরা সাধারণ সতর্কতা মেনে চলতে বলছেন—যেমন ভিড়ের মাঝে মাস্ক ব্যবহার করা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং উচ্চ ঝুঁকির মানুষদের ক্ষেত্রে ভিড় এড়িয়ে চলা। ফ্লু প্রতিরোধে টিকা নেওয়া—যদিও এটি সরাসরি এইচএমপিভি থেকে সুরক্ষা দেয় না—শ্বাসযন্ত্রজনিত অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
Leave a Reply