বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন

লেবাননের সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট পদে এগিয়ে যাচ্ছেন

  • Update Time : শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১.০০ পিএম

লায়লা বাসসামটম পেরি

লেবাননের পার্লামেন্ট সম্ভবত বৃহস্পতিবার সেনাপ্রধান জোসেফ আউনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করতে যাচ্ছে বলে তিনজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। ২০২২ সাল থেকে চলমান শূন্য পদ পূরণের এটি একটি সম্ভাব্য সমাধানআর এতে ইরান-সমর্থিত হেজবোল্লাহর প্রভাব যে কমে এসেছেসেটিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এই নির্বাচন লেবাননের ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রথম পরীক্ষাবিশেষ করে গত বছরের ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর শিয়া মুসলিম গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এবং তাদের সিরীয় মিত্র বসার আল-আসাদ গত ডিসেম্বরে ক্ষমতা হারানোর পর।

দেশটির সাম্প্রদায়িক ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট পদটি মারোনাইট খ্রিস্টানদের জন্য সংরক্ষিত। সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের মেয়াদ ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে শেষ হওয়ার পর থেকে এই পদটি শূন্য রয়েছে। ১২৮ আসনের পার্লামেন্টে কোনো পক্ষই একক সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়তাই কোনো প্রার্থীকে নিয়ে এখন পর্যন্ত ঐক্যমত্যও গড়ে ওঠেনি।

বুধবার জোসেফ আউনের হয়ে সমর্থন জোরালো হয়যখন হেজবোল্লাহ-সমর্থিত প্রার্থী সুলেইমান ফ্রাঞ্জিয়ে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে সেনাপ্রধানকে সমর্থন দেন। আরও বহু সংসদ সদস্যও তাকে সমর্থন জানাতে থাকেন।

হেজবোল্লাহ ও স্পিকার নাবিহ বের্রীর নেতৃত্বাধীন শিয়া দল আমাল অনেকদিন ধরে ফ্রাঞ্জিয়েকে সমর্থন দিয়ে আসলেওতিনটি সূত্র বলছে যে শিয়া ব্লকের অন্তত কিছুসংখ্যক সাংসদ আউনকে ভোট দেবেযাতে তিনি জয়ী হতে প্রয়োজনীয় ৮৬ ভোট পেয়ে যান।

লেবাননের একজন শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিক জানিয়েছেনপশ্চিমা ও আরব কূটনীতিকরা বুধবার intensively লেবাননের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেনযাতে আউনের নির্বাচনের পথ সুগম হয়। লেবাননের রাজনৈতিক সূত্রমতেআউন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনও পেয়েছেন।

এদিন ফরাসি ও সৌদি প্রতিনিধিরা বৈরুতে লেবাননের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। গত সপ্তাহে সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স ইয়াজিদ বিন ফারহান যেসব গুণাবলি উল্লেখ করেছিলেনসেগুলো আউনের ক্ষেত্রে মিলে যায় বলে চারজন লেবাননি রাজনৈতিক ব্যক্তি জানিয়েছেন। এতে সৌদি আরবের পক্ষ থেকেও আউনের প্রতি ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লেবাননে শক্তিশালী প্রভাব রাখলেওগত কয়েক বছরে তেহরানের সমর্থনপুষ্ট হেজবোল্লাহর উত্থানের ফলে সৌদি আরবের প্রভাব কিছুটা কমে গিয়েছিল। হেজবোল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় মিত্ররা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

৬০ বছর বয়সী জোসেফ আউন ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত লেবানন সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে লেবাননি সেনাবাহিনীর জন্য সহায়তা অব্যাহত ছিলযা মূলত হেজবোল্লাহর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন নীতিরই অংশ।

নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে জয়ী হতে একজন প্রার্থীকে ৮৬ ভোট প্রয়োজনআর দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রয়োজন ৬৫ ভোট। তবে স্পিকার বের্রী উল্লেখ করেছেনএখনো দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মচারী হিসেবে নির্বাচিত হতে হলে আউনের ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের কারণে ৮৬ ভোটই লাগবে।

লেবাননের লেবানিজ ফোর্সেস’ দলের নেতা জর্জ আদওয়ানযে দলটি হেজবোল্লাহর বিরোধী এবং আউনকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেবলেছেন, “তাকে নির্বাচিত করা মানে নতুন এক পর্বের সূচনা করা।

বড় রদবদল
গত নভেম্বরে ওয়াশিংটন ও প্যারিসের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে আউন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। চুক্তি অনুসারে ইসরায়েলি সৈন্য ও হেজবোল্লাহ বাহিনী সীমান্ত থেকে সরে দাঁড়ালে লেবাননি সেনাবাহিনী সেখানে মোতায়েন হচ্ছে।

২০১৯ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক ধসের ধাক্কা এখনো সামলাতে পারেনি লেবাননতার ওপর যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য বিদেশি সহায়তার ওপর তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে।

যুদ্ধের বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা শিয়া-অধ্যুষিত অঞ্চলে অবস্থিত।

সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় হেজবোল্লাহ এখন আরব ও আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনের কথা জোর দিয়ে বলছে। ইরান পর্যন্ত পৌঁছানোর পথ আসাদের পতনের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে।

একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তর ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটছে। একসময় সিরিয়া-নিয়ন্ত্রিত আসাদ সরকার লেবাননে প্রত্যক্ষ বা মিত্র সংগঠনবিশেষ করে হেজবোল্লাহর মাধ্যমেব্যাপক প্রভাব রাখত।

২০১৬ সালে মিশেল আউনকে প্রেসিডেন্ট বানানোর পেছনে হেজবোল্লাহর সমর্থন ছিল বড় ভূমিকা রেখেছিলকারণ তখন তাদের কাছে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রাখার যুক্তি হিসেবে বেশ কিছু সহযোগী গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন, “লেবাননের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেনতা লেবাননকেই নির্ধারণ করতে হবেআমাদের বা কোনো বাইরের পক্ষকে নয়। আমরা বরাবরই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লেবাননকে চাপ দিয়ে আসছিকারণ এটি লেবাননের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃঢ়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সৌদি মন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান গত অক্টোবরেই বলেছিলেনরিয়াদ কখনোই লেবানন থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নেয়নি এবং বাইরের দেশগুলো লেবানিজদের কী করতে হবেতা বলে দেওয়া উচিত নয়।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোএল বারো ফ্রান্স ইন্টার রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেনএই নির্বাচন শান্তির প্রসার অব্যাহত রাখা এবং লেবাননের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনরুদ্ধারের জন্য পূর্বশর্ত।

আলোচনায় সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী জিহাদ আজউরএবং জেনারেল সিকিউরিটি সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল এলিয়াস আল-বাইসারি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024