সারাক্ষণ ডেস্ক
প্রথম আলোর একটি শিরোনাম “শুল্ক–কর বাড়ায় পকেট থেকে যাবে ১২ হাজার কোটি টাকা”
দেশে এখন বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। ডেঙ্গু ও সাধারণ জ্বরের রোগীর পথ্য হিসেবে বাড়তি চাহিদা থাকে মাল্টার। সরকার অবশ্য মাল্টা আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে। এতে মাল্টা আমদানিতে খরচ বাড়বে কেজিতে ১৫ টাকা। মোট শুল্ক–কর দাঁড়াবে কেজিতে ১১৬ টাকা। বাজারে মাল্টার দাম চড়া, কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
মাল্টার মতো বিভিন্ন ফল, রান্নার গ্যাস, মুঠোফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহার, রেস্তোরাঁয় খাবার, বিস্কুট, টিস্যু, ঢেউটিন, রংসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক–কর বাড়িয়েছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন হার ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শুল্ক–কর বাড়ানোর কারণে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় করা যাবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি কমবে।
মানে হলো এই ১২ হাজার কোটি টাকা মানুষের পকেট থেকে যাবে। যদিও ৫ জানুয়ারি এনবিআর এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, নতুন করে যেসব পণ্য ও সেবার শুল্ক–কর বাড়ানো হয়েছে, সেখানে নিত্যপণ্য নেই। এতে সর্বসাধারণের ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না; মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না।
যদিও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ফল, মুঠোফোন সেবা, ইন্টারনেট, টিস্যু, রান্নার গ্যাস, পোশাক, রেস্তোরাঁয় খাবার ইত্যাদি এখন জীবনযাত্রার অনুষঙ্গ। নতুন করে শুল্ক–কর বৃদ্ধি মধ্যম ও নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় চাপ বাড়াবে। এ ছাড়া অনেক পণ্য ও সেবায় আগে থেকেই উচ্চ হারে শুল্ক–কর রয়েছে। সেগুলোর ওপর কর বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।
দৈনিক ইত্তেফাকের একটি শিরোনাম “নতুন কর্মসূচি নিয়ে ফের মাঠে নামছে বিএনপি”
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও সমমনা দলগুলো শিগগিরই নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই এ কর্মসূচির ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সমমনা ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের এ কথা জানান মোস্তফা জামাল হায়দার। এর আগে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেন সমমনা ১২ দলীয় জোটের নেতারা।
১২ দলীয় জোটের প্রধান বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সমস্যা এবং সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের বিষয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেছি। দুই-তিন দিনের মধ্যে দেশবাসীর সামনে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।
তিনি আরও জানান, ৫ আগস্টের বিজয় আজকে বিভিন্নভাবে বিপদগ্রস্ত হতে চলেছে। আমরা সবাই উপলব্ধি করছি জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামী মেজাজ, সেটা কিছুটা হলেও হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ঐক্যে কোথায় যেন একটা চিড় ধরেছে। আমরা এর সমাধান করতে চাই এবং আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সর্বদলীয়ভাবে জুলাই- আগস্টে যেভাবে আন্দোলন করেছি, একত্রে ছিলাম, সেভাবে একত্রে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। জনগণের মধ্যে বিরাজমান সমস্যা, দ্রব্যমূল্যের কশাঘাত ও নির্বাচন-সংক্রান্ত যে কুহেলিকা, যে ভিন্ন কথাবার্তা এবং ধূম্রজাল—এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করব।
বণিক বার্তার একটি শিরোনাম “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন শেখ রেহানা”
গত দেড় দশকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক লুটের কারিকরদের অন্যতম শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। ২০০৯ সাল-পরবর্তী তিন বছরে বেসিক ব্যাংক লুটে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এ কেলেঙ্কারির ঘটনায় তুমুল সমালোচনা হলেও শেখ হাসিনা ছিলেন নির্বিকার। বিষয়টি নিয়ে এমনকি তৎকালীন সরকারের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন আবদুল হাই বাচ্চু। সে সময় তার খুঁটির জোর হিসেবে আলোচনায় এসেছিল ‘ছোট আপা’ বা শেখ রেহানার নাম। অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে ‘ছোট আপা’ হিসেবে পরিচিত শেখ রেহানা।
কেবল বেসিক ব্যাংক নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকের বড় অনিয়মের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্টদের মধ্যকার আলোচনায় বারবার এসেছে শেখ রেহানার নাম। যদিও আওয়ামী লীগের দেড় দশকে বিষয়টি প্রকাশ্যে উচ্চারণের সাহস হয়নি কারো। বেসিকের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য চার প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালীর চেয়ারম্যান, পরিচালক এবং এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রেও সর্বেসর্বা ছিলেন শেখ রেহানা। তার সুপারিশেই এসব ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পদে নিয়োগ দিতেন শেখ হাসিনা। কিছু ক্ষেত্রে ডিএমডি বা জিএম পদে পদোন্নতি পেতেও শেখ রেহানার আশীর্বাদের প্রয়োজন হতো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, শেখ রেহানার পক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় সংঘটিত অনিয়মগুলো ঘটেছে মূলত সালমান এফ রহমান ও চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের তদারকিতে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডি হতে এ দুই ব্যক্তির কাছে লবিং করতেন প্রার্থীরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজনের সুপারিশেই পদ পাওয়া যেত। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের দুজনেরই সম্মিলিত সম্মতির প্রয়োজন হতো। চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম তারা শেখ রেহানার কাছে পাঠাতেন। শেখ রেহানার সুপারিশের পরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডি নিয়োগ দিতেন শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে জানতে গত দেড় দশকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক, এমডি, ডিএমডির দায়িত্ব পালনকারী এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা হয়। নাম অপ্রকাশিত রাখার জোর অনুরোধ জানিয়েছেন তাদের প্রায় সবাই।
মানবজমিনের একটি শিরোনাম “ক্যান্সার হাসপাতালে রেডিও থেরাপি বন্ধ, দুর্ভোগ”
নাসরিন আক্তার। দীর্ঘদিন ধরে জরায়ুর মুখ ক্যান্সারে ভুগছেন। গতকাল ছিল তার রেডিওথেরাপি নেয়ার দিন। তাই সকাল সকাল মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থেকে এসেছিলেন রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ডি-ব্লকে। ১১৪ নম্বর রুমের সামনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর যান ১৫২ নম্বর রুমে। জানতে পারেন হাসপাতালটিতে রেডিওথেরাপি দেয়ার সব কয়টি মেশিনই নষ্ট। আপাতত রেডিওথেরাপি দেয়া বন্ধ রয়েছে। কবে মেশিন ঠিক হবে বা কবে থেকে আবারো রেডিওথেরাপি দেয়া শুরু হবে তাও কেউ বলতে পারছেন না। তাই কোথায় যাবেন? কী করবেন? কোন জায়গা থেকে চিকিৎসা নেবেন এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন নাসরিন ও তার স্বামী সিদ্দিক মিয়া। নাসরিন আক্তার বলেন, আমরা মুন্সীগঞ্জ থেকে এসেছি। ঢাকায় আমাদের কোনো থাকার জায়গা নেই। আমরা এখন কোথায় যাবো? তিনি বলেন, এই হাসপাতালের ঘাটে ঘাটে দালাল। যখন প্রথম এখানে ভর্তি হতে আসি তখনই দালালদের টাকা দিয়ে ভর্তি হই। এরপর রেডিওথেরাপির কার্ড করাতে এসে চার মাস পার হয়ে যায়। কোনো সিরিয়াল পাচ্ছিলাম না। পরে দালালদের ৭ হাজার টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে সিরিয়াল পাই। এখন এসে শুনছি- মেশিন নষ্ট। রেডিওথেরাপি সেবা দেয়া বন্ধ রয়েছে। দালালরা বলছে, বেশি টাকা দিলে বাইরে থেকে রেডিওথেরাপি নেয়ার ব্যবস্থা করে দিবে। কিন্তু ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আগেই অনেক ধারদেনা করে ফেলেছি। আর টাকা কোথায় পাবো। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই ক্যান্সারের রোগী বলেন, সরকারি হাসপাতালে এসে আমাদের সাধারণ মানুষের এইসব ভোগান্তি ও দালালদের দুর্নীতি কারও কি চোখে পড়ে না! আমরা না পারি দেশের বাইরে যেতে না পারি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে। তাহলে কী আমরা মারা যাবো?
নাসরিনের মতোই গতকাল মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতালে স্ত্রীর রেডিওথেরাপি দেয়াতে এসেছিলেন নরসিংদীর সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, একজন রোগীকে নিয়ে ঢাকায় আসতে কী ভোগান্তি পোহাতে হয় তা শুধু যে নিয়ে আসে সেই জানে। গতকাল সারারাত ঘুমাইনি। ফজরের সময়ে রওনা হয়েছি। সকালে এসে শুনি গত ২০দিন ধরে রেডিওথেরাপি দেয়া বন্ধ রয়েছে। কবে শুরু হবে কেউ জানে না। তিনি বলেন, আগে আসলে বলতো শুধু দুটো মেশিন চলে, আজকে সিরিয়াল পাবেন না। কিন্তু দালালকে টাকা ধরিয়ে দিলে আবার সিরিয়াল পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন শুনছি পুরোপুরি বন্ধ, বাইরে থেকে রেডিওথেরাপি নিতে হবে। সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। তাই সরকারি হাসপাতালে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে এসেছিলাম। কিন্তু এখান থেকে বলছে-বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু এখন থেকে আমার স্ত্রীর একবার চিকিৎসা করিয়েছি। এখন অন্য কোথাও গেলে আবারো নতুন নতুন টেস্ট দিবে। নতুন করে আবার চিকিৎসা শুরু হবে। আর বেসরকারি হাসপাতালে গেলে তো সব শেষ। তাই ভাবছি স্ত্রীকে নিয়ে কি বাড়িতে ফেরত যাবো, নাকি দালালদের মাধ্যমে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাবো?
Leave a Reply