শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

কানাডা নেতৃত্বহীন বাণিজ্য যুদ্ধের সম্মুখীন

  • Update Time : সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ৮.০০ এএম

ভিপাল মোঁগা — পল ভিয়েরা

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরকানাডিয়ান কর্মকর্তারা দ্রুতগতিতে টিম কানাডা” পুনর্গঠনের চেষ্টা শুরু করেন। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে যেই দ্বিদলীয় (ফেডারেলপ্রাদেশিক ও ব্যবসায়িক) প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে কাজ করেছিলসেটিই ছিল এই টিম কানাডা।

আজসেই টিম কানাডা একটি বড় সমস্যার সম্মুখীন: এটি এখন নেতৃত্বহীন।

ট্রুডোর পদত্যাগএবং নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তত কয়েক মাস নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে এখন কানাডার সামনে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা নেইবিশেষ করে যখন ট্রাম্প ২৫% শুল্ক আরোপ বা অর্থনৈতিক শক্তি” দিয়ে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অধিগ্রহণের হুমকি দিচ্ছেন। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পকে যেভাবে কানাডা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছিলএখন সেই ঐক্য ভেঙে গেছে এবং সবাই বিভ্রান্ত।

আমরা জানি না এখন কানাডার হয়ে কে কথা বলছেন,” বললেন গোল্ডি হাইডারবিজনেস কাউন্সিল অফ কানাডার সভাপতিযা বৃহৎ কানাডিয়ান কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের প্রতিনিধিত্ব করে।

সোমবার ট্রুডো পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার আগেইদীর্ঘদিনের এই প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল যেতিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নন। তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগীউপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডএই বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে পদত্যাগ করেন।

কিন্তু জনসমর্থন কমে যাওয়া ও জনপ্রিয়তা হারানো ট্রুডো অন্তত ট্রাম্পকে প্রতিরোধের পরীক্ষিত মুখ ছিলেন। এখনরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতেট্রাম্প কানাডার ওপর বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেযেমন সামরিক ব্যয়আরও কঠোর চাপ প্রয়োগের সুযোগ পেয়ে গেছেন।

এটা আদর্শ অবস্থা নয়,” বললেন ডেভিড ম্যাকনটনযুক্তরাষ্ট্রে কানাডার সাবেক রাষ্ট্রদূতযিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (নাফটা) পুনর্বিন্যাসে সহায়তা করেছিলেন। ট্রাম্প এমন কেউযে দুর্বলতা দেখলে সুযোগ নেয়। সামনের দুই-তিন মাস একেবারে বিশৃঙ্খল হতে যাচ্ছে।

মঙ্গলবারএক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিষয়টির গুরুত্ব বোঝান।

জবাবে ট্রুডো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করেন, “যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হওয়ার কোনো সুযোগই নেইবরফকণিকার মতোও নয়।” সোমবার ট্রুডো বলেছিলেন যেতিনি তার লিবারেল পার্টির পরবর্তী নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত পদে থাকবেনযা সম্ভবত মার্চের শেষ নাগাদ হতে পারে। এক জ্যেষ্ঠ কানাডিয়ান কর্মকর্তা জানানপদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করলে পাল্টা-শুল্ক আরোপের ক্ষমতা এখনো তার হাতে রয়েছেযা ক্রমশ আরও সম্ভাব্য হয়ে উঠছে।

কিন্তু দলের ভেতরে অজনপ্রিয় হয়ে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ও মাত্র ২২% জনসমর্থন থাকা একজন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবেতার কথা ও কাজ দেশে-বিদেশে আগের চেয়ে কম গুরুত্ব পাবে। নতুন কোনো লিবারেল নেতা এলেও তিনি সম্ভবত সঙ্গে সঙ্গেই অনাস্থা ভোটের মুখে পড়বেনযা এই বসন্তেই নতুন নির্বাচনের সূচনা করতে পারে।

কানাডার ডানপন্থী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়ের পয়লিয়েভ মঙ্গলবার এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “কানাডা কখনোই ৫১তম অঙ্গরাজ্য হবে না। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

২০১৮ সালে ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক আরোপ করে এবং নাফটা পুনর্বিন্যাসের প্রক্রিয়ায় বাধ্য করলেকানাডীয় কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তখন টিম কানাডা” কার্যক্রমের আওতায় মন্ত্রিসভার সদস্যপ্রাদেশিক নেতারা ও ব্যবসায়ী নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের বোঝাতে সমন্বিত লবিং করেন যেকানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার কানাডা (প্রথম মেক্সিকো) — মার্কিন জনশুমারি ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশ দুটির মধ্যে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। বিশেষ করে গাড়ি শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রকানাডা ও মেক্সিকো তিন দেশের পারস্পরিক সরবরাহ ব্যবস্থার নিবিড় সংযোগ রয়েছেযা নতুন শুল্কের মাধ্যমে বিঘ্নিত হবে।

যদি আমেরিকানরা এমন কিছু করেসবচেয়ে বেশি ক্ষতি প্রথমে আমেরিকারই হবে,” বললেন ফ্লাভিও ভল্পেঅটোমোটিভ পার্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (কানাডিয়ান বাণিজ্য গোষ্ঠী) সভাপতি। যুক্তরাষ্ট্রের অটোমোবাইল শিল্পের পক্ষে দ্রুত কানাডার উৎপাদন প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়আর যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক গাড়ির দাম বাড়িয়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্যবললেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেনকানাডিয়ান সরবরাহএমনকি তেলগ্যাস ও কাঠনা পেলেও যুক্তরাষ্ট্র ঠিকই মানিয়ে নিতে পারবে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে ৫৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেএবং ট্রাম্প বলেছেনতিনি সেই ঘাটতি মুছতে চান। পাশাপাশিকানাডাকে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার ও সামরিক ব্যয় বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

এগুলো ট্রাম্পের হতবুদ্ধিকর বক্তব্য বা দেখানো শক্তি হতে পারেকিন্তু শুল্কমুক্ত মার্কিন বাজার হারানোর আশঙ্কাও কানাডার ব্যবসায়িক নেতাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024