শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন

আমি চারপাশে সবাইকে পেলেও নিজেকে এত একাকী কেন মনে হয়?

  • Update Time : রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১.০০ পিএম

ম্যাট ওয়ারেন

আমরা এক সংকুলমানুষে ভরা বিশ্বে বাস করছিতবু একাকীত্ব যেন বাড়ছেই। কেন এতজন মানুষ বিচ্ছিন্নতা অনুভব করছেন এবং এর সমাধান কী হতে পারে?

একাকীত্বের ধরন অনেকপ্রত্যেকেই একে ভিন্নভাবে অনুভব করে। কিন্তু আপনার কাছে একাকীত্ব কী?

হয়তো একাকীত্ব একটি শহর। যেখানে পথঘাটেকোলাহল ও ভিড়েলোকজনের আড্ডা আর হাসির মধ্যে আপনাকে মনে হয় আপনি একজন বহিরাগতবিচ্ছিন্নআলাদাখাপছাড়া।

হয়তো এটি একটি নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্পর্ক। বিয়ে বা ভালোবাসার বন্ধনযেখানে কথা শোনার কেউ নেইচাহিদাগুলো অপূর্ণ রয়ে যায়। আপনি আছেনকিন্তু কেউ দেখছে না।

বা হয়তো আপনার অনুভূতিটা রবার্ট ওয়ালটনের মতোমেরি শেলির ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’-এর মেরু অভিযাত্রীযিনি নির্ভরযোগ্য সাথিদের মাঝেও একজন সত্যিকারের বন্ধুর খোঁজ করেন, “যে আমার ভাবনাকে সমীহ করবেযার চোখ আমার চোখের উত্তরে সাড়া দেবে

শারীরিক বিচ্ছিন্নতা যে একাকীত্বের কারণ হতে পারেতা আমরা জানিএবং সমাজের সবচেয়ে অরক্ষিত মানুষেরা যে দীর্ঘমেয়াদিজোরপূর্বক নিঃসঙ্গতার মধ্য দিয়ে যানতা সত্যিই অত্যন্ত বেদনার।

কিন্তু আপনি যদি কখনও এই নিবন্ধের শুরুতে বর্ণিত পরিস্থিতিগুলো অনুভব করে থাকেনতাহলে হয়তো বুঝে গেছেনঅনেক মানুষের ভিড় থাকলেও একাকীত্ব থাকতে পারে। কখনো কখনো মানুষই একাকীত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাস্তবেআমরা একটি ভিড়ের মধ্যেওভালোবাসার সম্পর্কে থেকেওবা বন্ধুদের সঙ্গেও একাকী হতে পারি।

২০২১ সালে ৭৫৬ জনকে নিয়ে করা এক গবেষণা বলছেযারা স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে নিয়মিত তাদের অনুভূতির কথা জানিয়েছেনতাদের মধ্যে বড় জনবহুল এলাকায় থাকলে একাকীত্ব বেড়ে যায়অর্থাৎ আধুনিক শহরে। শহরকেন্দ্রিক আর প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাত্রা কি আমাদের মাঝে একধরনের বিচ্ছিন্নতা বাড়িয়ে দিচ্ছেআবার এই গবেষণাগুলোতে কি এমন কোনো সমাধানের আভাস আছে যা আমাদের কাজে লাগতে পারে?

তবে এটি এমন সময়ে ঘটছেযখন প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা বিশ্বজুড়ে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিঅচেনা মানুষের সঙ্গেও অনলাইনে কথা বলতে পারিকিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিতজনদের জীবনযাত্রার খোঁজ নিতে পারি। শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে দ্রুতএই শতাব্দীর মধ্যভাগে বিশ্বের ৬৮% মানুষ শহরে থাকবেন বলে ধারণা করা হয়।

তাহলে আমাদের ব্যস্তপ্রযুক্তিতে সংযুক্ত পৃথিবীতেচারপাশে মানুষ থাকলেও কেন আমরা একাকী অনুভব করিআর একাকীত্ব কি সত্যিই আরেকটি মহামারি”—যা যেকোনো মূল্যে এড়িয়ে চলাচিকিৎসা করে নির্মূল করে ফেলা বা নিন্দা করার বিষয়নাকি এর মধ্যেও আমাদের শেখার কিছু আছে?

একাকীত্ব জটিলঅস্পষ্ট একটি ধারণাযার অভিজ্ঞতা সবাই ভিন্নভাবে লাভ করে। কিংস কলেজ লন্ডনের ইতিহাসের অধ্যাপক ও আ বায়োগ্রাফি অব লোনলিনেস’-এর লেখিকা ফে বাউন্ড অ্যালবার্টি মনে করেনএকাকীত্ব আসলে একগুচ্ছ আবেগের সমষ্টিযার মধ্যে শোকরাগঈর্ষা ইত্যাদিও থাকতে পারে। তিনি দেখিয়েছেনবর্তমান অর্থে “loneliness” শব্দটির ব্যবহার মোটামুটি ১৮০০ সালের পর থেকেই শুরু হয়েছে।

তবে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেএকাকীত্বকে সাধারণত বাস্তব ও কাঙ্ক্ষিত সামাজিক সংযোগের মধ্যকার ফারাক হিসেবে ধরা হয়যা বোঝায় যে আপনি একা না থাকলেও একাকী হতে পারেন।

ইউনিভার্সিটি অব বাথ-এর মনোবিজ্ঞানী স্যাম কারযিনি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন এবং অল দ্য লোনলি পিপল’ বইটির লেখকবিশ্বাস করেন সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা হলোমানুষই সবসময় একাকীত্বের সমাধান।

মানুষই অনেক সময় একাকীত্বের কারণ হয়,” বলেন তিনি। প্রত্যেকেই যেন একেকটা জিগস পাজলের টুকরোর মতোআমরা সবাই চাই কোথাও মিশে যেতেমানানসই হতে। কিন্তু অন্য মানুষই অনেক সময় আমাদের মনে করায় যে আমরা ঠিক মানাচ্ছি না। হয়তো তারা আমাদের প্রকৃত পরিচয়টি স্বীকৃতি দেয় নাহয়তো তারা আমাদের অদৃশ্য করে রাখেঅথবা তাদের সঙ্গে থাকতে হলে আমাদের অন্য কেউ সেজে থাকতে হয়। অনেকের কাছে এটাই একাকীত্বের আসল রূপ।

বাউন্ড অ্যালবার্টিও একমতশারীরিকভাবে একাকী থাকলেই মানুষ একাকী হয়ে ওঠেব্যাপারটা এমন নয়।

অনেকেই ভাবে, ‘একা’ থাকলেই বুঝি একাকী হয়ে যায়,” বলেন তিনি। কিন্তু আমার গবেষণা দেখাচ্ছেমানুষ থেকে দূরে থাকার চেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক হলো যখন আমরা আবেগগতভাবে দূরে থাকি। সবচেয়ে একাকীত্বের অভিজ্ঞতা তখনই হয়যখন সম্পর্কগুলো আমাদের পরিপূর্ণতা দেওয়ার কথা ছিলকিন্তু দেয় না। আমার জীবনে সবচেয়ে একাকী লাগার মুহূর্তগুলো পেরিয়েছি তখনইযখন আমার চারপাশে ছিল অনেক মানুষঅথচ তাদের সঙ্গ আমাকে মোটেও স্পর্শ করত না।

কার সম্প্রতি আমেরিকা থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন। চিঠির লেখিকা জানিয়েছেনতিনি প্রায় অর্ধশতক ধরে তার স্বামীর সঙ্গে আছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেনস্বামীই সবসময় তার একাকীত্বের কারণ। বিয়েকে তিনি একসময় একাকীত্বের সমাধান ভাবলেওশেষ পর্যন্ত সেটিই হয়ে উঠেছে সমস্যা।

বাস্তবিকভাবেইযদি এক সঙ্গী শারীরিক সংযোগকে বেশি গুরুত্ব দেন আর অন্যজন বুদ্ধিবৃত্তিক যোগাযোগে বেশি আগ্রহী হনতাহলে তারা একসঙ্গে থেকেও একাকী হয়ে পড়তে পারেন।

এটা অনেকটা অনুভূতির বিষয়আপনার চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে কি না,” বলেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য গবেষক এবং দ্য ইনস্ট্যান্ট মুড ফিক্স’ বইটির লেখিকা ওলিভিয়া রেমেস। কারো যদি কেবল একজন মানুষের সঙ্গেই গভীর যোগাযোগ থাকেতবুও তিনি একাকী নাও হতে পারেন। অন্যদিকেকেউ চারপাশে অনেক মানুষের সান্নিধ্য পেয়েও যদি গভীর সম্পর্ক বা সংযোগ খুঁজে না পানতবে তিনি একাকীত্বে ভুগতে পারেন।

প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ আমাদের স্থানীয় অনুভূতিকে বাড়ায়। আমাদের মনে হয় আমরা অন্তর্ভুক্তএটাই আমাদের অন্তর্ভুক্তির অনুভূতি জাগিয়ে তোলে,” যোগ করেন রেমেস।

একাকীত্ব আমাদের মানবিক প্রকৃতির সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। অনেকে মনে করেনএটা একটা অভিযোজনমূলকবিবর্তনজনিত সংকেতযার কাজ আমাদের স্বল্পমেয়াদি টিকে থাকার পথ প্রশস্ত করা। যেমন ক্ষুধা আমাদের খাদ্য সন্ধানে তাড়া দেয়তেমনি একাকীত্ব আমাদের জানায় যে আমাদের সামাজিক পরিবেশে সমস্যা আছেএবং তা ঠিক করার প্রয়োজন।

আমাদের আদি পূর্বপুরুষদের জন্য একাকী থাকা ছিল বিপজ্জনক। বন্যপ্রাণী কিংবা অন্যান্য ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়াসেটি তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিত। তাই একাকীত্বসেই আদিম সময়ের মতোইহয়তো আমাদের ভেতরে সামাজিক সুরক্ষার বোধ জাগিয়ে তোলে।

কিন্তু সময় বদলায়একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলায়। বাউন্ড অ্যালবার্টির গবেষণায় দেখা যায়উনিশ শতকের আগে “loneliness” শব্দটি আজকের মতো অর্থ বহন করত না। তখন এটি “oneliness” বা একাকীত্ব” বলতে শুধু বোঝাত একাকী থাকাএটি খারাপ কিছু ছিল না। বরং একাকী থাকার মধ্য দিয়ে মানুষ প্রকৃতি বা ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারতমনোযোগের ব্যাঘাত কমে যেত।

আমি চাই ‘oneliness’ শব্দটি আবার ফিরে আসুক,” বলেন বাউন্ড অ্যালবার্টি। উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ যখন লেখেন ‘I wandered lonely as a cloud’, তিনি বলতে চেয়েছিলেন তিনি একা হাঁটছিলেন। এখানে তার ‘lonely’ শব্দের ব্যবহার এখনকার দুঃখময় একাকীত্ব’ অর্থ বহন করেনি।

কিন্তু পরবর্তী দুই শতকে সমাজে রূপান্তর ঘটেছে। বাউন্ড অ্যালবার্টি ব্যাখ্যা করেনযখন ধর্ম বা ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাসের শক্তি কমে গেলশহর বড় হলোপরিবার ও সম্প্রদায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলতখন মানুষ আরও নামহীন” হয়ে পড়লসংযোগগুলো ঢিলে হয়ে গেল। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ (individualism) বেড়েছে বলে নানা গবেষণায়ও ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আমি চারপাশে তাকিয়ে যখন দেখি সামাজিক যত্নের অভাবসংযুক্তির অভাবঅনুভূতির জায়গাগুলো ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছেসবাই শুধু পণ্য কিনতে গিয়েই একসঙ্গে হচ্ছেতখন আমার কাছে মনে হয়আমরা একাকী বোধ করছি এটা এতটা অস্বাভাবিক নয়,” বলেন বাউন্ড অ্যালবার্টি। বরং বিস্ময়কর হতোযদি এসবের পরও আমরা একাকী বোধ না করতাম।

তাহলে যদি আমাদের চারপাশে মানুষ থাকা সত্ত্বেও আমরা একাকী হইকী করা যায়প্রথমে বোঝা দরকারএটি ক্ষণস্থায়ী একাকীত্বনাকি দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর। যদি আপনি দেখেন যে আপনার অনুভূতিগুলো আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপনকাজকর্ম বা সম্পর্ক গড়ে তোলায় বাধা দিচ্ছেআপনাকে অত্যন্ত কষ্ট দিচ্ছেতাহলে একজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা উচিত,” বলেন রেমেস।

আরো বুঝতে হবে যে একাকীত্ব বেছে নেওয়া ও জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া এক বিষয় নয়। আমরা সবাই ইচ্ছাকৃতভাবে একা থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারিকিন্তু বয়সজনিতশারীরিক অসুস্থতাদারিদ্র্য বা বৈষম্যের মতো কাঠামোগত কারণেও কেউ একাকী হয়ে পড়তে পারেন। এ ধরনের সমস্যার সমাধান সমাজ ও সরকার-স্তর থেকেই দরকার।

অনেক সময় অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে আমাদের দ্বিধা হয়যদিও গবেষণা বলছেএটা আসলে উপকারী। ২০১৪ সালের এক গবেষণায় শিকাগোর যাত্রীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঅচেনা মানুষের সঙ্গে কথা বললে তাদের যাত্রা ভালো হবে কিনা। বেশিরভাগই ভেবেছিলেন, “না। কিন্তু যখন কিছু মানুষকে বলা হলো অপরিচিত কারও সঙ্গে কথা বলতেআর অন্যদের বলা হলো চুপচাপ থাকতেদেখা গেল যারা কথা বলেছিলেনতাদের যাত্রা ছিল সবচেয়ে আনন্দদায়ক।

অনেকেরই নিজেদের সম্ভাব্য মাধুর্য বা অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ভুল ধারণা থাকেযাকে বলা হয় “liking gap”। আর এটা বিশেষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে যদি কেউ ইতিমধ্যেই একাকী থাকেন।

যত বেশি আমরা একাকী হয়ে যাইতত বেশি একাকীত্বের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়িততই মানুষের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে,” বলেন বাউন্ড অ্যালবার্টি। আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাই যে সবাই আমাদের প্রত্যাখ্যান করবে বা ভালোভাবে নেবে না। তখন কারও সামান্য অঙ্গভঙ্গিতেও মনে হয় তিনি আমাদেরকে এড়িয়ে যাচ্ছেনযা পরবর্তীতে সত্যি হয়ে যায়।

কিন্তু একাকীত্ব কাটাতে শুধু যোগাযোগ গড়ে তুললেই হবে নাসম্পর্ককে আরও গভীর ও অর্থপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে হবে।

রেমেস স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত হওয়াকে একটি শক্তিশালী উপায় বলে মনে করেন। অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজের কষ্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিই,” বলেন তিনি। পরিবর্তে আমরা ভাবি, ‘কীভাবে আমি ওই ব্যক্তিকে সহায়তা করতে পারি?’ এটি সংযোগের অনুভূতি দেয়যা একাকীত্ব কমায়।

শারীরিক ছোঁয়াও গুরুত্বপূর্ণ। কারো কাছে শারীরিক স্পর্শের চাহিদা বেশিকারো কাছে কম। তবে একাকীত্ব ও স্পর্শের অভাবের মধ্যে সম্পর্ক আছেঅবশ্য কাঁধে সামান্য স্পর্শও সামাজিক বন্ধন বাড়ায়। এক গবেষণায় দেখা গেছেস্বল্প এক মুহূর্তের স্পর্শ পেয়েও মানুষ বঞ্চিত” বোধ কম করেবিশেষত যারা সিঙ্গেল।

তবে মানুষের সঙ্গ না পেলেও সংযোগ অনুভব করা সম্ভব। পোষা প্রাণীর সঙ্গ অনেককে একাকীত্ব থেকে বের করে আনতে পারেতেমনি প্রকৃতির সান্নিধ্যও পারে।

সেই ২০২১ সালের গবেষণায় দেখা গেছেজায়গা যত বেশি জনাকীর্ণএকাকীত্ব তত বাড়ে। কিন্তু যদি সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বা প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ থাকেতাহলে একাকীত্ব কমে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া ২৮% ক্ষেত্রে একাকীত্বের সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছে।

রেমেস বলেন, “প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ আমাদের জায়গায় থাকার’ অনুভূতিকে বাড়ায়। মনে হয় আমরা কোথাও সত্যিকারের অন্তর্ভুক্ত।” (এ বিষয়ে আরও জানতে জুলিয়া হটজের একটি নিবন্ধে পড়তে পারেন কীভাবে প্রকৃতিতে সময় কাটানো একাকীত্ব কমাতে পারে।)

এদিকে মনে রাখতে হবেকোনো কোনো সম্পর্কও আমাদের একাকী বোধ করাতে পারে। বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে আছি বটেকিন্তু যদি মনে হয় কেউ আমাকে দেখছে না বা শুনছে নাকিংবা সেখানে আমাকে সবসময় একটা মুখোশ পরে থাকতে হচ্ছেতবে সেই সম্পর্কেই আমি একাকী হয়ে পড়তে পারি। এমন হলে সময় নিয়ে কথা বলুনআপনার প্রয়োজনের কথা জানানআর সঙ্গীকেও জানতে দিন কী চান। সম্পর্কটি যদি আসলেই বিষাক্ত হয়তবে সরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন। তবে অনেক সময় আমাদের নিজেদের মধ্যে দেয়াল গড়ে ওঠেবা সময়ের সঙ্গে চাহিদা পাল্টে যায়এগুলো বোঝাপড়ার মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব।

যে-কোনো সময় একাকীত্ব অনুভব করলেনিজেকে জিজ্ঞাসা করুনএই অনুভূতির মাধ্যমে কী জানার আছে। তবে রেমেস সতর্ক করেননিজের কাছে দেওয়া উত্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন আমি একাকী?” এই প্রশ্নের জবাবে যদি ভাবি, “আমার সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত ছিলকিন্তু আমি করিনি”—তাহলে এর সমাধান অপেক্ষাকৃত সহজ: আমি আরও মানুষকে কাছে টানতে পারি।” এটি আপনাকে উদ্যোগী করে তুলবে।

কিন্তু যদি উত্তর দেন, “আমি একাকী কারণ আমাকে কেউ পছন্দ করে না” বা আমি ভাগ্যহীন”—তাহলে সমাধান হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়আপনার ভাবনায় আটকে যায়: আমি কীভাবে আরো গ্রহণযোগ্য বা ভাগ্যবান হব?” এতে আপনি আরও একাকী বোধ করতে পারেন। চাবিকাঠি হলো সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে ভাবাএকেবারে অসহায় বলে নয়,” বলেন রেমেস।

অতিরিক্ত চাপ দিয়ে ভাবার দরকার নেই যে একাকীত্ব শুধু ক্ষতিকর কিছু। মানুষ হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গেই এটা জড়িত। চারপাশে মানুষ আছে না থাকুকএকাকীত্ব একটা স্বাভাবিক অনুভূতি।

একজন মানুষের জীবনজুড়ে যেসব জিনিসের সঙ্গে আমরা সংযোগ অনুভব করিসেগুলোর অনেক কিছুই শেষ হয়ে যায়,” বলেন স্যাম কার। একটি বিয়েএকটি চাকরিবা কারো মৃত্যুর মাধ্যমে সম্পর্কগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বেশিরভাগ সম্পর্কই কোনো না কোনো সময় শেষ হয় বা বদলে যায়এগুলো স্থায়ী নয়। তখন আমাদের নতুন করে নিজেদের গড়ে নিতে হয়আবার নতুনভাবে অন্য কারো সঙ্গে বা অন্য কোনো বিষয়ে সংযোগ গড়তে হয়। কিন্তু সেটি একদিনে হয় না।

তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় একটি মরুভূমি’, যে সময়টায় আমরা খুব একাকী থাকি। কিন্তু এটাকে আমরা যদি মানবজীবনের স্বাভাবিক বাস্তবতা হিসেবে দেখিতাহলে বুঝতে পারি যে এটি মানসিকভাবে ভেঙে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নয়বরং নতুন করে বিকশিত হওয়ার এক অন্তর্বর্তী সময়।

বিশ্ব যত ব্যস্ত হয়ে উঠছেঅন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ভালো পথ খোঁজা আমাদের সবারই উপকারে আসতে পারে। কিন্তু নিজেকে সবসময় দোষারোপ করার দরকার নেইযখন আমরা একাকী বোধ করি। এটা একটা স্বাভাবিকবহুমুখী এবং কখনো কখনো সহায়ক অভিজ্ঞতাযা আমাদের কিছু জানায়যা শুধু এড়িয়ে যাওয়ার বা নিন্দা করার বিষয় নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024