শ্রী নিখিলনাথ রায়
বিশেষতঃ বাহারবন্দ ব্রাহ্মণ-বিধবার সম্পত্তি। যে ব্রাহ্মণের একটি কাণাকড়ি অপহরণ করিলে, ধৰ্ম্মশাস্ত্রানুসারে অশেষ কষ্ট ভোগ করিতে হয়, সেই ব্রাহ্মণের বিধবা- পত্নীর সম্পত্তি অপহরণে যে বিশেষ প্রত্যবায় আছে, তাহা কে অস্বীকার করিবে? বিশেষতঃ যাঁহার অর্থ ব্রাহ্মণ ও দরিদ্র প্রতিপালনে ব্যয়িত হইত, তাঁহার সম্পত্তি নিজ সুখভোগের জন্য গ্রহণ করায় যে পাপ আছে, ইহা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিতেই হইবে।
কান্তবাবু ব্রাহ্মণ-বিধবার সম্পত্তি না লইয়া, যদি অন্য কোন জাতির সম্পত্তি লইতেন, তাহা হইলে হিন্দু- শাস্ত্রানুসারে তিনি তত প্রত্যবায়ের ভাগী হইতেন না। ইচ্ছা করিলে তিনি যে কোন জমিদারী লইতে পারিতেন। কারণ সে সময়ে সমস্তই তাঁহার পক্ষে অবাধ ছিল। ব্রাহ্মণ বিধবার অপহৃত সম্পত্তি গ্রহণ করিয়া, তিনি যে হিন্দুধর্মানুসারে গর্হিত কার্যা করিয়াছেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। কান্ত বাবুর স্বধর্ম্মের প্রতি যথেষ্ট আস্থা ছিল; সেই জন্য আমরা এত কথা বলিলাম। স্বধর্মপরায়ণ শূদ্রকে ব্রাহ্মণের সম্পত্তি গ্রহণ করা ভাল দেখায় না বলিয়া, আমরা তাঁহাকে দোষ দিতেছি।
ব্রাহ্মণের সম্পত্তি না লইয়া, অন্য অনেক উপায়ে তিনি অর্থ লাভ করিতে পারিতেন। যাহা হউক, এ বিষয়ে আর অধিক বলিবার প্রয়োজন নাই। কাউন্সিলের অন্যান্য সভ্যেরা লোকনাথ নন্দীর হস্ত হইতে বাহারবন্দ বিচ্যুত করার চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহা’ কার্য্যে পরিণত হয় নাই। বাহারবন্দ ব্যতীত হেষ্টিংস কান্তবাবুকে আরও অনেক জমিদারী ও কোন কোন লবণের মহাল ইজারা করিয়া দেন।
এই সমস্ত জমি- দারীর মধ্যে বিষ্ণুপুর ও পাঁচেটর পঞ্চকূটের ইজারার উল্লেখ দেখা যায়। ১৭৯২ ও ৭৩ সালের জন্য কান্তবাবু ইজারা লন। কিন্তু উক্ত সময়ে কোম্পানির ২, ১৯, ৮০৬ টাকা রাজস্ব বাকী পড়ে। পরে তিনি পঞ্চকূটের মধ্যে ২৭টি মৌজা ক্রয় করেন এবং তাহার পুত্র লোকনাথ নন্দী আরও ১৭টি মৌজা নীলামে ক্রয় করিয়া লন। উক্ত জমিদারী সাতাইশ সতর বা চটি বালিয়াপুর নামে অভিহিত হইয়া থাকে।
Leave a Reply