শ্রী নিখিলনাথ রায়
লবণের মহালের মধ্যে তৎকালে হিজলীর মহাল লাভকর ছিল। এইরূপ শুনা যায় যে, কান্ত বাবু বেনামীতে সেই মহালের ইজারা লইয়াছিলেন। কমল উদ্দীন হিজলীর ইজারদার ছিল; সে কান্তবাবুর বেনামীতেই হিজলীর ইজারা গ্রহণ করে। মহারাজ নন্দকুমারের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হয়, তন্মধ্যে কান্ত বাবু, গ্রেহাম সাহেবের মুন্সী সদরুদ্দীন ও কমল উদ্দীন এই তিন জনই প্রধান।। ইহা কান্তবাবুর চরিত্রের একটি ভয়াবহ দোষ বলিতে হইবে।
যে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং যাহাতে একটি ব্রাহ্মণের প্রাণদণ্ড ঘটিয়াছিল, এরূপ ষড়যন্ত্রে যদি কান্তবাবু স্বতঃ বা পরতঃ কোন প্রকারে বাস্তবিক লিপ্ত থাকেন, তাহা হইলে তিনি যে ভয়ানক পাপ করিয়াছেন, ইহা বলিতেই হইবে। শাস্ত্রে লিখিত আছে যে, যে ব্রহ্ম- হত্যা করে, সে যেরূপ মহাপাপী, যে তাহার সংসর্গে থাকে, সেও তদ্রূপ মহাপাপী। সুতরাং কান্তবাবু যে মহাপাতকের অংশভাগী হইয়া- ছিলেন, ইহ। অবশ্য স্বীকার্য্য।
ইচ্ছাপূর্ব্বকই হউক, অথবা স্বীয় প্রভু হেষ্টিংস সাহেবের অনুরোধেই হউক, যদি তিনি মহারাজ নন্দকুমারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একজন নায়ক হইয়া থাকেন, তাহা হইলে যে, ধৰ্ম্ম ও দেশের চক্ষে তিনি নিন্দনীয় হইয়াছেন, ইহাতে অণুমাত্র সন্দেহ নাই। হিজলী মহালের বেনামী লইয়া নানারূপ তর্ক বিতর্ক আছে। কাউন্সিলের সভ্যেরা কমল উদ্দীনকে কান্ত বাবুর বেনামদার মনে করিয়াছিলেন। কিন্তু হেষ্টিংস তাহা স্বীকার করিতেন না।
পরবর্তী ইংরেজ লেখক- গণও এ বিষয়ের বর্ণন করিয়াছেন। মুর্শিদাবাদের ভূতপূর্ব্ব জজ বেভারিজ সাহেব প্রথমতঃ কলিকাতা রিভিউ নামক পত্রিকায় “নিম্ন- বঙ্গে হেষ্টিংস” এই প্রবন্ধে উল্লেখ করেন যে, প্রকাশ্যভাবে কমল উদ্দীন হিজলীর নিমক মহলের ইজারদার ছিল বটে, কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে কান্তবাবু ইহার মালিক ছিলেন।। বিলাতের জজ সার জেমস্ ষ্টিফেন সাহেব স্ব-প্রণীত “নন্দকুমারের আখ্যায়িকা’ নামক গ্রন্থে লিখি- য়াছেন যে, বিভারিজ সাহেব হিজলী মহালের বেনামীসম্বন্ধে যাহা কহেন, তাহা যদি বাস্তবিক সত্য হয়, তাহা হইলে যে, ইহা একটি গুরুতর বিষয় তাহাতে সন্দেহ নাই।
Leave a Reply