শ্রী নিখিলনাথ রায়
কাউন্সিল হইতেও তাঁহার সুবিধার জন্য হুকুম প্রদত্ত হইল। কান্ত বাবুর প্রায় জমিদারী ও মহাল লোক- নাথের নামে লওয়া হইত, কিন্তু কাউন্সিলে ও রাজস্বকমিটি প্রভৃতি স্থানে কর্তৃপক্ষগণ এরূপ সাহস অবলম্বন করিতেন যে, কান্ত বাবুর নিজ নামে সমস্ত কথাবার্তা চালাইতে তাঁহারা কিছুমাত্র কুণ্ঠিত হইতেন না। উপরোক্ত পত্র হইতে ইহা বেশ বুঝা যায়।
যদিও কোম্পানীর নিয়মা- মুসারে কোন সরকারী কর্মচারীর বেনিয়ান বা পেস্কারাদি কোন জমি- দারী বা ফারম ইজারা লইতে পারিত না, তথাপি লোকনাথের নামে- কান্ত বাবুকে জমিদারী মহালাদি প্রদান করিয়া, তাঁহারা অনেক সময়ে *প্রকাশ্যভাবে কান্ত বাবুর নাম করিয়া তর্ক বিতর্ক করিয়াছেন। তাঁহারা যে অনেক সময়ে ডিরেক্টর প্রভৃতির আদেশ অবহেলা করিতেন, ইহা হইতে তাহা বেশ বুঝা যায়। উপরোক্ত পত্র ও তাহার উত্তর ১৭৭৪ খৃঃ অব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে লিখিত হয়। কমল উদ্দীন ১৭৭২ খৃঃ অব্দে হিজলীর ইজারদার নিযুক্ত হয়।
পূর্ব্বে একস্থানে লিখিত হইয়াছে যে, হেষ্টিংস দুঃখ করিয়া বলিয়াছিলেন যে, কমল উদ্দীন হিজলীর ইজারা লওয়ায় কান্তের লোকসান হইতেছে। সুতরাং বুঝা যাইতেছে যে, কমল উদ্দীন ইজারদার হইবার পূর্ব্বে ও পরে কান্তের সহিত হিজলীর লবণ মহালের বিশেষ সম্বন্ধ ছিল, এবং তাঁহার লাভের যাহাতে ক্ষতি না হয়, তদ্বিষয়ে কর্তৃপক্ষগণেরও বিশেষ দৃষ্টি ছিল। কমল উদ্দীনও প্রকাশ করিয়াছে, লোকনাথ রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে হিজলীর দরইজারা লইয়াছেন।
ইত্যাদি কারণে কমল উদ্দীন স্পষ্টতঃ কান্ত বাবুর বেনামদার না হইলেও, কমলের সহিত তাঁহার যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল, তাহাতে অণুমাত্র সন্দেহ নাই। সুতরাং ষ্টীফেন সাহেব বেভারিজ সাহেবকে প্রমাণাভাবে যে দোষ দিয়াছেন, তাহা সঙ্গত নহে। এইরূপে আমরা দেখিতে পাই যে, তৎকালে এ দেশে যে কোন লাভকর জমি- দারী বা মহাল ছিল, কান্ত বাবুর সহিত তাহাদের বিশেষ সম্বন্ধ ছিল। হেষ্টিংসের যত্নে চঞ্চলা লক্ষ্মী অনেক লোককে পরিত্যাগ করিয়া, কান্ত বাবুকে আশ্রয় করিতে বাধ্য হন। পরিবর্তনশীলা স্রোতস্বিনীর ন্যায় ভাগ্যলক্ষ্মীও বৈচিত্র্যময়ী।
Leave a Reply