শ্রী নিখিলনাথ রায়
নদীর যে তট এক্ষণে নানাবিধ শস্যরাশিতে পরিপূর্ণ হইয়া, শ্যামলতার পবিত্র রাজ্য বলিয়া প্রতীত হইতেছে, পরক্ষণে হয়ত মহাপ্লাবনে বিধৌত হইয়া, তাহা নিরবচ্ছিন্ন সিকতান্ত,পে পরিণত হইবে। যে স্থান গগনস্পর্শিনী সৌধমালায় বিভূষিত হইয়া, প্রতিবিম্বচ্ছটায় নদীগর্ভে আপনাকে পুনঃ সৃষ্টি করিতেছে, দুই দিন পরে, হয়ত বাস্তবিকই নদীগর্ভে তাহার স্থান হইবে।
আবার যে স্থান এক্ষণে সলিলমধ্যে অবস্থিতি করিয়া,, তাহার প্রত্যেক পরমাণুর সহিত নিজের পরমাণুগুলিকে পলে পলে মিশাইয়া’ দিতেছে, কিছুকাল পরে, হয় ত, সে মস্তক উত্তোলন করিয়া, ক্রমে ক্রমে শ্যামল বৃক্ষরাজিতে অথবা নবীন সৌধমালায় পরিশোভিত হইয়া, হাস্ত করিতে থাকিবে। সেইরূপ যে ভাগ্যশীল ব্যক্তি বিশাল সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হইয়া, সুবাষিত কক্ষে অর্দ্ধনিমীলিত অবস্থায় কত সুখস্বপ্ন দেখিতেছেন, দুই দিন পরে, হয় ত, তিনিও পথের ভিখারী হইয়া দাঁড়াইবেন।
আর যে দরিদ্র পর্ণকুটীরে বসিয়া, নিরাশার বিভীষিকাময় চিত্রে শিহরিয়া উঠিতেছে, ভাগ্যলক্ষ্মীর কৃপায় কিছুকাল পরে দেখিবে, সে লক্ষাধিপতি হইয়া আনন্দ- হিল্লোলে ভাসিয়া চলিয়াছে। লীলাময়ী কমলার কৃপায় কান্ত বাবু সামান্য অবস্থা হইতে লক্ষপতি হইতে লাগিলেন। যে জমিদারী অথবা মহাল লইতে তাঁহার ইচ্ছা হইতে লাগিল, তৎক্ষণাৎ তাহাই তাঁহার করায়ত্ত হইতে লাগিল।
তাঁহার লালসা ব্রহ্মাণ্ডগ্রাসিনী না হইলেও, উত্তরোত্তর যে, প্রসারিত হইতেছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। যেরূপে তিনি স্বীয় বাসনা পূর্ণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহা শেষ করিয়া উঠিতে পারিলে, বহু লক্ষাধীশ্বর হইতে পারিতেন। বঙ্গের অনেক লাভকর জমিদারী যে ভিন্ন ভিন্ন হস্ত হইতে বিচ্যুত হইয়া, তাঁহার করতলগত হইত, সেই সময়ে। তাঁহার জমিদারী গ্রহণের কথা শুনিলে ইহা বেশ বুঝা যায়।
Leave a Reply