ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
আমি তাঁকে ফ্লেরভস্কির কথা বললাম: দীর্ঘকায়, দীর্ঘশ্মশ্রু বক্তি; কৃষদেহ, অতি আয়ত ছটি চক্ষু। বললাম, কেমন ক’রে তিনি নৌকার লম্বা পালের কাপড়ে ব্লাউজ বানিয়ে পরতেন, আর কোমরবন্ধে লাল মদে সিদ্ধ চাউলের একটা ডিবা বেঁধে, একটা কাপড়ের বিরাট ছাতা নিয়ে আমাকে সংগে ক’রে ট্রান্সককেসাসের পথে-পথে ঘুরে বেড়াতেন; কেমন ক’রে একদিন একটা সংকীর্ণ রাস্তার ওপর আমাদের সংগে একটা মহিষের সাক্ষাৎ ঘটলো এবং আমরা বিচক্ষণের মতো কয়েক পা পিছিয়ে এসে ছাতা খুলে সেই হিংস্র জানোয়ারটাকে ভয় দেখালাম।
আর যতোবারই পেছিয়ে এলাম, প্রতিবারেই পাহাড়ের খাড়া গা বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ার ভয়ংকর সম্ভাবনা দেখা যেতে লাগলো। অকস্মাৎ আমি লক্ষ্য করলাম, টলস্টয়ের চোখে জল দেখা দিয়েছে। আমি বিব্রত বিমূঢ় হ’য়ে থেমে গেলাম।
“ও কিছু না। থেমো না, বলো।” টলস্টয় বললেন, “কোন মহৎ ব্যক্তির প্রসংগ শুনতে আনন্দ লাগে। আমি-ও তাঁকে এমনটিই কল্পনা করেছিলাম। অতুলনীয়। সমস্ত চরমপন্থীদের মধ্যে তিনিই হ’লেন পরিণত এবং বুদ্ধিমান; তাঁর ‘বর্ণমালা’ গ্রন্থে তিনি নিঃসন্দেহে প্রমাণ ক’রে দিয়ে-ছেন, আমাদের সমগ্র সভ্যতা হোলো বর্বরতা, সংস্কৃতিটা শান্তিপ্রিয় দুর্বল কোনো জাতির কাজ, সকল জাতির নয়।
টিকে থাকার জন্যে সংগ্রাম, এই কথাটি গর্হিতকে ন্যায়সংগত প্রমাণ করার জন্যে একটা মিথ্যা উদ্ভাবন। তুমি নিশ্চয় এ বিষয়ে একমত নও? কিন্তু, তুমি জানো, দদে-ও এ-বিষয়ে একমত ছিলেন-তাঁর ‘পল অস্টিরের’-এর কথা তোমার মনে পড়ে?”
“কিন্তু, ধরুন, ইউরোপীয় ইতিহাসে ন্যানরা যে ভূমিকা গ্রহণ করেছে, ফ্লেরভস্কির থিওরির সংগে আপনি তাকে খাপ খাওয়ান কেমন ক’রে ”
“ন্যাণরা? সে কথা আলাদা।”
আমার কেবলই মনে হোতো-এবং সেটা মিথ্যা ব’লেও আমার মনে হয় না-নিও নিকোলাইয়েভিচ সাহিত্য সম্বন্ধে আলাপ করতে খুব ভালো বাসতেন না। কিন্তু সাহিত্যিকদের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে তাঁর কৌতূহল ছিল সজাগ এবং প্রচুর। “তুমি তাঁকে চেনো? তিনি কেমন? তিনি জন্মেছিলেন কোথায়?” এই প্রশ্নগুলি আমি প্রায়ই তাঁর মুখে শুনতাম। আর তাঁর সমস্ত মতামত ওই লোকগুলির ওপর নূতন অদ্ভুত কোনো আলোকক্ষেপ করতোই।
Leave a Reply