শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

ঢাকার জ্যামদানি নারীদের এক মুগ্ধকর অনুভূতি

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ৩.০০ পিএম

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ট্রাফিক দূষণের কোলাহলভাজা ডিম চপএবং সঙ্কীর্ণ রাস্তায় ভিড়ের মাঝেওএকটি জ্যামদানি শাড়ি নারীদের জন্য মুগ্ধকর এক অনুভূতি। এই শাড়ি জীবনের সুন্দর অপূর্ণতার মৃদু স্মারকযেমন হঠাৎ কিছু হারানো বা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও জীবনে সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি না পাওয়া।

ঢাকাই জ্যামদানি শাড়ির উজ্জ্বল ও চকচকে সুতো মনে করিয়ে দেয় জীবন কতটা চমৎকার। ঢাকাই জ্যামদানি পরা অবস্থায় জীবন কখনোই নিরানন্দ হতে পারে না।

ঢাকার ইতিহাস যত পুরনোঢাকাই জ্যামদানি শাড়ির গল্পও তত পুরনো। এটি এমন এক অদ্ভুতসর্বব্যাপী গল্পযা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। এই শাড়ি তার গৌরব ধরে রেখেছেতবে সময়চাহিদা এবং কাঁচামালের প্রাপ্যতার কারণে এর উপাদানগুলো পরিবর্তিত হয়েছে।

মুঘল শাসনামলে মসলিন সহজেই পাওয়া যেতযা এখন জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু এক দারুণ সংবাদ হলোবাংলা মসলিন আবার ফিরে আসছে।

জ্যামদানি শাড়ি বাংলা নারীদের হৃদয়ের শাসকযারা এটি প্রতিদিনের পোশাক বা গৃহস্থালির কাজের জন্য ব্যবহার করেন। এটি দেশি তাঁতের শাড়িভারতীয় সিল্ক কাঞ্চীপুরমদক্ষিণ ভারতীয় মাদুরাই সুনীগুদিবা সিলেটি মণিপুরীর মতো জনপ্রিয় শাড়ির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

ঢাকাই জ্যামদানি তুলাআধা সিল্কসিল্কঅথবা মসলিন দিয়ে তৈরি হতে পারে। জ্যামদানি উদ্যোক্তা রহিম হোসেন, রূপগঞ্জ, জানানশাড়ির সুতো কতটা সূক্ষ্ম তা নির্ধারণ করে এর মান। মসলিনের জন্য সুতোর সূক্ষ্মতা প্রায় ১০০০ হতে হবে। যত সূক্ষ্ম হবেততই ভালো। মসলিনের সুতো এতটাই সূক্ষ্ম যে বুনন করার সময় তাঁতিদের আঙুলে ভেসলিন মাখতে হয়। আধা-সিল্ক জ্যামদানি বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিক্রিত।

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরে অবস্থিত বিসিক জ্যামদানি শিল্প নগরীতে জ্যামদানি তাঁতের কাজ হয়। এখানে মধ্যম আকারের একটি কারখানায় প্রায় পঞ্চাশজন কর্মী কাজ করেন। অনলাইন এবং অফলাইন বিক্রয় ক্রমেই বাড়ছে।

জ্যামদানি তৈরির প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্ম হাতের কাজ এবং দীর্ঘ সময়ের শ্রমের প্রয়োজন হয়। তাঁতিরা খুব অল্প বিরতি নেন এবং দিনরাত কাজ করে শাড়ি তৈরি করেন।

জ্যামদানি শুধুমাত্র একটি শাড়ি নয়এটি বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক। উদ্যোক্তা সাদ বলেন, “বাজারে বিভিন্ন ধরনের জ্যামদানি পাওয়া যায়। এটি সবার জন্য উপলব্ধএমনকি যারা আমাদের দেশে জীবিকা নির্বাহ করতে অক্ষম।”

উদ্যোক্তা সৌমি খান ঢাকার বনশ্রীতে তার জ্যামদানি শাড়ির শোরুম চালু করেছেন। তার অনলাইন শোরুম দ্রুত প্রসারিত হয়েছে। তিনি জানান, “ঢাকার বাইরেও শোরুম খোলার পরিকল্পনা করছি।”

ভারতীয় শাড়ি যেমন জনপ্রিয়তেমনি ঢাকাই জ্যামদানি ভারতেও জনপ্রিয়। সাদ বলেন, “ভারতে জ্যামদানি শাড়ির ব্র্যান্ড এবং শোরুম রয়েছে।”

তবেঅনেক সময় ভারতীয় মেশিনে তৈরি জ্যামদানি বাজারে ঢাকাই জ্যামদানি হিসেবে বিক্রি করা হয়। এই শাড়িগুলোর দাম কমতবে মান এবং সূক্ষ্মতার অভাব রয়েছে।

জ্যামদানির মতো নকশা থাকা শাড়িগুলোর মধ্যে আসল এবং নকল শনাক্ত করা কঠিন। তবেঢাকাই জ্যামদানি তৈরির মূল শৈল্পিকতা এবং তাঁতিদের দক্ষতা সবসময় অমূল্য।

ঢাকাই জ্যামদানি ঐতিহ্য এবং পরিশ্রমের এক অনন্য মিশ্রণযা বাংলার নারীদের মুগ্ধ করে এবং তাদের পোশাকের আভিজাত্য বৃদ্ধি করে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024