শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন

ওষুধের ওপর ভ্যাট দামের আতঙ্কে ভূগছে রোগীরা

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ৩.২১ পিএম

সারাক্ষণ রিপোর্ট

আলী হোসেনযিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেনপ্রতি মাসে ,০০০ থেকে ,০০০ টাকার ওষুধ কিনে থাকেন। তিনি উচ্চ রক্তচাপগ্যাস্ট্রিক ও হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য এই ওষুধগুলি কেনেন।

এছাড়াও তিনি রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার খরচ ও চিকিৎসকের ফি বাবদ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেন। এর পাশাপাশিওষুধের দাম কখনো স্থিতিশীল ছিল না এবং ক্রমাগত বাড়ছে। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ওষুধের দামের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

৯ জানুয়ারিসরকার একশোরও বেশি পণ্য ও পরিষেবার উপর ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছেযার মধ্যে ওষুধও রয়েছে। ওষুধের উপর ভ্যাট ২.৪% থেকে বাড়িয়ে ৩% করা হয়েছে এবং এটি ৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।

মূল্য স্থিতিশীল রাখতেওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) প্রতিটি ওষুধের ইউনিটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি)ভ্যাটসহভোক্তা পর্যায়ে নির্ধারণ করে। ৯ জানুয়ারির আগে নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে উৎপাদন স্তরে ১৫% ভ্যাট এবং ব্যবসায়িক স্তরে ২.৪% ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখন এই ভ্যাট ৩% করা হয়েছে। ফলেওষুধের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ জাতীয় স্বাস্থ্য হিসাব থেকে জানা যায়বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৪% মানুষ ওষুধের জন্য ব্যয় করেন। হাসপাতাল ও ক্লিনিকের জন্য ব্যয় হয় ১০.১%চিকিৎসকের চেম্বারে ১৩.৪%রোগ নির্ণয় পরীক্ষায় ১১.৭%ওষুধে ৬৪.৬% এবং চিকিৎসা সরঞ্জামে ০.১%।

ওষুধ বিক্রেতারা বলছেনডলারের মূল্য বৃদ্ধির পরবেশ কয়েকবার ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে গ্রাহকদের আরও বেশি টাকা খরচ করতে হবে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএপিআই) জানিয়েছেগত কয়েক মাসে বিভিন্ন ওষুধের দাম ৪০% পর্যন্ত বেড়েছে। এর আগে কিছু ওষুধের দাম আরও বেড়েছিল। তবেডিজিডিএ জানিয়েছে যেএক বছর আগে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল।

এ বছর সেই প্রস্তাবের সাথে সামঞ্জস্য করা হয়েছে। ডিজিডিএ আরও জানিয়েছে যেতারা এ পর্যন্ত মাত্র ১০টি ওষুধের দামের বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে।

তবেবিভিন্ন ফার্মেসি পরিদর্শনে ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। বিক্রেতাদের তথ্য অনুযায়ীডায়াবেটিসগ্যাস্ট্রিকউচ্চ রক্তচাপ এবং বিভিন্ন সংক্রমণের চিকিৎসার ওষুধের দাম বেড়েছে। সূত্র জানিয়েছে যেওষুধের দাম বাড়াতে হলে ডিজিডিএ থেকে অনুমোদন নিতে হয়।

এছাড়াওনতুন ভ্যাট কীভাবে আরোপ করা হবে তা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ডিজিডিএর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যেওষুধের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত খরচ কমানোর জন্য কাজ চলছে।

রাজধানীর মগবজারের বাসিন্দা সুমন দত্ত দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ওষুধের খরচ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেনবাজারে জিনিসপত্রের দামের কারণে তার মাসিক ব্যয় বেড়ে গেছে। তার ওপরওষুধের দামও বাড়ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সোমবার শিল্পের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেনযেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যেপ্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করা হবে।

বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান বলেন, “টিকা রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় ভূমিকা রাখে। একসময় আমরা ৮০% ওষুধ আমদানি করতামকিন্তু এখন আমরা আমাদের ওষুধ ১৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করি। তবে আমাদের দেশে চিকিৎসা খরচের বেশিরভাগ অংশ ওষুধে ব্যয় হয়। এ কারণে আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্য কাঠামো তৈরি করতে চাই।”

বৈঠকে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান এবং বিএপিআই-এর সভাপতি আবদুল মুকতাদির বলেন, “বর্তমানে দেশের ওষুধ বাজারের আকার ৩০,০০০ কোটি টাকা। বিশ্বের কোথাও বাংলাদেশের মতো কম দামে ওষুধ পাওয়া যায় না। প্রতিটি ক্ষেত্রে খরচ বেড়েছেযার মধ্যে বিদ্যুতের খরচ ও কর্মচারীদের বেতনও রয়েছে।”

তবেআমরা চাই মানুষ যেন সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ পায়। আমরা কোনো ওষুধের দাম বাড়াতে চাই না। যদি সমস্যার সমাধান করতে হয়তবে প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করা যেতে পারে ডব্লিউএইচও-এর প্রয়োজনীয় তালিকা অনুসারেকারো ইচ্ছামতো নয়।”

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024