আলেক্সান্ড্রা অল্টার
জেনা বুশ হেগার এখন পর্যন্ত তার নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবে ছয়টি বই অধিগ্রহণ করেছেন।
কিছু প্রায় ছয় বছর আগে “টুডে” শোতে বই ক্লাব চালু করার পর তিনি প্রকাশনা জগতে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন হয়ে উঠেছিলেন। এখন শুধু বই সুপারিশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি নিজেই বই প্রকাশ করতে চলেছেন।
হেগার সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে তিনি র্যানডম হাউস পাবলিশিং গ্রুপের সঙ্গে একটি যৌথ প্রকল্প শুরু করছেন, যার নাম থাউজ্যান্ড ভয়েসেস এক্স আরএইচপিজি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে হেগার প্রতি বছর চার থেকে ছয়টি বই প্রকাশ করবেন র্যানডম হাউসের বিভিন্ন ইমপ্রিন্টে, যা পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউসের অংশ।
তিনি জানিয়েছেন, তিনি বিভিন্ন ধরনের ঘরানার বই অধিগ্রহণ করতে চান—স্মৃতিকথা, সাহিত্যিক কথাসাহিত্য, রোম্যান্স ও ঐতিহাসিক উপন্যাস সহ আরও অনেক কিছু।
তিনি বলেন, “আমি এমন বই ভালোবাসি যা পাঠককে টেনে রাখে, যা বন্ধ রেখে ওঠা যায় না, আবার এগুলো নিয়ে আলোচনা করতেও সবাই আগ্রহী হয়।”
হেগার — যিনি এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কন্যা হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন — ২০১৯ সালে এনবিসির “টুডে” শোর সহ-উপস্থাপক হওয়ার পর যখন মাসিক বই ক্লাব শুরু করেন, তখন থেকেই একজন উল্লেখযোগ্য বই-প্রচারক হয়ে ওঠেন। সেই সময় তিনি ওপ্রাহ উইনফ্রে, রিজ উইদারস্পুন ও এমা রবার্টসের মতো সেলিব্রিটি বই ক্লাব সঞ্চালকদের কাতারে যোগ দেন। তার প্রথম বই নির্বাচন ছিল টারা কনক্লিনের “দ্য লাস্ট রোমান্টিকস,” যা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার হয়।
এরপর থেকে তিনি তার বই ক্লাবের জন্য ৭৪টি বই নির্বাচন করেছেন—এর মধ্যে আছে প্রথম উপন্যাস “দ্য স্কুল ফর গুড মাদার্স” (জেসামিন চ্যান) এবং “দ্য ক্লয়েস্টার্স” (কেটি হেইস), আবার সান্ড্রা সিসনেরোসের ১৯৮৪ সালে লেখা “দ্য হাউস অন ম্যাঙ্গো স্ট্রিট”-এর মতো পুরনো বইও। অনেকগুলো বই-ই তিনি সেরা বিক্রয় তালিকার শীর্ষে নিয়ে গেছেন।
তার নির্বাচিত বইগুলোর মধ্যে ৪৭টি নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার হয়েছে, এবং ৩৪টি বই চলচ্চিত্র বা সিরিজে রূপান্তরের জন্য বিকল্প অধিকার (অপশন) নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৯টি তিনি নিজের প্রযোজনা সংস্থা বা ব্যক্তিগত প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করেছেন। ২০২৪ সালে তার বই ক্লাবের বাছাই করা বইগুলোর বিক্রয় সামগ্রিক প্রাপ্তবয়স্ক কথাসাহিত্যের বাজারের তুলনায় ৩০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পায়, সারকানা বুকস্ক্যানের তথ্যে জানা গেছে।
বই ক্লাবের জন্য বই নির্বাচন করার সময় অনেক ক্ষেত্রেই তিনি মনে করেন যে তিনি যদি প্রকাশনা-সম্পাদক হিসেবে পরামর্শ দিতে পারতেন বা বইগুলোর কিছু পরিবর্তন করতে পারতেন। সেখান থেকেই নিজস্ব ইমপ্রিন্ট শুরু করার পরিকল্পনা তার কাছে স্বাভাবিক আগ্রগতির মতো মনে হয়েছে।
তবে নতুন ইমপ্রিন্ট “রিড উইথ জেনা” ক্লাবের অংশ নয় বলে তিনি স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি এখনও চাই বই ক্লাবের নিজস্ব এক আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকুক। কিন্তু বই ক্লাব থেকে আমরা যা যা শিখেছি, তা এই নতুন উদ্যোগে কাজে লাগাতে পারব।”
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, “টুডে” শো-এর সুবিশাল দর্শক-শ্রোতা ছাড়া হেগারের পাঠক-প্রভাব আসলে কতটা কাজ করবে? গত কয়েক বছরে খ্যাতনামা ব্যক্তিদের দিয়ে ইমপ্রিন্ট চালু করার চেষ্টা অনেক প্রকাশনা সংস্থাই করেছে, কিন্তু সাফল্য সবসময় একরকম হয়নি।
তবে হেগারের অন্যদের তুলনায় বাড়তি সুবিধা রয়েছে। তিনি ইতিমধ্যেই লেখক, এজেন্ট ও বুকসেলারের সঙ্গে বড়সড় সম্পর্কের জাল গড়ে তুলেছেন। তার বই ক্লাবের নির্বাচিত বইয়ের চমৎকার বিক্রয়-ইতিহাস রয়েছে, যা প্রমাণ করে তিনি কোন বই বাজারে সাফল্য পেতে পারে তা ভালোই বুঝতে পারেন।
নতুন ইমপ্রিন্টে হেগার বই অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে সম্পাদনা, প্রচ্ছদ ডিজাইন পছন্দ করা, বিপণন ও প্রচারণার পরিকল্পনা করা—সবকিছুতেই নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকতে চান। তিনি একই সঙ্গে টেলিভিশন ও বইয়ের দোকানে লেখকদের নিয়ে উপস্থিত থাকতে চান বলেও উল্লেখ করেছেন।
লিটারারি এজেন্ট ক্রিস্টি ফ্লেচার, যিনি ইউনাইটেড ট্যালেন্ট এজেন্সির প্রকাশনা বিভাগের সহ-প্রধান, বলেন, “তিনি খুব ভালো বোঝেন যে নতুন লেখকদের জন্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা কতটা কঠিন, তাই তিনি কৌশলী ও সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নেন, এবং তাদের সাহায্যের জন্য নতুনভাবে ভাবতেও প্রস্তুত থাকেন।”
হেগার স্বীকার করেছেন যে তিনি ইতিমধ্যে “টুডে” শো-এর সহ-উপস্থাপক, নিজের বই ক্লাব ও প্রযোজনা সংস্থা চালানোর পাশাপাশি প্রকাশনা সংক্রান্ত কাজও চালিয়ে যাওয়াটা সহজ হবে না। কিন্তু তিনি গত কয়েক মাস ধরে প্রস্তাব ও পাণ্ডুলিপি পড়ছেন এবং ইতিমধ্যেই ছয়টি বই অধিগ্রহণ করেছেন। কখনও কখনও তিনি সকালবেলা ৩০ রকফেলার প্লাজায় নিজের অফিসে লেখকদের সঙ্গে বৈঠক সারেন।
তিনি বলেন, “আমার সহকারী বলে ওঠে, ‘জেনা, আপনাকে যেতে হবে, কিছুক্ষণের মধ্যেই টেলিভিশনে আসতে হবে।’”
প্রথম বইটি হলো অ্যারিয়েল সুলিভানের প্রথম উপন্যাস “কনফর্ম,” যা অক্টোবর মাসে ব্যালান্টাইন থেকে প্রকাশিত হবে। এটি ভবিষ্যৎ-পরবর্তী এক বিশ্বে জন্ম নেওয়া এক রোম্যান্টিক উপন্যাস, যেখানে সমাজে নানা বিধিনিষেধ আরোপিত। হেগার বইটি এতটাই আকর্ষণীয় মনে করেছেন যে তিনি ভোর সাড়ে পাঁচটায় ট্রেডমিলে দৌড়ানোর সময়ই শেষ করে ফেলেছেন। এরপরে আসছে আনা ম্যাককলির প্রথম উপন্যাস “অ্যাবি অফসাইডস,” যেখানে এক তরুণী বিবাহিত একজন স্কটিশ ফুটবল তারকার প্রেমে পড়ে। আর এমা ব্রোডির “ইনটো দ্য ব্লু” উপন্যাসটি দুই প্রেমিকের কাহিনি, যাদের একটি মর্মান্তিক রহস্য আলাদা করে দেয়।
হেগার জানিয়েছেন, তার প্রকাশিত বইগুলোর ওপর ভিত্তি করে থাউজ্যান্ড ভয়েসেস প্রযোজনা সংস্থা থেকে চলচ্চিত্র বা সিরিজ বানানোর সম্ভাবনা থাকলেও সেটি তার প্রধান লক্ষ্য নয়।
তার কথায়, “আমার লক্ষ্য নতুন লেখকদের বিকাশ ঘটানো—নতুন এমিলি হেনরি বা সারাহ মাসকে খুঁজে বের করা, তাদের সমর্থন করা। সেটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত করে।”
Leave a Reply