প্রশান্ত ঝা
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান এবং আসন্ন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্ট্জ দুজনেই মনে করেন যে চীনই যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত চ্যালেঞ্জের প্রধান উৎস, এবং এই প্রতিযোগিতায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে, যেখানে সালিভান ও ওয়াল্ট্জ আরেক সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্টিফেন হ্যাডলির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন, উভয়েই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর জোর দেন। ওয়াল্ট্জকে চীনের বিরুদ্ধে দ্বিদলীয় নীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি তাঁর ‘ইন্ডিয়া ককাস’-এ (ভারত বিষয়ক কংগ্রেসীয় গ্রুপ) সহ-সভাপতির ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, “ভবিষ্যতের জন্য ভারতই আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।” অন্য দিকে, সালিভান সম্প্রতি তাঁর ভারত সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, “ওরা (ভারতে) আপনাকে খুব ভালোবাসে এবং আপনি দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে তারা বেশ উচ্ছ্বসিত।” সালিভান হাসতে হাসতে আরও বলেন, তাঁর স্ত্রী এখন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য হওয়ায় তিনি মজা করে বলেছিলেন যে তিনিও ভারত বিষয়ক সংসদীয় “স্পাউস ককাস”-এর দায়িত্ব নিতে পারেন, যা শুনে উপস্থিত সবাই হাসিতে ফেটে পড়েন।
“পাসিং দ্য বাটন ২০২৫: স্ট্র্যাটেজিক কমপিটিশনের যুগে আমেরিকার ভবিষ্যৎ সুরক্ষা” শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান যে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষরা যেন কোনো সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়েও বিদায়ী ও নতুন প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করছে। ওয়াল্ট্জ উদাহরণ দিয়ে বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা এগোতে বাইডেন ও ট্রাম্প – উভয় প্রশাসনই নিজস্ব দূত পাঠিয়েছে; সাইবার-নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছেন; সালিভানও অকপটে তাঁর অভিজ্ঞতা, কী কাজ করেছে আর কী করেনি, তা ওয়াল্ট্জকে জানিয়ে দিচ্ছেন।
সালিভান বলেন, “যদিও আমরা তাত্ক্ষণিক ঘটনাবলিতে মনোযোগ দিচ্ছি, আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মনোযোগ অবশ্যই চীনের দিকে থাকতে হবে। আমরা বহুদিনহ য়তো এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হইনি। তাই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ, মিত্রদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং চীনের অন্যায় অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ও দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান প্রণালীর মতো অঞ্চলে তাদের আগ্রাসী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।”
অন্য দিকে, ওয়াল্ট্জ মনে করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দক্ষিণ সীমান্ত’ এখনই সবচেয়ে জরুরি সমস্যা, এবং এর খোলা অবস্থান মেনে নেওয়া যায় না। তিনি যোগ করেন, ট্রাম্প পশ্চিম গোলার্ধে মনোযোগ দিচ্ছেন, বিশেষত লাতিন আমেরিকায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে। ওয়াল্ট্জ বলেন, “কংগ্রেসে আমরা সাপ্লাই চেইন নিয়ে বেশ চিন্তিত, বিশেষত এমন একটি দেশের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে, যে আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আমরা ওষুধ শিল্পের উপাদান থেকে খনিজ পদার্থ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্ভরশীল। ফলে পশ্চিম গোলার্ধকেই আমরা উৎস হিসেবে দেখতে পারি। প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বিশ্বাস করেন যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব, কারণ তাদের আমাদের বাজারের প্রয়োজন আছে। আমরা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যতটা সম্ভব এই প্রয়োজনকে কাজে লাগাব।”
Leave a Reply