সৌভদ্র চট্টোপাধ্যায়
ডিসেম্বর ২০০৪-এ মৃত্যুর বিশ বছর পর, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও-এর উত্তরাধিকার অবশেষে কংগ্রেস দলের নতুন সদর দপ্তরে স্থান পেয়েছে। অর্থনৈতিক উদারীকরণের যুগসূচনা করা এই প্রধানমন্ত্রীর অন্তত চারটি আলোকচিত্র ইন্দিরা ভবনের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে।
কংগ্রেসের পুরনো সদর দপ্তর আকবর রোড ২৪ নম্বরে রাওয়ের কোনো ছবি ছিল না। অনেকে মনে করতেন, এটি অজান্তে নয়—সাজানো পরিকল্পনারই অংশ। কিন্তু নতুন দপ্তরে তিনটি ছবি রয়েছে। একটি সাদা-কালো ছবিতে রাওকে বাঁশের চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। আরেকটিতে দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কিম ইয়াং সাম-এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনার দৃশ্য—সেখানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মাও উপস্থিত। তৃতীয় ছবিতে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে রাওকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। সেই ফ্রেমেই তরুণ মনমোহন সিংও রয়েছেন।
চতুর্থ ছবিটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সেখানে রাওকে তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর পাশে বসে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে।
কংগ্রেসের তরফে রাওকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে বারবার অভিযোগ তুলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তাদের বক্তব্য, কংগ্রেস নেতারা শুধু নেহরু-গান্ধী পরিবারকে প্রমোট করতে চেয়েছে, ফলে সরদার বল্লভভাই পটেল, সুভাষচন্দ্র বসু এবং ভীম রাও আম্বেদকরের মতো অনেক নেতা উপেক্ষিত হয়েছেন। বিজেপি তাদেরও নিজেদের আদর্শ ও কাজের অংশ হিসেবে তুলে ধরতে চায়।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে রাও যখন মারা যান, তখন তার মরদেহ আকবর রোডের কংগ্রেস সদর দপ্তরে শায়িত রাখা হয়নি। তিনি এআইআইএমএস-এ মারা গেলেও শেষকৃত্য করা হয় হায়দরাবাদে।
গত মাসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের (যিনি ২৬ ডিসেম্বর মারা যান) স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধের দাবি জানায় কংগ্রেস। তখন বিজেপি আবারও রাওয়ের প্রসঙ্গ তোলে। বিজেপির গৌরব ভাটিয়া প্রশ্ন করেন, কংগ্রেস রাওয়ের জন্য কোনো সমাধিস্থল তৈরি করেছে কি না এবং ঠিকানাটি কোথায়। তিনি এ-ও অভিযোগ করেন যে রাওয়ের মরদেহ কংগ্রেস সদর দপ্তরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং তাকে দিল্লির বদলে তার নিজ শহরে দাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি সরকার রাওকে মরণোত্তর ভারতরত্ন পুরস্কারে সম্মানিত করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে রাওকে ভারতরত্নে সম্মানিত করা হয়।
যাই হোক, অনেক কংগ্রেস নেতা—যার মধ্যে প্রয়াত মনমোহন সিংও রয়েছেন—পূর্বে বহুবার প্রকাশ্যে বলেছেন, রাও ভারতীয় অর্থনীতি খুলে দেওয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। রাও ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন।
রাওয়ের নাতি নাচারাজু বেঙ্কটা সুবাস, যিনি বিজেপি নেতা, তিনি বলেছেন, “আমি চাইতাম নতুন ভবনটির নাম রাওয়ের নামে রাখা হোক। মৃত্যুর বিশ বছর পর তারা ছবি টাঙিয়েছে—তাদের ‘পাপ মুক্তি’র চেষ্টা মাত্র। এত বিতর্কের পরে বুঝতে পেরেছে যে ওনার ছবি ছাড়া এগোনো সম্ভব নয়। এটা যথেষ্ট নয়, তবে অন্তত কিছুটা সান্ত্বনা পাওয়া গেল।”
Leave a Reply