আর্কাদি গাইদার
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
সঙ্গে সঙ্গে যে চারজোড়া হাত আমায় চেপে ধরে ছিল তারা খসে পড়ল। আর আমি ছাড়া পেয়ে লাফিয়ে জানলার ওপর উঠলুম। ওখান থেকে এক মুহূর্তের জন্যে চোখে পড়ল ছাত্রদের ফ্যাকাশে-হয়ে-যাওয়া মুখগুলো, গুলি লেগে চূর্ণবিচূর্ণ মেঝের হলদে টালিটা আর দরজার গোড়ায় বাইবেলের কাহিনীতে বর্ণিত লটের স্ত্রীর লবণস্তম্ভে রূপান্তরিত হওয়ার মতো স্তম্ভিত-হয়ে-থাকা ফাদার গেল্লাদির চেহারাটা। বিনা দ্বিধায় দোতলা সমান উচু থেকে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়লুম। নামলুম এসে ঝলমলে লাল ডালিয়াফুলের একটা কেয়ারির মধ্যে।
ওই দিন সন্ধের অনেক পরে আমাদের বাড়ির পেছনের বাগানের দিক থেকে বৃষ্টির জল নামার পাইপ বেয়ে দোতলার জানলায় উঠলুম। বাড়ির কেউ যাতে ভয় না পায় সেজন্যে নিঃশব্দে উঠতে চেষ্টা করছিলুম, কিন্তু মা বোধ হয় আওয়াজ শুনে জানলায় এসে দাঁড়ালেন। চাপা গলায় বললেন:
‘কে? বরিস?’
‘হ্যাঁ, মা, আমি।’
‘পাইপ বেয়ে উঠছ কেন? পড়ে যাবে যে। নিচে নামো, দোর খুলে দিচ্ছি।’
‘না, মা, থাক। ঠিক উঠে যাব।’
জানলা থেকে লাফ দিয়ে ঘরের মধ্যে নেমে মা-র বকুনি আর কান্নাকাটি শোনার জন্যে তৈরি হলুম।
কিন্তু আগের মতোই নিচু গলায় মা বললেন, ‘কিছু খাবে? আচ্ছা, বোসো, সুপটা এখনও গরম আছে, তা-ই আনি।’
ভাবলুম, মা বোধ হয় কিছু জানেন না। ওঁকে চুমো দিয়ে টেবিলে বসলুম। কীভাবে ওঁর কাছে খবরটা ভাঙব তাই ভাবতে লাগলুম। বুঝতে পারছিলুম মা-র চোখ দুটো আমার দিকে আটকে ছিল। এমে অম্বন্বস্তি বোধ করতে লাগলুম। এক সময় প্লেটের কানায় চামচটা নামিয়ে রাখলুম।
তখন মা কথাটা পাড়লেন, ‘ইশকুলের ইনস্পেক্টর এসেছিলেন বাড়িতে। উনি জানালেন তোমাকে ইশকুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আরও বললেন তুই যদি তোর রিভলবারটা কাল বেলা বারোটার মধ্যে স্থানীয় রক্ষী বাহিনীর কাছে জমা না দিস তাহলে ওরাই বাহিনীকে ব্যাপারটা জানাবেন আর তারা জোর করে ওটা কেড়ে নিয়ে যাবে রিভলবারটা দিয়ে দে না, বাবা।’
Leave a Reply