একেবারে বনের ধারে এসে তবে দম নেবার জন্যে দাঁড়ালুম। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে-নিতে এক জায়গায় জড়-করা শুকনো পাতার ওপর শুয়ে পড়লুম।
মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল,ম, কেউ আমার পিছু নিয়েছে কিনা তাই দেখতে। একটা ছোট্ট স্রোত আমার পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। জড়িয়েছ কবিকার, তবে একটু উষ্ণ আর জলে ছিল শ্যাওলার গন্ধ। না উঠেই হাতেলটা ছিল পরিকার একটু জল নিয়ে খেয়ে ফেললুম। তারপর হাতে মাথা রেকের কোতোকতে একটু করলুম।
এখন কী করা? আবার বাড়ি ফেরা, কিংবা ইশকুলে যাওয়া আর সম্ভব ছিল না। আবার ভাবলুম, কিন্তু বাড়ি ফিরলেই বা ক্ষতি কী… মাওজারটা বাইরে কোথাও লুকিয়ে রেখে তো অনায়াসে বাড়ি ফেরা চলে। মা অবিশ্যি কয়েক দিন একটু রাগারাগি করবেন, তারপর সবকিছু ভুলে যাবেন। আসলে মা-রই তো দোষ, উনি ওভাবে আমার কাছ থেকে লুকিয়ে মাওজারটা নিতে গেলেন কেন?
কিন্তু কিন্তু যদি রক্ষী-বাহিনীর লোকেরা আসে? যদি বলি পিস্তলটা হারিয়ে গেছে ওরা বিশ্বাস করবে না। যদি বলি ওটা আমার নয়, তাহলে ওরা জানতে চাইবে, ওটা কার। যদি আমি কোনো কথা না বলি, ওরা সত্যিই আমায় জেলে ভরে রাখতে পারে! আচ্ছা, ফেদুকাটা কী শয়তান! ধেড়ে ই’দুর কোথাকার!
বনপ্রান্তের অল্প অল্প গাছপালার ফাঁক দিয়ে তখন রেলস্টেশনটা দেখা যাচ্ছিল।
‘কু-উ-উ-উ!’ দূর থেকে রেল-এঞ্জিনের বাঁশির আওয়াজ ভেসে এল। কাঁপা-কাঁপা শাদা ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ল গাছের মাথা-বরাবর। আর অত দূর থেকে ঠিক যেন গুবরে-পোকার মতো একটা কালোরঙের এঞ্জিন দূরের একটা মোড় ঘুরে আস্তে- আন্তে এগিয়ে আসতে লাগল।
Leave a Reply