মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:২৪ অপরাহ্ন

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত স্বাস্থ্য প্রভাব পরিমাপের লক্ষ্যে চকরিয়ায় আইসিডিডিআর,বি সেন্টার ফর ক্লাইমেট-চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ এর উদ্বোধন

  • Update Time : শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ৪.৪৫ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

চকরিয়া, বাংলাদেশ, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪: জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যের উন্নয়নের প্রচেষ্টাগুলোকে স্তিমিত করে ফেলছে যা আগামী দশকগুলোতে আরও বড় হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা, বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল এবং এর বাইরেও স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে তার পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে, আইসিডিডিআর, বি দেশের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল কক্সবাজারের চকরিয়ায় এর হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সারভেইল্যান্স সিস্টেম (এইচডিএসএস) এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা, জলবায়ু এবং পরিবেশগত তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে। আইসিডিডিআর, বি-এর বিজ্ঞানীরা এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং গর্ভপাতের হার বৃদ্ধি, অকাল জন্ম, শিশু মৃত্যু, ডায়রিয়ার মতো আন্ত্রিক রোগ এবং কিডনি রোগে মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত স্বাস্থ্যের প্রভাবগুলি বোঝার জন্য এবং এর সমাধানের উপায় অনুসন্ধান করার লক্ষ্যে আইসিডিডিআর, বি, যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় চকরিয়ায় আইসিডিডিআর, বি সেন্টার ফর ক্লাইমেট-চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ (আইসিসিএইচ) উদ্বোধন করেছে। একইসাথে ওয়েলকাম ট্রাস্টের সহায়তায় ‘মেজারিং দ্যা গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট অফ ক্লাইমেট চেঞ্জ অন হিউম্যান হেলথ ফ্রম এ লোকাল সেন্টিনেল সাইট,’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছে।

এই গবেষণাটির লক্ষ্য হল উপকূলীয় জনগণের মধ্যে আন্ত্রিক রোগ, গর্ভপাত এবং শিশুর অকাল জন্মের হার বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন নিয়ামক, যেমন সাগরের স্তরের বৃদ্ধি, মধ্যে সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করা। গবেষণাটি মূলত দীর্ঘ সময় ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের সম্মুখীন হওয়ার কারণে গাট মাইক্রোবায়োমের পরিবর্তন বোঝার ওপর কেন্দ্রিত হবে। গাট মাইক্রোবায়োম হলো মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রে বসবাসরত কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক। এই মাইক্রোবগুলির বেশিরভাগই উপকারী এবং শরীরের সঙ্গে মিথোজীবিতার মাধ্যমে কাজ করে, তবে কিছু মাইক্রোব ক্ষতিকর হতে পারে। এই গবেষণায় লবণাক্ততার পরিবর্তনের মতো পরিবেশগত কারণগুলি কীভাবে আন্ত্রিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে তা পরীক্ষা করার জন্য সমীক্ষা এবং জৈবিক নমুনা সংগ্রহ করা হবে কক্সবাজারে আইসিডিডিআর,বি-এর চকরিয়া ক্যাম্পাসে গত ১২ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে একটি সূচনা সভার মধ্য দিয়ে গবেষণা প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় যা গত ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত চলে। সভায় গবেষণা প্রকল্পের সাথে আসংশ্লিষ্ট আইসিডিডিআর,বি ও স্যাঙ্গার ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী, গবেষক, বায়োইনফর্ম্যাটিশিয়ান, ইনফর্ম্যাটিশিয়ান এবং পরিসংখ্যানবিদরা অংশগ্রহণ করেন। সভায় কাজের প্রবাহ নির্ধারণ, দলের বিভিন্ন ভূমিকা নির্ধারণ, সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা এবং এই দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রকল্পের জন্য জনগোষ্ঠীর সাথে সংযোগের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আইসিডিডিআর,বি-এর নির্বাহী পরিচালক ড তাহমিদ আহমেদ বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষত লবণাক্ততা বৃদ্ধি স্বাভাবিক গাট মাইক্রোবায়োটার এবং অন্ত্রের বাস্তুসংস্থানকে কীভাবে ও কতটা বিঘ্নিত করতে পারে তা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। আমরা আইসিসিএইচ থেকে ভবিষ্যৎ পর্যবেক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছি, যা জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রভাবের জন্য আরও কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে সহায়ক হতে পারে ।”

ড মনজুর আহমেদ হানিফি, সায়েন্টিস্ট, আইসিডিডিআর,বি এবং প্রকল্পের প্রধান গবেষক বলেন, “এই গবেষণায় চকরিয়া এইচডিএসএস এলাকায় ৩০ মাস ধরে ১,০০০ মানুষের স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য বৈচিত্র্য এবং পুষ্টি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এই তথ্যগুলো বিদ্যমান জলবায়ু এবং পরিবেশগত তথ্যের সাথে একত্রিত করে এই অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন করা হবে। প্রাপ্ত ফলাফলগুলি উপকূলীয় এলাকায় নীতিমালা তৈরিতে, বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে, সহনশীলতাকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যৎ গবেষণার দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। এই ফলাফলগুলির দ্বারা বাংলাদেশের উপকূলীয় জনসংখ্যা এবং বিশ্বের অন্যান্য একই ধরনের জনগোষ্ঠীর উপকৃত হবে”।

নিকোলাস থমসন, হেড অফ প্যারাসাইটস এবং মাইক্রোবস প্রোগ্রাম, স্যাঙ্গার ইন্সটিটিউট এবং গবেষণার সহ-প্রধান গবেষক প্রফেসর বলেন, “এই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন রোগের অস্বাভাবিক কিছু ধারা দেখা গিয়েছে যা পরিবেশ এবং আমাদের শরীরে পরিবর্তনের সংযোগের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এই সমস্যাগুলোকে আরও ভালোভাবে বুঝতে আইসিডিডিআর,বি-এর এই জনগোষ্ঠীর  সাথে কয়েক দশকের গবেষণা কার্যক্রম ও সম্পৃক্ততার সাথে আমরা এখানে আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণাকে একত্রিত করবো । চকরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা বিশ্বের অন্যান্য জনগোষ্ঠী কেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একই ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে তা বুঝতে এবং তাদের জন্য প্রতিকারমূলক সমাধান তৈরি করতে সাহায্য করবে।”

চকরিয়ায় এই আইসিসিএইচ ভবিষ্যতের গবেষণা কার্যক্রমসমূহে নেতৃত্ব দেবে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর স্বাস্থ্য প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকর সমাধান প্রদান করবে এবং জলবায়ু ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীকে উপকৃত করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024