সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
১. বিনিয়োগে অস্থিতিরতা
২. ইউরোপীয় বাজারে রফতানি অর্ধেকে নেমে আসা
৩. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
৪. দামের কারণে ভোগ্য পন্য থেকে ক্রেতা সরে আসা
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক মূল্যায়নে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করে চলতি অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৪.১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এটি পূর্ববর্তী তুলনায় ১.৬ শতাংশ কম। এই হ্রাসের কারণ হিসেবে বহুবিধ প্রতিকূলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্য অন্যতম ইউরোপীয় বাজারে রফতানি কমেছে গত কয়েক মাসে অর্ধেকেরও বেশি।
২০২৪ সালের জুন মাসে, ওয়াশিংটনভিত্তিক এই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫.৭ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল।
জুলাই-আগস্ট মাসের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ এবং শিল্প কার্যক্রম স্থবির থাকায়, ২০২৫ অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ৪.১ শতাংশ হতে পারে বলে বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস (জিইপি) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে, আগামী ২০২৬ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতির পূর্বাভাস দিয়েছে। তখন প্রবৃদ্ধি ৫.৪ শতাংশে উন্নীত হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আর্থিক খাতের সফল সংস্কার, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি এবং বাণিজ্য বৃদ্ধিকে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “মূল্যস্ফীতি কমার ফলে আগামী মাসগুলোতে ব্যক্তিগত ভোগব্যয়ের পরিমাণ বাড়বে।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ইতোমধ্যে অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। তারা জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ১.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি গত ১৫ প্রান্তিক বা প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
২০২১ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (কিউ২) যখন করোনাভাইরাসের প্রভাব সবচেয়ে খারাপ ছিল, তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন ০.৯৩ শতাংশে পৌঁছেছিল।
বাংলাদেশ সরকার এক মাস আগে তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৬.৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.২ শতাংশ করেছিল।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস প্রবৃদ্ধি হ্রাসের প্রধান কারণ।
মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমানের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। এর পেছনে আগের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিকূল প্রভাব উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকার চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
সরবরাহের সীমাবদ্ধতা, জ্বালানি সংকট এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা শিল্প কার্যক্রম দুর্বল করেছে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়িয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে।
“উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে, ফলে সেবাখাতের প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়েছে,” প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের (এসএআর) বিষয়ে, বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশে উন্নীত হবে। এটি প্রধানত ভারতের দৃঢ় প্রবৃদ্ধির কারণে সম্ভব হবে। তবে এটি ২০০০-১৯ সালের দীর্ঘমেয়াদী গড়ের চেয়ে কম থাকবে।
ভারত ছাড়া এসএআর-এ প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালে ৪ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ৪.৩ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় যুব বেকারত্ব উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে দক্ষ কর্মীদের সীমিত কর্মসংস্থানের সুযোগের কারণে অভিবাসন বেড়েছে।
“দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে দুর্বল প্রবৃদ্ধি বাইরের অঞ্চলগুলোর তুলনায় কম প্রভাব ফেলবে, কারণ বাণিজ্য খোলামেলা কম এবং অবকাঠামোগত সংযোগ সীমিত,” প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী।
Leave a Reply