সত্যেন্দ্রকুমার বসু
সুচুয়ানের রাজধানী চেংটু শহরে আরও অনেক পলাতক সন্ন্যাসী ও পণ্ডিতদের সঙ্গে তাঁদের দেখা হল। কুঙ হুইসসস্থর মঠে এঁদের সঙ্গে হিউএনচাঙ নানা বৌদ্ধশাস্ত্র পাঠ করে দু-তিন বছর কাটালেন। যে কোনো বিষয় একবার পড়লেই তিনি অধিগত করতে পারতেন। তাঁর অসাধারণ শাস্ত্রজ্ঞান ও বিচারশক্তির খ্যাতি দেশময় রাষ্ট্র হল। যদিও তিনি মহাযান সূত্রগুলির দিকেই বেশি আকৃষ্ট ছিলেন তবু হীনযানের অভিধর্ম- কোষশাস্ত্র ইত্যাদিও অধ্যয়ন করেন।
এইজন্যেই মধ্য এশিয়া আর ভারতবর্ষ পর্যটনের সময়ে তিনি নানা মতাবলম্বী পণ্ডিতদের সঙ্গে যে অসংখ্য বিচার করেন সেসব বিচারে সকল বৌদ্ধশাস্ত্রেরই বচন উদ্ধার করবার শক্তি থাকায় তিনি অসাধারণ পাণ্ডিত্যের আর বিচারশক্তির পরিচয় দিতে সক্ষম হন।
কুড়ি বৎসর বয়সে হিউএনচাঙ সম্পূর্ণরূপে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। এই সময় থেকে তিনি ‘ধর্মগুরু’ নামে পরিচিত হন। সুচুয়ান ত্যাগ করে এখন তিনি নতুন রাজবংশের রাজধানী চাং-আনে আসেন। এর পাঁচ শত বৎসর আগে কাশগর ও ভারতের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এখানে মঠ স্থাপন ক’রে মহাযান ও হীনযানের অসংখ্য ধর্মগ্রন্থ সংস্কৃত থেকে চীন ভাষায় অনূদিত করতে আরম্ভ করেছিলেন।
হিউএনচাঙের সময়েও এখানে বৌদ্ধশাস্ত্রের অনেক উপদেষ্টা ছিলেন কিন্তু এঁরা সকলে এক মতাবলম্বী ছিলেন না। প্রত্যেকেই একটা আলাদা মতের অনুসরণ করতেন। হিউএনচাঙের জীবনীলেখক বলেন, ধর্মগুরু বুঝতে পারলেন যে, এইসব পণ্ডিতদের প্রত্যেকেই বিশিষ্ট জ্ঞানী ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন শাস্ত্রের সঙ্গে এঁদের মতবাদ মিলিয়ে দেখতে চেষ্টা করলেন তখন দেখলেন যে, নানা শাস্ত্রের নানা মত। কোন্টা খাঁটি তা বোঝা অসম্ভব হল। তখন তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, তিনি পশ্চিমদেশে (ভারতবর্ষ) পর্যটন করে নিজের সন্দেহ ভঞ্জন করবেন।
চলবে
Leave a Reply