মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫৬ অপরাহ্ন

কয়েক মিলিয়ন করদাতা কমেছে, রাজস্ব আদায়ের এ দশা কেন

  • Update Time : শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ৪.৩৬ পিএম

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বাংলাদেশের কর ব্যবস্থার কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং নীতিগত ফাঁকের সমন্বিত প্রতিফলন। দেশটি পরোক্ষ কর, যেমন ভ্যাটের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল। এটি একটি পশ্চাদগামী ব্যবস্থা তৈরি করে, যেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের আয়ের তুলনায় ধনীদের চেয়ে বেশি কর প্রদান করে। বর্তমানে বাংলাদেশের করদাতাদের মধ্যে মাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশ কর রিটার্ন জমা দেয়। ২০২৪ সালে যেখানে ১০.২ মিলিয়ন টিআইএন নম্বর ইস্যু করা হয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাত্র ৪.৩ মিলিয়ন করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এই ব্যবধান দূর করা বাংলাদেশের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধি এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা

বাংলাদেশের কর ব্যবস্থার সংস্কারে বিশ্বজুড়ে সফল মডেলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার। উদাহরণস্বরূপ, ছোট ও মাঝারি ব্যবসার (এসএমই) জন্য একটি সহজ কর পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে কর কাঠামো উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে, যে সব দেশে উদ্ভাবনী ডিজিটাল টুলগুলো কর সংগ্রহ সহজতর করেছে, ফাঁকফোকর কমিয়েছে এবং স্বচ্ছতা বাড়িয়েছে।

ভারতে প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনের ব্যবহার কর প্রক্রিয়াগুলোকে সহজতর করেছে এবং সম্মতি বাড়িয়েছে। গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) চালু করে একটি খণ্ডিত কর ব্যবস্থাকে একীভূত করা হয়েছে, যা ব্যবসাগুলোর জন্য কর প্রদানে সহজতর করেছে। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একইভাবে ডিজিটাল টুলগুলো ব্যবহার করে তার সিস্টেম আধুনিক করতে এবং ফাঁকফোকর কমাতে পারে।

অন্যদিকে নেপাল দেখিয়েছে কর সংগ্রহে সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ কতটা কার্যকর হতে পারে। কর সংগ্রহের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারগুলোর কাছে হস্তান্তর করে নেপাল স্বচ্ছতা বাড়িয়েছে এবং নাগরিকদের মধ্যে বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের জন্য, বিশেষ করে ঢাকায় এবং চট্টগ্রামের মতো শহরে যেখানে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি প্রাধান্য পায়, করদাতাদের সাথে জড়িত হতে পৌরসভাগুলোকে ক্ষমতায়িত করা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। স্থানীয় এলাকাগুলোর জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্রোগ্রাম এবং শিক্ষামূলক প্রচারণা এই শহরগুলোতে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য একটি রোডম্যাপ

বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা সংস্কারে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যা ন্যায্যতা, দক্ষতা এবং বিশ্বাসকে অগ্রাধিকার দেবে।

১. কর নেট সম্প্রসারণ

আয়কর নেট সম্প্রসারণ অপরিহার্য। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) পরামর্শ দেয় যে, যদি বাংলাদেশের সব যোগ্য ব্যক্তি তাদের বৈধ কর প্রদান করেন, তাহলে আয়কর রাজস্ব জিডিপির ১% থেকে বাড়িয়ে ৩.১% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। ঢাকায় এবং চট্টগ্রামের মতো শহরগুলোতে করদাতাদের চিহ্নিত করতে একটি কেন্দ্রীভূত প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

২. সরাসরি করের দিকে নজর

বর্তমান ৩৫% থেকে সরাসরি করের অংশ ৭০% পর্যন্ত বাড়ানো একটি বড় নীতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন। এই বছর সরকার সব সরকারি করদাতাদের জন্য অনলাইনে কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে। এই নীতির সফল প্রয়োগ এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

৩. করদাতার সেবার মানোন্নয়ন

কর দাখিল প্রক্রিয়া সহজ এবং স্বচ্ছ করা প্রয়োজন। ই-ফাইলিং সিস্টেম এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করা উচিত, যাতে করদাতারা সহজেই কর জমা দিতে পারেন।

৪. এনবিআর আধুনিকীকরণ

এনবিআর-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ। এতে কর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, স্বয়ংক্রিয় নিরীক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ডেটা বিশ্লেষণের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত।

৫. গণ-আস্থা অর্জন

জনগণকে কর প্রদান করতে উদ্বুদ্ধ করতে হলে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। কর রাজস্বের ব্যবহার সম্পর্কে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা—যেমনটি নেপালে করা হয়—নাগরিকদের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে।

সব থেকে বড় প্রয়োজন

কর প্রদানের বিনিময়ে রাষ্ট্র যে নাগরিককে সুবিধা দিচ্ছে তার সেটা দৃশ্যমান করতে হবে। একজন করদাতা কি এ দেশে সরকারের কাছ থেকে কোন চিকিত্‌সা বা শিক্ষা সুযোগ পায়? করদাতা যতক্ষণ  প্রত্যক্ষ সুযোগ না পাবে ততক্ষণ কর দিতে সে প্রকৃত অর্থে আগ্রহী হবে না যেমনটি পশ্চিমা দেশগুলোতে হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024