সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
১. ২৫ সালের জানুয়ারি অবধি নিট ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১৫,৭৫৯ কোটি, আগের অর্থ বছরে এ সময়ে ছিলো ৭৭৮.৩০ কোটি
২. উচ্চ সুদের হার এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারি খাত এখন ঋণ নিতে আগ্রহী নয়।
৩. বেশিরভাগ সরকারি প্রকল্প এখন স্থবির অবস্থায় রয়েছে, যার কারণে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো তহবিল ছাড়ছে না। এছাড়া, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ব্যাঘাতের কারণে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি।
৪. সরকারের ফোকাস যে অর্থনীতিতে তারও সঠিক প্রমান মিলছে না।
দুর্বল কর সংগ্রহ, বেসরকারি খাতের ধীর ঋণ প্রবাহ এবং গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে সামগ্রিক অর্থনৈতিক চরম মন্দার ফলে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে,নিট ব্যাংক ঋণ হিসাব করা হয়, সরকারের ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত দেওয়া ঋণের পরিমাণ বাদ দিয়ে।
এফওয়াই ২৫ সালের জানুয়ারি ২২ পর্যন্ত, সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৫,৭৫৯ কোটি টাকা, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ঋণাত্মক ৭৭৮.৩০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এই বৃদ্ধি ঘটেছে।
তবে, এফওয়াই২৫-এ নির্ধারিত লক্ষ্য ১,৩৭,৫০০ কোটি টাকার তুলনায় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বৃদ্ধি ধীর গতিতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি ২২ পর্যন্ত সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রায় ৭৪,৪২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এবং একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৫৮,৬৬১ কোটি টাকার কিছু বেশি পরিশোধ করেছে।
সাধারণত সরকার ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাক্ষণকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণদান স্থগিত করায় সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি যোগ করেন যে, উচ্চ সুদের হার এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারি খাত এখন ঋণ নিতে আগ্রহী নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ নভেম্বর মাসে কমে ৭.৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা মে ২০২১ এর ৭.৫৫ শতাংশের পর থেকে সর্বনিম্ন।
ফলে বেসরকারি খাত ঋণ নিতে আগ্রহী না হওয়ায়, ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তহবিল রয়েছে এবং তারা সরকারের ট্রেজারি বিল এবং বন্ডে বিনিয়োগ করতে অত্যন্ত আগ্রহী।
সরকারের অর্থের বড় প্রয়োজন রয়েছে, যা জরুরি ভিত্তিতে দরকার, বলেছেন একজন সরকারি ব্যাংকের এমডি ও অর্থনীতিবিদ। তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ সরকারি প্রকল্প এখন স্থবির অবস্থায় রয়েছে, যার কারণে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো তহবিল ছাড়ছে না। এছাড়া, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ব্যাঘাতের কারণে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি।
ওই ব্যাংকার আরো বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে উচ্চ ঋণ নিলেও বেসরকারি খাতে এর প্রভাব কম পড়বে, কারণ এই মুহূর্তে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা আগ্রহী নয়। তারা এখন অনেকে ব্যবসা গুটাচ্ছে অনেকে ওয়েট এন্ড সি পলিসিতে আছে। আবার কেউ কেউ এই সরকারকে শিল্প ও ব্যবসা বান্ধব মনে করছে না।
একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, সরকার তার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং বিদেশি তহবিলের প্রবাহও ধীর হয়ে গেছে, ফলে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক, এন বি আর এর একজন প্রাক্তন চেয়ারম্যান বলেন, এর চেয়েও খারাপ হলো, এফওয়াই২৫-এর জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১,৫৬,৪৪২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা বছরের ভিত্তিতে ০.৯৮ শতাংশ হ্রাস দেখায়। ফলে সরকার সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংকিং খাতের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।নতুন কোন পথ সরকার খুঁজছে বলে দৃশ্যমান নয় এমনকি সরকারের ফোকাস যে অর্থনীতিতে তারও সঠিক প্রমান মিলছে না।
Leave a Reply