সারাক্ষণ রিপোর্ট
বর্তমান বোরো মৌসুম, যা ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়, সারের ক্রাইসিসই কৃষকদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিক্রেতারা সরবরাহের ঘাটতির অভিযোগ করায়, ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি), এবং মিউরিয়েট অব পটাশ (এমওপি) সহ প্রতিটি কিলোগ্রাম রাসায়নিক সারের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
খুলনার পাইকগাছার মুকুল সরকার এবং ওই উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের ছোট আফিলউদ্দিন বলেন, তারা গত সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার ৩০ টাকায় এবং টিএসপি ৩৫ টাকায় কিনেছেন, যা সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকার চেয়ে অনেক বেশি।
এছাড়া, তাদের প্রতি কেজি ডিএপি ২১ টাকায় এবং এমওপি ২০ টাকায় পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই দামে তারা পাচ্ছেন না।
সারে ভর্তুকি উৎপাদন খরচ কম রাখা, খাদ্য উৎপাদন সহজতর করা, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষা করা এবং ভোক্তাদের আয় নির্বিশেষে খাদ্য ক্রয় সক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য প্রদান করা হয়।
কিন্তু এখন, প্রধান উৎপাদন উপকরণের উচ্চ মূল্য ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করছে।
“ কিন্তু এখন কৃষিতে উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে আমাদের মতো ছোট কৃষকদের জন্য ব্যবসা টিকিয়ে রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে,” বলেন নওগাঁর কাসেম, যিনি হাজার হাজার কৃষকের একজন, যারা বছরের পর বছর ধরে তাদের উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বাড়তে দেখেছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাসে খাদ্যসহ শ্রম খরচ ছিল ৫৪৪ টাকা, যা আগের বছরের জুলাই মাসে ছিল ৫১১ টাকা।
২০২৩ সালে, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি, এবং এমওপি সারের মূল্য প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়েছে, যা তারও কিছু আগে প্রতি কেজিতে ৬ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের জন্য, সরকার মোট ৫৯ লাখ টন ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এবং এমওপি সারের প্রয়োজন অনুমান করছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি।
রাসায়নিক সার মূলত শুকনো মৌসুমের ধান, স্থানীয়ভাবে বোরো নামে পরিচিত, যে ধান মে মাসে সংগ্রহ করা হয়, ওই ধান উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
কৃষকরা বোরো মৌসুমের ধান উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সারের প্রায় ৬০ শতাংশ ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চার মাসে প্রয়োগ করেন, বলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তবে, অনেক কৃষক প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না এটা স্বীকার করেন নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক একজন কৃষি কর্মকর্তা।
দিনাজপুর যা দেশের অন্যতম ধান উ পাদন এলাকা সেখানকার এক গ্রামের কৃষক মো. কলিমুল্লাহ, যিনি ছয় বিঘা জমিতে বোরো চাষ করছেন, তিনি তার এলাকার এক ডিলারের কাছ থেকে সার কিনতে পারেননি কারণ তার স্টক শেষ হয়ে গেছে।
তিনি একজন খুচরা বিক্রেতার কাছে যেতে বাধ্য হন, যেখানে তিনি ৫০ কেজি টিএসপি ব্যাগের জন্য ১,৫৫০ টাকা (প্রতি কেজি ৩১ টাকা) এবং ৫০ কেজি ডিএপি ব্যাগের জন্য ১,২০০ টাকা (প্রতি কেজি ২৪ টাকা) দাম নেন তার কাছ থেকে।
ওই কৃষক বলেন, “আমাদের মতো কৃষকরা সারের উচ্চ খরচ, কীটনাশক, এবং নিজ শ্রম সহ শ্রমের মূল্য ব্যয় করে আমরা আমাদের ফসলের জন্য ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না, কারণ ফসল লাগাতে খরচ হয়ে যাচ্ছে অনেক বেশি ।”
একই জেলার বিরল উপজেলার পুলিন একই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।সে তুলনামূলক বড় চাষী। তার জমির পরিমান ১০ বিঘার বেশি। তাই তার সংকটও আরো বেশি।
তিনি বলেন, সারের দাম সাধারণত উচ্চ চাহিদা এবং সীমিত সরবরাহের সময় বৃদ্ধি পায়।
” তিনি বলে আমি সম্প্রতি চারব্যাগ টিএসপি কিনেছি সাত হাজার টাকা দিয়ে। টাকা পরিশোধ এর যদিও সরকারী মূল্য পাঁচ হাজার চার’শ টাকা,” ।
তিনি আরও বলেন, তার এলাকার ডিলাররা সাধারণত অতিরিক্ত চার্জ করেন না, তবে খুচরা বিক্রেতারা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি চার্জ করেন বলে অভিযোগ করেন।
“আমরা বিকল্প না থাকায় উচ্চ মূল্যে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছি। ডিলাররা প্রায়ই পরিবহন খরচ বা কম সরবরাহকে মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন,”
অবশ্য বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) একজন কর্মকর্তা জানান, “আমরা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ পাচ্ছি। বোরো মৌসুমে সারের সংকটের কোনো সুযোগ নেই।
Leave a Reply