সারাক্ষণ রিপোর্ট
সাংরাশ
১. ২০১৩-১৪ সালের পরে এ বছর কৃষক পর্যায়ে সবজির দাম সব থেকে কম
২. ভেজাল তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ -১৯০ টাকায়
৩. রাজধানীতে মোটা চাল ৬০-৬২ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৬৮-৭২ টাকা এবং উন্নতমানের চাল ৮৫-৯৮ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
৪. পেঁয়াজ কৃষকদের কাছে ১৮-২৬ টাকা প্রতি কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।
সবজির দাম এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে, যা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও কৃষকদের জন্য উদ্বেগজনক। বিশেষ করে আলু ও বিভিন্ন সবজির বাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে, যা ২০১৩-১৪ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন বলে জানিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর
কৃষি অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী কৃষক পর্যায়ে এই অস্বাভাবিক কম ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ফুলকপি সর্বোচ্চ ৬ টাকা প্রতি পিস, মূলা ৪ টাকা প্রতি কেজি, টমেটো ১০-১২ টাকা, শসা ৮-১০ টাকা, শালগম ৮-১২ টাকা, শিম ১৪-২২ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ১৮-৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
গত সপ্তাহে বাজারে ফুলকপির দাম রিকশাভ্যানে পরিবহনকারী বিক্রেতারা মাত্র ১০ টাকায় বিক্রি করেছেন, যেখানে কাঁচা বাজারে এর দাম ছিল ১৫-২৫ টাকা প্রতি পিস। একইভাবে বাঁধাকপি, মূলা, টমেটো, শিম, শালগমসহ অন্যান্য সবজির দামও ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে।
মূলার দাম প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা, শালগম ২৫-৩০ টাকা, টমেটো ও শসা ৩০-৪০ টাকা, শিম ৩০-৫০ টাকা, ধনেপাতা ৬০-৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০-৮০ টাকা, এবং পাতা সবজি প্রতি আঁটি ৫-১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ঢাকার বাজারে আলুর দাম বর্তমানে ২০-৩০ টাকা প্রতি কেজি, তবে উৎপাদনকারী জেলাগুলিতে এটি মাত্র ১০-১২ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম মানভেদে ৩৫-৫০ টাকা প্রতি কেজিতে নেমে এসেছে, যেখানে কৃষকদের কাছে এটি ১৮-২৬ টাকা প্রতি কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।
মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারের বিক্রেতা মোহাম্মদ খোরশেদ জানান, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে সবজির দাম তুলনামূলক অনেক বেশি ছিল। তখন আলুর দাম ছিল ৮০ টাকা প্রতি কেজি এবং টমেটো ২৬০-৩০০ টাকা প্রতি কেজি পর্যন্ত উঠেছিল।
অস্থায়ী সরকার আলুর বাজারে হস্তক্ষেপ করে আমদানি শুল্ক কমানো এবং ২ লাখ টন আলু আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর থেকেই দাম পড়তে শুরু করেছে। সরকার সম্প্রতি আলু আমদানির জন্য আরও নয়টি স্থলবন্দর উন্মুক্ত করেছে, যা বাজারে আরও প্রভাব ফেলছে।
এদিকে, দেশীয় সবজি, আলু এবং পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। চলমান রবি মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি) ১ কোটি ৪১ লাখ টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
সবজি উত্পাদক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞতা না থাকায় এক ধরনের নার্ভাসনেস থেকে তারা ভবিষ্যত চিন্তা না করে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কৃষকদের সর্বশান্ত হ বার পথে ঠেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের দাম তলানিতে নেমেছে, অথচ আমদানিকারকদের হাতে থাকা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছেই। গম, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল এবং চালের দাম কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন অন্তত ৫০০ আমদানিকারককে বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এমন একজন বলেন, সবজি চাষিদের জন্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি, কারণ তারা জাতীয় খাদ্য উদ্বৃত্তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তিনি প্রস্তাব করেন, ২০ লাখ সবজি চাষিকে ৫০০০ টাকা নগদ সহায়তা প্রদান করা উচিত।
এছাড়াও, সবজি ও অন্যান্য নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্যের জন্য মানসম্মত কোল্ড স্টোরেজ ও কুল চেইন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
অন্যদিকে ভোজ্যতেলের বাজারে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ পরিশোধকরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, ফলে রাজধানীর অনেক মুদি দোকানে সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল তেল ১৮৫-১৯০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছে, যেখানে খোলা সয়াবিন তেল ১৮০-১৮৫ টাকা এবং পাম তেল ১৭৫-১৮০ টাকা প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের সাথে সমঝোতার পর গত ১৬ ডিসেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা ৮ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র দুই-তিন সপ্তাহ পর থেকেই সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, যা ভোক্তাদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, চাল, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং চাষের মাছের দাম আগের উচ্চ পর্যায়েই রয়ে গেছে। রাজধানীতে মোটা চাল ৬০-৬২ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৬৮-৭২ টাকা এবং উন্নতমানের চাল ৮৫-৯৮ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
Leave a Reply