স্বদেশ রায়
রবীন্দ্রসঙ্গীত! তুমি রাজপথে আমার বোনের কন্ঠে
হয়েছিলে তুমুল স্বাধিকারের শ্লোগান!
যা বসন্তের পাতা ঝরা দিনকে করেছিলো
উম্মাদ এক লাল পলাশের সকাল ও বিকেল।
শিমুল আর রক্ত কররীর ডালে ডালে ধ্বনিত হয়েছিলো
আমার বোনের কন্ঠ।
রবীন্দ্র সঙ্গীত! তুমি সুর ও বানী ছেড়ে
কখন যে অবলীলায়
আমার বুকের ভিতর জন্ম নিয়েছিলে
স্বাধীনতার মহা ঐন্দ্রজালিক অস্ত্র,
গোটা আঁকাশ কাপিয়ে দেয়া বজ্র-
সে ভারে আমার বুক হয়নি ভারী
বরং পেয়েছিলো তেজি খুরের ক্ষীপ্র গতি
আর শত্রু হননের তীক্ষ্ম দুর্বার আঘাতের শক্তি।
রবীন্দ্র সঙ্গীত! তুমি ত্বনী নারীর বিলোল কটাক্ষ’র
মতো ভালোবাসা আর অসীম আত্মদানের
আহবান নিয়ে ঢুকে গিয়েছিলে-
মুক্তিযোদ্ধার স্টেনগান আর গ্রেনেডে শত্রুহননের বারুদ হয়ে।
রবীন্দ্র সঙ্গীত! তুমি আমার সশস্ত্র বিজয়ী বোন হয়ে
আকাশের দিকে গুলি ছুটতে ছুটতে ফিরে এসেছিলে,
এক নতুন পতাকার মত অপার সৌন্দর্য নিয়ে- আমার রাস্তায়,
আমার ধান ক্ষেতে, আমার উদাসী বুড়ী নদী মাতাদের বুকে বুকে।
রবীন্দ্র সঙ্গীত! তুমি জনকের দেহের মত উপুড় হয়ে লুটিয়ে পড়ো শেষে বাংলার পলল ভুমিতে-
আর তখন আমি রাতে শরীর ভাড়া খাটানো মেয়ের মত
শুস্ক মুখে তাকিয়ে দেখেছি- কিছু পাগল তরুণ করুণ চোখে
রাস্তায় রাস্তায় তোমাকে কন্ঠে নিয়ে ফিরেছে-
আর যারা স্বাস্থ্যবান তারা আমার শরীরে লোভাতুর চোখে তাকিয়ে
বিরক্ত স্বরে বলেছে, “ওরা ওখানে কি চিৎকার করে” ?
আমি ম্লান কন্ঠে উত্তর দিয়েছি, “রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইছে”-
ওদের একদল আমার দিকে আরো লোলুপ দৃষ্টি রেখে-
নির্বিকার মুখে বলেছে “ আচ্ছা গেয়ে যাক ওরা”।
আরেক দল আমার শরীর নিরিবিলি পাবার জন্য কোটালদের বলেছে
“ রাস্তা থেকে তাড়িয়ে দেও ওদের” ।
রবীন্দ্র সঙ্গীত!আমি আবার ক্ষীন দৃষ্টি’র চোখে দেখতে পাচ্ছি
তোমাকে কন্ঠে তুললে- সপ্তাহ , মাস বা বছরান্তে কোন চক্রবৃদ্ধি সুদ নেই-
তাই সুদহীন, লাভহীন এক অপরাজেয় তুমি আজ-
অপাঙক্তেয় গাভীর মতো এ গোয়ালে-
চলে যাও তুমি, চলে যেতে পার
দূর কোন গভীর কোন জঙ্গেলে- যেখানে পাতারা তোমার
স্বরে কাঁপবে, পাখিরা নেবে কন্ঠে তুলে।
Leave a Reply