শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন

অনেক এনজিও, প্রকল্প—এগুলোতে কী কী ব্যয় হয়, কোথায় যায়, তথ্য চাইলে আগে দিত না

  • Update Time : শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ৪.৫৭ পিএম
  • আমেরিকার পররাষ্ট্র সচিবের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার

মেগিন কেলি “ দ্য মেগিন কেলি শো” তে দেয়া সাক্ষাৎকার

সারাংশ

. আমার মনে হয়বিগত কয়েক বছরে পররাষ্ট্র দপ্তর ধীরে ধীরে পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্র থেকে সরে গিয়েছিলঅনেক কারণে।

. আমার ধারণাআমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য হলো মার্কিন জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও এগিয়ে নেওয়া। চীন নিজেদের স্বার্থ দেখেরাশিয়া নিজেদের স্বার্থ দেখেচিলিও তাদের স্বার্থ দেখেআমাদেরও তাই করা উচিত। যেখানে স্বার্থ মেলেসেখানেই মিত্রতাযেখানে স্বার্থ সংঘাতময়সেখানেই কূটনীতি দিয়ে সংঘাত এড়িয়ে চলা।

. আমি নিশ্চিতভাবে বলবআগের মূল্যায়ন সঠিক নয়। বাইডেন প্রশাসনের সময় স্টেট ডিপার্টমেন্ট আর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি)-র মধ্যেই বিরোধ ছিলডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যেও ফাটল ছিল।

. আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে সরে আসাই পুতিনকে সুযোগ দিয়েছিল আমাদেরকে দুর্বল বা অমনোযোগী ভাবতে।

. ট্রাম্পের অধীনে পররাষ্ট্রনীতি সহজকারণ সবাই জানে উনি যা বলেনতা-ই করেন। এতে আমার কাজও সহজ হয়।

.চায়নার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি বলেছি: তোমরা তোমাদের স্বার্থ দেখবেআমরা আমাদের। আমরা বড় দুই শক্তি। যেখানে মিল হবেকাজ করতে পারিযেখানে অমিলচেষ্টা করব সংঘাত এড়াতে। কিন্তু আমাদের স্বার্থে যা করা দরকারকরব।

. আমি বলতে পারিচার প্যানামা খালে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে পারবপশ্চিম গোলার্ধে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

.ইউক্রেন প্রসঙ্গে রুবিও- “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেনএখানে আলোচনাই সমাধান্”

এক ডলারের মধ্যে ১২ সেন্ট প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছালে বাকি ৮৮ সেন্ট কোথায় যায়?


প্রশ্ন: মাননীয় সচিবআপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য।

সচিব রুবিও: ধন্যবাদ। সচিব” শব্দটা শুনে এখনো একটু অদ্ভুত লাগেতবে ধন্যবাদ।

প্রশ্ন: তাই তোতাই নাএখন পর্যন্ত এক সপ্তাহ হলো?

সচিব রুবিও: আট দিন হলোযদিও আমি গুনছি না। বলছি কেবল আট দিন। হ্যাঁআট-নয় দিন।

প্রশ্ন: আজ অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইসিনেটের কাজ আর এখনকার কাজের পার্থক্য, “ডিপ স্টেটের” কেন্দ্রে থাকার অভিজ্ঞতাকিন্তু প্রথমে বিমান দুর্ঘটনার কথা বলি। খুবই মর্মান্তিক।

সচিব রুবিও: একদম। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলেএটা সত্যিই হৃদয়বিদারক। এসব মানুষ অবতরণের প্রায় মুহূর্তেই ছিলেনযেমন আমরা অনেকেই কখনো কখনো করিনামার আগে ফোনে সংযোগ হয়নামার প্রস্তুতি নেই। অথচ হঠাৎ এমন একটা ঘটনা ঘটলযা অকল্পনীয়। এটা খুবই মর্মান্তিক। আর ভুলে গেলে চলবে নাতাতে আমাদের কিছু সার্ভিস সদস্যও ছিলেনযারা দেশের দায়িত্ব পালনকালে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

এটা সরাসরি পররাষ্ট্র দপ্তরের কাজ নয়তবে এ ধরনের ঘটনার সময় প্রথম দায়িত্ব হলো যারা মারা গেছেন তাদের সম্মান জানানো এবং পরিবারগুলোর বেদনা অনুধাবন করা। দ্বিতীয় কাজ হলো কেন এমনটা ঘটলতার কারণ বের করাযাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে। খুবই ব্যস্ত একটা বিমানবন্দরপ্রতিদিন প্রচুর ফ্লাইট ওঠানামা করেসুতরাং এটা অবশ্যই ভাববার বিষয়। স্বজনহারাদের ব্যক্তিগত গল্প জানলে বিষয়টা আরও বেদনাদায়ক হবে।

প্রশ্ন: এটা কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তিদের দ্রুত নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে?

সচিব রুবিও: হ্যাঁবিশেষত সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে। আসলে কোথাও একটা ব্যর্থতা ঘটেছে। রাজধানীর মতো একটা জায়গায়যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দরেএকটি হেলিকপ্টার আর উড়োজাহাজের সংঘর্ষ ঘটবেএটা তো স্বাভাবিক নয়। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। তাই কারও নেতৃত্বে তদন্ত করে বের করতে হবে সমস্যাটা কীএবং আবার এমন না ঘটে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়পরিবহন বিভাগকী জানি আরও কতগুলো দপ্তর জড়িতএবং প্রতিটি দপ্তরেই নেতৃত্ব প্রয়োজন। সেই নেতৃত্ব ছাড়া সঠিক সিদ্ধান্ত আর দ্রুত সাড়া আসবে না।

প্রশ্ন: হ্যাঁঈশ্বর না করুক কোনো আন্তর্জাতিক সংকট দেখা দিলেআপনাকে দায়িত্বে বসানো হয়েছেকিন্তু তুলসির (নিয়োগ) প্রক্রিয়া হয়তো আরও সময় নেবেআর কিছুটা সময়ক্ষেপণ তো হয়েই যাচ্ছে।

ঠিক আছে। আপনি এখন আট দিন হয়ে গেল কাজে। সিনেটর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পার্থক্য কী সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছে?

সচিব রুবিও: প্রথমতআমার বস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। একটা উদাহরণ দিই: এই সপ্তাহান্তে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হঠাৎ ভোর চারটায় একটি সিদ্ধান্ত নেনআমাদের সাথে লিখিত চুক্তি থাকা সত্ত্বেওতাঁদের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার জন্য যে বিমান পাঠানো হয়েছিলতিনি সেটি ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। বিমানটা তখন অর্ধেক পথ পার হয়ে গেছেঅন্যটা appena ছেড়েছে। সাধারণত মার্কিন প্রশাসনে এমন ঘটনায় পলিসি অপশন” মিলিয়ে দুই-আড়াই বছর লেগে যেত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল।

সিনেটে একধরনের ক্ষমতা আছেতারা নীতি প্রণয়ন করেকিন্তু নির্বাহী ক্ষমতা ভিন্ন। সমস্যাটা চিহ্নিত করে আইনসম্মত ক্ষমতার আওতায় দ্রুত সমাধান করা যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো কেউ থাকলে খুব বেশি বিতর্ক না করেই” সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।

প্রশ্ন: ওই বিমান দুর্ঘটনার পর গত রাতে ভাবছিলামাইডেন প্রশাসনের আমলের পূর্বসূরিরা কি তখন পিট হেগসেথশন ডাফিএদেরকে ফোন করে জানিয়েছিলেনআপনাকে অ্যান্টনি ব্লিংকেন কি ফোন করেছেন?

সচিব রুবিও: আমাদের দপ্তরে নিরাপত্তার কারণে আমরা সাধারণত ফোন রাখি না। হতে পারে তিনি সকালে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। তবে আসলে ঘটনা হলোএটাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তেমন ভূমিকা নেইযদি না ভুক্তভোগীদের মধ্যে অন্য কোনো দেশের নাগরিক থাকেন। থাকলে স্বদেশি দূতাবাস কিংবা কনস্যুলেটে জানানো হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (ডিওডি) এখানে মূল ভূমিকা রাখবেকারণ এ ঘটনায় তিনজন সার্ভিসমেম্বার মারা গেছেনআর পরিবহন বিভাগকেও (ডিওটি) যুক্ত হতে হবেকারণ ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ও বিমান নিরাপত্তা তারাই দেখভাল করে।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনি যখন দায়িত্ব নিলেনব্লিংকেন কি শুভেচ্ছা জানিয়ে কোনো চিঠি দিয়ে গেছেন?

সচিব রুবিও: হ্যাঁতিনি খুব সুন্দর একটা নোট রেখে গেছেন—“এটা পৃথিবীর সেরা কাজআমি সাহায্য করতে প্রস্তুত” ধরনের কথা ছিল। এটা আসলেই অনেক গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব। আমার মনে হয়বিগত কয়েক বছরে পররাষ্ট্র দপ্তর ধীরে ধীরে পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্র থেকে সরে গিয়েছিলঅনেক কারণে। অথচ এখানে বহু মেধাবী মানুষ আছেনআমি আগেও তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু কাজের ধীরগতিঅধিকতর আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়াএসবের জন্য প্রশাসনগুলো প্রায়ই স্টেট ডিপার্টমেন্টকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছে।

আমি চাই স্টেট ডিপার্টমেন্ট আবার কেন্দ্রে আসুকযুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বিকাশ ও প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেওয়ার মূল জায়গায় থাকুক। প্রেসিডেন্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেনআমরা তাকে কার্যকর পরামর্শ দেব।

এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজনের অধীনে এটা সত্যিই ভালোকারণ এখানে সময় নষ্ট হবে না। সিদ্ধান্ত হলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: এখনকার সময়টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে আপনার কাজ খুবই সংবেদনশীল। বিশেষ করে রিপাবলিকান পার্টি নিজেই বিদেশনীতি নিয়ে বিভক্তইউক্রেনে আমরা কী করবকেউ কেউ বলে একেবারেই কিছু করা উচিত নয়কেউ বলে ইরান-রাশিয়ার দিকে এত মনোযোগ না দিয়ে চীনের দিকে দেখো। এমনি আরও বহু মতামত। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে?

সচিব রুবিও: আমরা বরাবর কী করবকী নিষেধাজ্ঞা দেবএগুলো নিয়ে সুনির্দিষ্ট তর্ক করিকিন্তু প্রশ্ন হলো সর্বপ্রথম আমাদের কোন কৌশল নেওয়া উচিতআমার ধারণাআমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য হলো মার্কিন জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও এগিয়ে নেওয়া। চীন নিজেদের স্বার্থ দেখেরাশিয়া নিজেদের স্বার্থ দেখেচিলিও তাদের স্বার্থ দেখেআমাদেরও তাই করা উচিত। যেখানে স্বার্থ মেলেসেখানেই মিত্রতাযেখানে স্বার্থ সংঘাতময়সেখানেই কূটনীতি দিয়ে সংঘাত এড়িয়ে চলা।

কিন্তু ঠাণ্ডা যুদ্ধের পরযখন আমরা একক পরাশক্তি হয়েছিলামতখন মনে করেছি গোটা বিশ্বের সরকারি” দায়িত্ব বুঝি আমাদের কাঁধে। পৃথিবীর যত সমস্যাই হোকআমরা যেন সবার সমাধানকারী। যেখানে সত্যিই আমাদের স্বার্থ ঝুঁকিতেসেগুলোকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অনেকে সব জায়গায় হাত বাড়িয়েছে। আমার মতেএটা বন্ধ করতে হবে।

এখন আমরা দেখছিচীন এক বড় শক্তিরাশিয়াও কিছুটাতার সঙ্গে ইরানউত্তর কোরিয়ার মতো রুঢ় রাষ্ট্র আছে। এই বহুকেন্দ্রিক বিশ্বের বাস্তবতায় আমাদের পররাষ্ট্রনীতি যেন থাকে মার্কিন স্বার্থ সংরক্ষণেসশস্ত্র সংঘাত এড়িয়ে চলতেতবে কখনো নিজেদের স্বার্থের বিনিময়ে নয়। এটাই চ্যালেঞ্জ।

সুতরাং আমি মনে করিএটাই আমাদের ফ্রেমওয়ার্ক। এখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করা উচিতদূতিয়ালিপররাষ্ট্র সহায়তামিত্রতাসবকিছুই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

প্রশ্ন: আগের প্রশাসন (বাইডেন প্রশাসন) যে বলেছিল—“আমাদের মিত্রতা আগের চেয়ে শক্তিশালীপ্রতিদ্বন্দ্বীরা দুর্বল হয়েছেরাশিয়া-ইরান-চীন সবাই দুর্বলআর তাতে কোনো নতুন যুদ্ধ লাগেনি”—এ নিয়ে আপনার মত কী?

সচিব রুবিও: প্রথমতআমরা নতুন করে এগোতে চাইতবে দেখতে হবে কী পরিস্থিতি আমরা পেয়েছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলবআগের মূল্যায়ন সঠিক নয়। বাইডেন প্রশাসনের সময় স্টেট ডিপার্টমেন্ট আর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি)-র মধ্যেই বিরোধ ছিলডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যেও ফাটল ছিল।

আজকের বিশ্বে রাশিয়ার সীমানা বেড়েছেতারা আগের চেয়ে বেশি অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ রাখছে। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছেযা ভীষণ ধ্বংসাত্মক। ইউরোপে ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। আর অনেকে ভাবেআফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে সরে আসাই পুতিনকে সুযোগ দিয়েছিল আমাদেরকে দুর্বল বা অমনোযোগী ভাবতে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন আমাদের মিত্রদের হুমকি দিচ্ছেতাইওয়ানফিলিপাইনএমনকি আরও দূরের দেশগুলোকেও অর্থনৈতিক-সামরিক প্রভাবের মাধ্যমে চাপে রাখছে।

সুতরাং আমি বলব না ওরা (বাইডেন প্রশাসন) আমাদের মিত্রদের শক্তিশালী রেখেছে বা প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বল করেছে। বড় শক্তিগুলো গোপনে হলেও আমাদের দৃঢ় নেতৃত্ব চায়স্পষ্ট অবস্থান চায়আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে স্পষ্ট আর কার্যকর নেতা আধুনিক কালে কমই দেখা গেছে।

প্রশ্ন: প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মানসিক সামর্থ্যের অবনতির যে কথা শোনা গিয়েছিলসেটির কারণে কি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতি হয়েছে?

সচিব রুবিও: আমাদের প্রতিপক্ষ আর মিত্ররা সবাই আমাদের নেতৃত্ব পর্যবেক্ষণ করে। যারাই ক্ষমতায় আসুকতারা কীভাবে কথা বলেসিদ্ধান্ত নেয়এসব দেখে হিসাব কষে। বাইডেন প্রশাসনের সময় চীনের ধারণা শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্র হয় অবনমনের পথেনয় ক্লান্তআর তারা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে। ওরা ভাবেআমেরিকা আর পশ্চিমা দুনিয়ার পতন অনিবার্যআর চীনের উত্থান অনিবার্য।

যখন আমেরিকান নেতৃত্ব তাদের চিরাচরিত ধারণার সঙ্গে মিলে যায়যে আমরা দুর্বলতখন তারা বেশি দ্বিধাহীন হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন: সেই যুক্তিতে ট্রাম্পের inauguration-এর দিন থেকেই আমরা কি বেশি নিরাপদ হয়ে গেলাম?

সচিব রুবিও: নিঃসন্দেহেআমি নিজে দেখেছি। ধরুনকলম্বিয়ার প্রসঙ্গ: ওই দেশের প্রেসিডেন্ট চুক্তি থাকা সত্ত্বেও প্লেন ফিরিয়ে নিলেন। অন্য যেকোনো প্রেসিডেন্ট হলে হয়ত নোট পাঠিয়ে অভিযোগ জানিয়েমাসের পর মাস আলোচনা করত। ট্রাম্প একদম ঘণ্টা-খানেকের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করে ফেললেন। এতে তারা বুঝতে পারলতিনি সত্যিই যা বলেনতা করেন।

ওখানকার বেশির ভাগ মানুষই মার্কিন-বন্ধুসুলভওনারা হতবাককেন তাদের প্রেসিডেন্ট এমন পাগলামি করলেন! কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি রাষ্ট্রপতিকে উন্মাদ বলেছেন।

তবে হ্যাঁট্রাম্পের অধীনে পররাষ্ট্রনীতি সহজকারণ সবাই জানে উনি যা বলেনতা-ই করেন। এতে আমার কাজও সহজ হয়।

প্রশ্ন: মানে আপনি বলতে পারেন: দেখুনপ্রেসিডেন্ট যা বলেছেনসেটাই সত্য।

সচিব রুবিও: একদম। সবাই জানে অনেক রাজনীতিবিদ কথায় কথা বাড়ালেও কাজ করেন না। কিন্তু ট্রাম্প বললে কাজটি সত্যিই হয়ে যায়।

প্রশ্ন: নিউ ইয়র্ক টাইমস” বলছেকলম্বিয়ার মতো দুর্বল দেশের সঙ্গে আপনারা যা করলেনতা হয়তো চীন বা রাশিয়া বা ইরানের ক্ষেত্রে পারবেন না। আপনারা হয়তো বুলিং” করতে পারবেন না। আপনি কী বলবেন?

সচিব রুবিও: আমরা কাউকে বুলিং” করছি না। কলম্বিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি ছিলওরা সেটি লঙ্ঘন করেছে। আমরা বলেছিবিমানে আপনাদের নাগরিকদের ফেরত নেবার কথা ছিলএখন অর্ধেক পথ থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছেনতা হলে আপনারা এসেই তাদের নিয়ে যান। এখানে যেটা ঘটেছেসেটা ঠকালো নয়বরং ওদেরই করা অন্যায্যতা।

চীনের মতো দেশের সঙ্গে আচরণ অবশ্যই আলাদা। চীন পরাশক্তিতাদের পারমাণবিক অস্ত্র আছেবিশাল অর্থনীতি আছে। রাশিয়াও তাই। সুতরাং ক্ষমতাধর দেশের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট-স্তরে কথা হবে। কিন্তু আমি মনে করি না আমরা কলম্বিয়াকে বুলি” করেছি।

মিডিয়ায় কেউ কেউ বলছেওরা এখন চীনের দিকে ঝুঁকবেওরা এমনিতেই অনেক ক্ষেত্রে চীনের প্রভাব বলয়ে ছিল। আর আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা বন্ধ করতে পারি না এই ভয়ে যে ওরা চীনের দিকে চলে যাবে।

প্রশ্ন: আপনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি ফোনে কথা বলেছিলেনশোনা গিয়েছিল তিনি আপনাকে সাবধান করে দিয়েছেন।

সচিব রুবিও: কেউ কেউ বলছে ওই কথোপকথনের চীনা আর ইংরেজি ভার্সনে কিছু অমিল ছিলযেন আমাকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সত্যি বলতেফোনে তেমন কিছু আমি শুনিনি বা বুঝিনি। ওরা হয়তো নিজেদের দিক থেকে প্রোপাগান্ডার জন্য আলাদা অনুবাদ প্রকাশ করে।

সত্যিটা হলোআমি বলেছি: তোমরা তোমাদের স্বার্থ দেখবেআমরা আমাদের। আমরা বড় দুই শক্তি। যেখানে মিল হবেকাজ করতে পারিযেখানে অমিলচেষ্টা করব সংঘাত এড়াতে। কিন্তু আমাদের স্বার্থে যা করা দরকারকরব।

প্রশ্ন: আপনি প্যানামায় যাচ্ছেন। সেখানে চীনের উপস্থিতি আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা খাল ফিরিয়ে চাইচীনের হাতে কখনো দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল না।” তবে técnicamente ওদের হাতে খাল নেইকিন্তু বন্দরে ওদের বড় বিনিয়োগ আছে। ব্যাখ্যা করবেন?

সচিব রুবিও: কয়েক বছর আগে প্যানামা তাইওয়ানকে অস্বীকার করে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়আর এর বদলে আগের প্রেসিডেন্ট প্রচুর চীনা অর্থ পেয়েছেন। তখন চীনারা দুই দিকের বন্দরে বিনিয়োগ করেঅনেক ক্রেন ও সুবিধা তৈরি করেযা আসলে ঐতিহাসিকভাবে হংকং ভিত্তিক বেসরকারি” কোম্পানিকিন্তু বাস্তবে সবই চীনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

যদি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সংঘাত হয়চীন খুব সহজেই খালে প্রবেশ-প্রস্থানে জট লাগাতে পারে। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিশাল ঝুঁকি। ট্রাম্প বলেছেন, “প্যানামা খাল আমরা তৈরি করেছিআমরা রক্ত ও অর্থ ঢেলেছি। ওটা চীনের হাতিয়ার হতে পারে না।

প্রশ্ন: তাহলে সমাধান কীপ্যানামা কি বলবে, “চীনের বন্দরে আপনারা থাকতে পারবেন না”?

সচিব রুবিও: ওগুলো হংকং-ভিত্তিক হলেও আসলে চীনা কোম্পানি। সুতরাং হ্যাঁআমাদের দৃষ্টিতে এটা চলতে পারে না। যদি চীন সেখানে শক্ত ঘাঁটি করেহামলার সময় বা সংঘাতে সেটা ব্যবহার করবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

আরেকটা বিষয়: আমরা খাল বানিয়েছিকিন্তু মার্কিন জাহাজগুলো অন্য দেশের চেয়ে বেশি টোল দিচ্ছেযা অন্যায্য। প্যানামা সরকার বলে, “এটা স্বাধীন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে।” কিন্তু তারা তো নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়সেটার দায় আমাদের কেন নিতে হবে?

প্রশ্ন: আপনারা কি খুব কঠোর হবেন নাযাতে ওরা পুরোপুরি চীনের কোলে চলে যায়?

সচিব রুবিও: খালের দুটি প্রধান বন্দরে চীনের নিয়ন্ত্রণ ইতিমধ্যেই। আমাদের নিরপত্তা ইস্যু আটকাতে পারে না এই আশঙ্কায় যে ওরা অন্য কারো দিকে চলে যেতে পারে। তবে আমি আশা করিসবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় থাকবে। প্যানামার বেশিরভাগ নেতৃত্বই যুক্তরাষ্ট্রপন্থী। কিন্তু আমাদের জন্য এটা মৌলিক স্বার্থের বিষয়।

প্রশ্ন: আসলে প্যানামার পেছনে আসল ইস্যু চীনের ক্রমাগত সম্প্রসারণ। আপনি আগেই বলছিলেনচীন ১০ বছরের মধ্যেই হয়তো বিশ্ব চেহারা বদলে দিতে পারে।

সচিব রুবিও: হ্যাঁএমনকি তার আগেও। কারণ আধুনিক প্রযুক্তিচিপব্যাটারিসবকিছুদুর্লভ খনিজের ওপর নির্ভরশীলযা চীন বিশ্বজুড়ে কিনে নিয়েছে। আমরা কোভিডের সময় দেখেছিসামান্য মাস্ক পর্যন্ত আমাদের তৈরি করতে কষ্ট হয়। আবার ৮০-৯০% জেনেরিক ওষুধের উপাদান চীনে তৈরি হয়। ওরা চাইলে আমাদের সরবরাহ থামিয়ে দিতে পারেএটা বড় leverage

চীন সেটা করছেও—critical minerals রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছেপ্রযুক্তিতে আমাদের ক্ষতি করার জন্য। সুতরাং ওরা শিপিং লেনখনিজশিল্পসব ক্ষেত্রেই প্রভাব বিস্তার করছে। আমরা এর মোকাবিলা না করলে বড় বিপদ।

প্রশ্ন: গ্রিনল্যান্ড প্রসঙ্গে জড়িত এটাওট্রাম্প বলেছেন আমাদের ভূমিকাও জোরালো হওয়া দরকারকারণ চীন সেখানেও প্রভাব ফেলতে চায়।

সচিব রুবিও: আর্কটিক বা মেরু অঞ্চলে বিপুল সম্পদ আর নৌপথ আছেযা বরফ গলার কারণে আরও ব্যবহারযোগ্য হচ্ছে। চীনের সেখানে সরাসরি উপস্থিতি নেইতাই বেসরকারি কোম্পানির ছদ্মবেশে কোনো বন্দর বা অবকাঠামো বানিয়ে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। যদি ওরা আর্কটিকে নিয়ন্ত্রণ পায়ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামরিকভাবেই আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করবে।

ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে গ্রিনল্যান্ডকিন্তু সামরিক রক্ষণাবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রকেই নির্ভর করতে হয়। ট্রাম্প বলছেনআমরা যখনই আক্রমণ হলে সুরক্ষা দিইতখন কেন আমরা সেটির ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ নেব না?

প্রশ্ন: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রীর ফোনকলে গুঞ্জন আছেওখানে নাকি তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ডেনমার্ক বলছে, “আমরা বিক্রি করব না।” তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ কীসামরিক বা অর্থনৈতিক চাপে রাখবেন?

সচিব রুবিও: প্রেসিডেন্ট বলেছেনতিনি কিনতে চান। কূটনীতিতে এসব আলাপ ঘরের ভেতরেই হওয়া শ্রেয়। এটা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য ডেনমার্কের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও প্রভাব ফেলতে পারে।

কিন্তু এটা নিছক কোনো কৌতুক নয়। বহু বছর ধরেই অনেকে এ নিয়ে কথা বলছে। আমাদের জাতীয় স্বার্থ ঝুঁকিতে আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিতে কিনে নেওয়া” একটা উপায় হতে পারে। এ ব্যাপারে কঠোর বা সহজসবই আলোচ্য। তিনি কোনো বিকল্প বন্ধ করে দেবেন নাকারণ ব্যবসায়িকভাবে আলোচনায় leverage দরকার।

প্রশ্ন: চার বছর পর কি আপনার ধারণাযুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডের মালিক হবে?

সচিব রুবিও: দেখাই যাক। আমি বলতে পারিচার বছর পর আমরা আমাদের আর্কটিক স্বার্থ অনেক বেশি সুরক্ষিত করতে পারবপ্যানামা খালে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে পারবপশ্চিম গোলার্ধে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

মধ্য আমেরিকার অনেক দেশ আসলে অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক কারণে আমাদের সাথে কাজ করতে চায়কারণ ওখানে ট্রানজিট” দেশ হিসেবে অভিবাসন নিয়ে বিস্তর সমস্যা হয়। এই ধরনের অবৈধ প্রবাহ বন্ধ করার ব্যাপারে তারা আমাদের সহযোগী হতে পারে।

প্রশ্ন: কলম্বিয়ার প্রসঙ্গ আবার আসছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাইছেন অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠাতেকানাডা আর মেক্সিকোও সেই তালিকায়। তিনি বলছেনশনিবার থেকেই হয়তো শুল্ক বসিয়ে দেবেন যদি ওরা সাহায্য না করে। ওরা বলছে, “সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যাক।” আপনি কী মনে করেন?

সচিব রুবিও: আমি গতকাল কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিমেক্সিকোর সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত। দুটি প্রধান বিষয়:
এক. অবৈধ অভিবাসনবিশেষ করে মেক্সিকোর অঞ্চল দিয়ে কার্টেলগুলো মানুষ পাচার করছেফেন্টানিল নিয়ে আসছে। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। মেক্সিকোকে এতে সহযোগিতা করতেই হবে।

দুই. আমরা মেক্সিকোর সঙ্গে বাণিজ্যে চীনা ফ্রন্ট কোম্পানি” নিয়ে উদ্বিগ্নযারা মেক্সিকোতে পণ্য বানিয়ে নামমাত্র শুল্কে আমাদের বাজারে ঢুকছে। এ কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন।

কানাডার ক্ষেত্রেও সীমান্ত অনেক বড়। ওরাও চাইবে না পলায়নকারী অপরাধী বা মাদক কারবারীরা সেদিকে ঢুকে পড়ুক। আর ট্রাম্প মনে করেনওদের সঙ্গেও কিছু বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা আছেসেটাও ঠিক করতে হবে।

প্রশ্ন: শনিবারে কি শুল্ক কার্যকর হবে?

সচিব রুবিও: সেটি প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত। তিনি শনিবার কিংবা এক সপ্তাহ বা এক মাস পরেও কার্যকর করতে পারেন। আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকব। তাঁর উদ্দেশ্য অবৈধ অভিবাসন আর বাণিজ্য বৈষম্য একসঙ্গে সামলানো।

প্রশ্ন: কে আগে ৫১তম রাজ্য হবেকানাডানা গ্রিনল্যান্ড?

সচিব রুবিও: (হাসি) এটা বেশ দূরের ব্যাপার। প্রেসিডেন্টের স্পষ্ট বক্তব্য হলোগ্রিনল্যান্ড আমাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিনে নেওয়া সম্ভব হলে সেটাই চান। আর কানাডার ব্যাপারে তিনি একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমি যদি শুল্ক দিইওদের কি অস্তিত্ব থাকবেযদি নিজেরাই টিকতে না পারেতাহলে রাজ্য হয়ে যাক।” এটাই ছিল তার নিপুণ রসিকতা।

প্রশ্ন: কিন্তু ওরা তো বলছেওরা যদি না পারেতাহলে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেবেকানাডা কি আমাদের লাইটস অফ” করে দিতে পারবে?

সচিব রুবিও: সেটাও ওদের নিজেদের ক্ষতি করবে। এই বিদ্যুৎ ওরা আর কোথায় বেচবেআসলে এটি মনে করিয়ে দিচ্ছে যেআমাদের শক্তির স্বাধীনতা থাকা কত জরুরি। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নিজেদের জ্বালানি উত্পাদন বজায় রাখতে হবে।

প্রশ্ন: নেটো” নিয়েও রিপাবলিকানদের মধ্যে মতপার্থক্য আছেঅনেকে বলেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটা দরকার ছিলএখন আমরা কেন ইউরোপকে পালছি”? ওরা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করুক। আপনি কী বলবেন?

সচিব রুবিও: ট্রাম্পের অবস্থান এখানে অন্যসব প্রেসিডেন্টের মতোইইউরোপিয়ান মিত্ররা নিজেদের প্রতিরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যয় করে না। পোল্যান্ড বা বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলোরাশিয়ার কাছাকাছিওরা অনেক ব্যয় বাড়িয়েছে। কিন্তু জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো বড় অর্থনীতিগুলো নিরাপত্তায় কম ব্যয় করেকারণ জানে আমেরিকা আছে। তারা বরং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় সে টাকা ঢালে। ফলে এ যেন আমাদের ওপর নির্ভরশীলতাযাকে সত্যিকার মিত্রতা বলা যায় না।

আমরা চাই ইউরোপের দেশগুলোও শক্তিশালী হোকযাতে ন্যাটো হয় প্রকৃত অর্থে একটি শক্ত জোটযেখানে সবাই অবদান রাখে। তাই ফিনল্যান্ডপোল্যান্ড এরা আমাদের ভালো মিত্র হতে পারে। আমি মনে করিএই কথাগুলো ট্রাম্প জোর দিয়েই বলেছেন।

প্রশ্ন: ইউক্রেনের যুদ্ধ এখন রিপাবলিকানদের মধ্যেও বিতর্কের বিষয়। অনেকে বলেরাশিয়া ভয়ংকর হলেও আমরা অনেক অর্থ ব্যয় করেছিপরিস্থিতি অচলসময় এসেছে আলোচনা করে একটা চুক্তি করার। আপনি কী বলেন?

সচিব রুবিও: আমরাও মনে করি পুতিন যা করেছেতা জঘন্য। কিন্তু বাস্তবতা হলোআমরা ইউক্রেনকে আশ্বাস দিয়েছিলাম যে ওরা রাশিয়াকে সম্পূর্ণ পরাজিত করতে পারবে। কিন্তু যা দেখছিসেটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধএক প্রকার অচলাবস্থাএতে ইউক্রেন ধ্বংস হচ্ছেমানুষ দেশছাড়া হচ্ছে। শেষমেশ কে এর পুনর্গঠন করবে?

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেনএখানে আলোচনাই সমাধানযাতে যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে থেমে যায়। আলোচনা মানেই দুটি পক্ষকেই কিছু দিতে হবে। কীভাবে দেবেসেটা কঠিন কূটনীতি। কিন্তু অন্তত আমাদের একজন প্রেসিডেন্ট আছেনযিনি বোঝেন যে এই লড়াই অনন্তকাল চলতে পারে নাএটা থামাতে হবে।

প্রশ্ন: কে বেশি সমস্যা তৈরি করছেপুতিননা জেলেনস্কিখবর আছেইউক্রেন আশা করছে পুতিন অন্যায় দাবি জানিয়ে ট্রাম্পকে বিরক্ত করবেনএবং ট্রাম্প শেষমেশ ইউক্রেনের অবস্থানে আসবেন।

সচিব রুবিও: পাবলিক উচ্চারণ আর ব্যক্তিগত আলাপ আলাদা। পুতিনেরও দেশে নিজস্ব রাজনীতি আছে। জেলেনস্কির দেশেও মানুষ রাশিয়ার হাতে প্রচুর জুলুম সয়েছেতাই রাশিয়াকে যা ইচ্ছে তা দিতে নারাজ। কিন্তু বাস্তবেদুপক্ষই ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রই পারে এর মধ্যস্থতা করতেআর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে এটা সম্ভব। সহজ হবে নাসময় লাগবে।

প্রশ্ন: ইসরায়েল আর জিম্মিদের প্রসঙ্গ… এখনো আমেরিকান জিম্মি আছে। প্রথম ধাপের মুক্তিতে নাকি তিনজন আমেরিকান ফেরত আসবে। আপনার কি মনে হয়আসবেআর না এলে কী হবে?

সচিব রুবিও: মনে করিআসবে। এটাই চুক্তি। কিন্তু আসল সমস্যা হলো গাজায় হামাসের মতো সংগঠন আছেযারা ইসরায়েল ধ্বংস করতে চায়অকল্পনীয় নৃশংসতা চালায়। ৭ অক্টোবরের ঘটনায় অমানবিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ দেখলাম। কোনো দেশ কি পারে এমন একটা সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পাশেই থাকার সুযোগ দিতে?

যুদ্ধবিরতি সাময়িকমানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেজিম্মি মুক্তির পথ খুলেছে। তবে প্রত্যেক জিম্মির বদলে শত শত হামাস যোদ্ধা ছাড়া হচ্ছেএটা অত্যন্ত অন্যায্য বিনিময়। তবু আমরা জীবনকে মূল্য দিই।

আগামীতে আবার কী হবেগাজায় কে শাসন করবেযদি আবারও হামাস ক্ষমতায় থাকেতাহলে তো একই সমস্যা থেকে যাবে। লেবাননে হিজবুল্লাহ আছেসিরিয়ায় ইরান-রাশিয়া আছেসবই একটা জটিল চক্র। তবে সুযোগ আছে আজকের অস্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে সৌদি আরব আর ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি করারইরানকে কমজোরি করার। দেখতে হবে কীভাবে এগোই।

প্রশ্ন: ঘরোয়া বিষয়: ডোনাল্ড ট্রাম্প মাইক পম্পেওর নিরাপত্তা প্রত্যাহার করেছেন। অনেকে বলছেওনাকে বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলা হলো। আপনার মত?

সচিব রুবিও: প্রেসিডেন্টের এটা করার অধিকার আছে। গোয়েন্দা ঝুঁকির ওপর নির্ভর করে এসব সিদ্ধান্ত হয়। যদি ইরান সক্রিয়ভাবে সবাইকেই মারতে চায়তাহলে তো সবারই সুরক্ষায় বিশাল বাহিনী লাগবে। তাই ঝুঁকি বনাম ব্যয়” হিসাব করে দেখা হয়। প্রয়োজনে আবার বদলানো হবে।

প্রশ্ন: পররাষ্ট্র সহায়তা সাময়িক স্থগিত করে অনেক বিপদ ডেকে এনেছিল বলে অভিযোগ শোনা গেছেজরুরি ওষুধ সরবরাহও নাকি আটকে ছিল। এখন আবার কিছুটা শিথিল হয়েছে। কেন শুরুতে এতটা কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন?

সচিব রুবিও: আমরা বলেছিলামইসরায়েল-মিসর বাদে সব বিদেশি সহায়তা ৯০ দিনের জন্য পজ” থাকবেতবে জীবন রক্ষাকারী খাদ্য ও জরুরি পণ্যে ছাড় থাকবে। পরে দেখা গেলকেউ কেউ যুক্তি দিল, “আমরা ওষুধ পাঠিয়ে রেখেছিসেগুলো আটকে আছে।” আমরা বললাম, “ঠিক আছেমুক্ত করে দিন।

আসল বিষয় হলোএই সাময়িক স্থগিতের উদ্দেশ্য ছিল একটা পরিষ্কার চিত্র পাওয়া। অনেক এনজিওপ্রকল্পএগুলোতে কী কী ব্যয় হয়কোথায় যায়। তথ্য চাইলে আগে দিত না। এখন দিচ্ছেকারণ টাকা বন্ধ আছে। হয় ওদের প্রমাণ করতে হবে কেন এটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণনা হলে টাকা যাবে না।

এই ফরেন এইড ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স” যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে। এক ডলারের মধ্যে ১২ সেন্ট প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছালে বাকি ৮৮ সেন্ট কোথায় যায়আমরা জবাবদিহি চাই।

প্রশ্ন: ঠিক। শেষ দিকে বলিআট বছর আগে আমাদের দুজনের মধ্যে ডিবেটে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের দুজনকেই অপমান করছিলেন। এখন আপনি তার অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এত পরিবর্তন কীভাবে হলো?

সচিব রুবিও: রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিক। তখন আমি ট্রাম্পকে চিনি নাপরে জানলাম। আমি সিনেটে ছিলামট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেনআমরা একসঙ্গে কাজ করে দেখলাম কত কিছু সম্ভব। ট্রাম্প একজন বাস্তব মানুষটিভিতে দেখা রূপের বাইরে তার মানবিক গুণও আছে।

আর আমরা এমন একটা পদ্ধতিতে বিশ্বাস করিযেখানে পরাজয়ের পরও দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। ভিন্ন দলে হলেও সেটা আশা করা হয়। তাহলে একই দলে হলে তো আরও বেশি করে সহযোগিতা করা উচিত।

আমি রাজনীতিতে এসেছি দেশসেবা করতেব্যক্তিগত শত্রুতা পুষে রাখতে নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গেও আমার পারস্পরিক শ্রদ্ধা গড়ে উঠেছেযার ফল আমি আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রশ্ন: তিনি আপনাকে বরাবরই আক্রমণাত্মক ভাষায় আক্রমণ করতেনআপনিও কম যাননি। ওই প্রাইমারি বিতর্কগুলো প্রায় এক দশক আগে হয়ে গেছে। কিন্তু ডিপ স্টেট” নিয়ে যে কথা হয়অনেকে মনে করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভেতরে আপনারা যা করবেনকেউ কেউ তা ব্যর্থ করতে চেষ্টা করবে।

সচিব রুবিও: সত্যি কথা হলোযেকোনো বিশাল প্রতিষ্ঠানে কিছু কর্মী থাকে যারা হয়তো নতুন প্রশাসনের নীতি মানতে চায় না। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে দিয়েছি: আপনার ব্যক্তিগত মত যা-ই হোকপ্রেসিডেন্টের নির্দেশ পালন করতে হবে। না চাইলে বেসরকারি খাতে চলে যান। স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করবে।

এবং ট্রাম্প প্রশাসন এটা করেছেও। কেউ যদি এতে বিশ্বাস না করেচেষ্টা করে বাধা দিতেতাহলে সে এখানে থাকার দরকার নেই। আমেরিকান করদাতারা আপনাকে বেতন দিচ্ছেনআপনি যদি প্রশাসনের নীতিকে বাধা দেনতাহলে সেটা ঠিক নয়।

আমরা তাই এখানে এক নতুন পরিবেশ তৈরি করছি। প্রেসিডেন্টের নির্দেশমতো আমরা কাজ করবকেউ যদি বিশ্বাস না করেতারা অন্যত্র যেতে পারে। এটি আদর্শিক সমস্যা নয়বরং ন্যায্য কর্তব্যবোধ।

(“ দ্য মেগিন কেলি শো” র ট্রান্সক্রাইব থেকে অনূদিত)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024