- আমেরিকার পররাষ্ট্র সচিবের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার
মেগিন কেলি “ দ্য মেগিন কেলি শো” তে দেয়া সাক্ষাৎকার
সারাংশ
১. আমার মনে হয়, বিগত কয়েক বছরে পররাষ্ট্র দপ্তর ধীরে ধীরে পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্র থেকে সরে গিয়েছিল, অনেক কারণে।
২. আমার ধারণা, আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য হলো মার্কিন জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও এগিয়ে নেওয়া। চীন নিজেদের স্বার্থ দেখে, রাশিয়া নিজেদের স্বার্থ দেখে, চিলিও তাদের স্বার্থ দেখে—আমাদেরও তাই করা উচিত। যেখানে স্বার্থ মেলে, সেখানেই মিত্রতা; যেখানে স্বার্থ সংঘাতময়, সেখানেই কূটনীতি দিয়ে সংঘাত এড়িয়ে চলা।
৩. আমি নিশ্চিতভাবে বলব, আগের মূল্যায়ন সঠিক নয়। বাইডেন প্রশাসনের সময় স্টেট ডিপার্টমেন্ট আর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি)-র মধ্যেই বিরোধ ছিল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যেও ফাটল ছিল।
৪. আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে সরে আসাই পুতিনকে সুযোগ দিয়েছিল আমাদেরকে দুর্বল বা অমনোযোগী ভাবতে।
৫. , ট্রাম্পের অধীনে পররাষ্ট্রনীতি সহজ, কারণ সবাই জানে উনি যা বলেন, তা-ই করেন। এতে আমার কাজও সহজ হয়।
৬.চায়নার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি বলেছি: তোমরা তোমাদের স্বার্থ দেখবে, আমরা আমাদের। আমরা বড় দুই শক্তি। যেখানে মিল হবে, কাজ করতে পারি; যেখানে অমিল, চেষ্টা করব সংঘাত এড়াতে। কিন্তু আমাদের স্বার্থে যা করা দরকার, করব।
৭. আমি বলতে পারি, চার প্যানামা খালে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে পারব, পশ্চিম গোলার্ধে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
৮.ইউক্রেন প্রসঙ্গে রুবিও- “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, এখানে আলোচনাই সমাধান্”
৯. এক ডলারের মধ্যে ১২ সেন্ট প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছালে বাকি ৮৮ সেন্ট কোথায় যায়?
প্রশ্ন: মাননীয় সচিব, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য।
সচিব রুবিও: ধন্যবাদ। “সচিব” শব্দটা শুনে এখনো একটু অদ্ভুত লাগে, তবে ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: তাই তো, তাই না? এখন পর্যন্ত এক সপ্তাহ হলো?
সচিব রুবিও: আট দিন হলো, যদিও আমি গুনছি না। বলছি কেবল আট দিন। হ্যাঁ, আট-নয় দিন।
প্রশ্ন: আজ অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই—সিনেটের কাজ আর এখনকার কাজের পার্থক্য, “ডিপ স্টেটের” কেন্দ্রে থাকার অভিজ্ঞতা—কিন্তু প্রথমে বিমান দুর্ঘটনার কথা বলি। খুবই মর্মান্তিক।
সচিব রুবিও: একদম। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলে, এটা সত্যিই হৃদয়বিদারক। এসব মানুষ অবতরণের প্রায় মুহূর্তেই ছিলেন—যেমন আমরা অনেকেই কখনো কখনো করি—নামার আগে ফোনে সংযোগ হয়, নামার প্রস্তুতি নেই। অথচ হঠাৎ এমন একটা ঘটনা ঘটল, যা অকল্পনীয়। এটা খুবই মর্মান্তিক। আর ভুলে গেলে চলবে না, তাতে আমাদের কিছু সার্ভিস সদস্যও ছিলেন, যারা দেশের দায়িত্ব পালনকালে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
এটা সরাসরি পররাষ্ট্র দপ্তরের কাজ নয়, তবে এ ধরনের ঘটনার সময় প্রথম দায়িত্ব হলো যারা মারা গেছেন তাদের সম্মান জানানো এবং পরিবারগুলোর বেদনা অনুধাবন করা। দ্বিতীয় কাজ হলো কেন এমনটা ঘটল, তার কারণ বের করা, যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে। খুবই ব্যস্ত একটা বিমানবন্দর, প্রতিদিন প্রচুর ফ্লাইট ওঠানামা করে, সুতরাং এটা অবশ্যই ভাববার বিষয়। স্বজনহারাদের ব্যক্তিগত গল্প জানলে বিষয়টা আরও বেদনাদায়ক হবে।
প্রশ্ন: এটা কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তিদের দ্রুত নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে?
সচিব রুবিও: হ্যাঁ, বিশেষত সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে। আসলে কোথাও একটা ব্যর্থতা ঘটেছে। রাজধানীর মতো একটা জায়গায়—যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দরে—একটি হেলিকপ্টার আর উড়োজাহাজের সংঘর্ষ ঘটবে, এটা তো স্বাভাবিক নয়। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। তাই কারও নেতৃত্বে তদন্ত করে বের করতে হবে সমস্যাটা কী, এবং আবার এমন না ঘটে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিবহন বিভাগ—কী জানি আরও কতগুলো দপ্তর জড়িত—এবং প্রতিটি দপ্তরেই নেতৃত্ব প্রয়োজন। সেই নেতৃত্ব ছাড়া সঠিক সিদ্ধান্ত আর দ্রুত সাড়া আসবে না।
প্রশ্ন: হ্যাঁ, ঈশ্বর না করুক কোনো আন্তর্জাতিক সংকট দেখা দিলে? আপনাকে দায়িত্বে বসানো হয়েছে, কিন্তু তুলসির (নিয়োগ) প্রক্রিয়া হয়তো আরও সময় নেবে, আর কিছুটা সময়ক্ষেপণ তো হয়েই যাচ্ছে।
ঠিক আছে। আপনি এখন আট দিন হয়ে গেল কাজে। সিনেটর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পার্থক্য কী সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছে?
সচিব রুবিও: প্রথমত, আমার বস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। একটা উদাহরণ দিই: এই সপ্তাহান্তে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হঠাৎ ভোর চারটায় একটি সিদ্ধান্ত নেন—আমাদের সাথে লিখিত চুক্তি থাকা সত্ত্বেও—তাঁদের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার জন্য যে বিমান পাঠানো হয়েছিল, তিনি সেটি ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। বিমানটা তখন অর্ধেক পথ পার হয়ে গেছে, অন্যটা appena ছেড়েছে। সাধারণত মার্কিন প্রশাসনে এমন ঘটনায় “পলিসি অপশন” মিলিয়ে দুই-আড়াই বছর লেগে যেত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল।
সিনেটে একধরনের ক্ষমতা আছে—তারা নীতি প্রণয়ন করে; কিন্তু নির্বাহী ক্ষমতা ভিন্ন। সমস্যাটা চিহ্নিত করে আইনসম্মত ক্ষমতার আওতায় দ্রুত সমাধান করা যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো কেউ থাকলে “খুব বেশি বিতর্ক না করেই” সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
প্রশ্ন: ওই বিমান দুর্ঘটনার পর গত রাতে ভাবছিলাম, বাইডেন প্রশাসনের আমলের পূর্বসূরিরা কি তখন পিট হেগসেথ, শন ডাফি—এদেরকে ফোন করে জানিয়েছিলেন? আপনাকে অ্যান্টনি ব্লিংকেন কি ফোন করেছেন?
সচিব রুবিও: আমাদের দপ্তরে নিরাপত্তার কারণে আমরা সাধারণত ফোন রাখি না। হতে পারে তিনি সকালে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। তবে আসলে ঘটনা হলো, এটাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তেমন ভূমিকা নেই, যদি না ভুক্তভোগীদের মধ্যে অন্য কোনো দেশের নাগরিক থাকেন। থাকলে স্বদেশি দূতাবাস কিংবা কনস্যুলেটে জানানো হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (ডিওডি) এখানে মূল ভূমিকা রাখবে, কারণ এ ঘটনায় তিনজন সার্ভিসমেম্বার মারা গেছেন, আর পরিবহন বিভাগকেও (ডিওটি) যুক্ত হতে হবে, কারণ ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ও বিমান নিরাপত্তা তারাই দেখভাল করে।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি যখন দায়িত্ব নিলেন, ব্লিংকেন কি শুভেচ্ছা জানিয়ে কোনো চিঠি দিয়ে গেছেন?
সচিব রুবিও: হ্যাঁ, তিনি খুব সুন্দর একটা নোট রেখে গেছেন—“এটা পৃথিবীর সেরা কাজ, আমি সাহায্য করতে প্রস্তুত” ধরনের কথা ছিল। এটা আসলেই অনেক গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব। আমার মনে হয়, বিগত কয়েক বছরে পররাষ্ট্র দপ্তর ধীরে ধীরে পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্র থেকে সরে গিয়েছিল, অনেক কারণে। অথচ এখানে বহু মেধাবী মানুষ আছেন; আমি আগেও তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু কাজের ধীরগতি, অধিকতর আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া—এসবের জন্য প্রশাসনগুলো প্রায়ই স্টেট ডিপার্টমেন্টকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছে।
আমি চাই স্টেট ডিপার্টমেন্ট আবার কেন্দ্রে আসুক—যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বিকাশ ও প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেওয়ার মূল জায়গায় থাকুক। প্রেসিডেন্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা তাকে কার্যকর পরামর্শ দেব।
এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজনের অধীনে এটা সত্যিই ভালো, কারণ এখানে সময় নষ্ট হবে না। সিদ্ধান্ত হলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: এখনকার সময়টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে আপনার কাজ খুবই সংবেদনশীল। বিশেষ করে রিপাবলিকান পার্টি নিজেই বিদেশনীতি নিয়ে বিভক্ত—ইউক্রেনে আমরা কী করব, কেউ কেউ বলে একেবারেই কিছু করা উচিত নয়; কেউ বলে ইরান-রাশিয়ার দিকে এত মনোযোগ না দিয়ে চীনের দিকে দেখো। এমনি আরও বহু মতামত। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে?
সচিব রুবিও: আমরা বরাবর কী করব, কী নিষেধাজ্ঞা দেব—এগুলো নিয়ে সুনির্দিষ্ট তর্ক করি, কিন্তু প্রশ্ন হলো সর্বপ্রথম আমাদের কোন কৌশল নেওয়া উচিত? আমার ধারণা, আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য হলো মার্কিন জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও এগিয়ে নেওয়া। চীন নিজেদের স্বার্থ দেখে, রাশিয়া নিজেদের স্বার্থ দেখে, চিলিও তাদের স্বার্থ দেখে—আমাদেরও তাই করা উচিত। যেখানে স্বার্থ মেলে, সেখানেই মিত্রতা; যেখানে স্বার্থ সংঘাতময়, সেখানেই কূটনীতি দিয়ে সংঘাত এড়িয়ে চলা।
কিন্তু ঠাণ্ডা যুদ্ধের পর, যখন আমরা একক পরাশক্তি হয়েছিলাম, তখন মনে করেছি গোটা বিশ্বের “সরকারি” দায়িত্ব বুঝি আমাদের কাঁধে। পৃথিবীর যত সমস্যাই হোক, আমরা যেন সবার সমাধানকারী। যেখানে সত্যিই আমাদের স্বার্থ ঝুঁকিতে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অনেকে সব জায়গায় হাত বাড়িয়েছে। আমার মতে, এটা বন্ধ করতে হবে।
এখন আমরা দেখছি—চীন এক বড় শক্তি, রাশিয়াও কিছুটা, তার সঙ্গে ইরান, উত্তর কোরিয়ার মতো রুঢ় রাষ্ট্র আছে। এই বহুকেন্দ্রিক বিশ্বের বাস্তবতায় আমাদের পররাষ্ট্রনীতি যেন থাকে মার্কিন স্বার্থ সংরক্ষণে, সশস্ত্র সংঘাত এড়িয়ে চলতে—তবে কখনো নিজেদের স্বার্থের বিনিময়ে নয়। এটাই চ্যালেঞ্জ।
সুতরাং আমি মনে করি, এটাই আমাদের ফ্রেমওয়ার্ক। এখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করা উচিত—দূতিয়ালি, পররাষ্ট্র সহায়তা, মিত্রতা—সবকিছুই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
প্রশ্ন: আগের প্রশাসন (বাইডেন প্রশাসন) যে বলেছিল—“আমাদের মিত্রতা আগের চেয়ে শক্তিশালী, প্রতিদ্বন্দ্বীরা দুর্বল হয়েছে, রাশিয়া-ইরান-চীন সবাই দুর্বল, আর তাতে কোনো নতুন যুদ্ধ লাগেনি”—এ নিয়ে আপনার মত কী?
সচিব রুবিও: প্রথমত, আমরা নতুন করে এগোতে চাই, তবে দেখতে হবে কী পরিস্থিতি আমরা পেয়েছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলব, আগের মূল্যায়ন সঠিক নয়। বাইডেন প্রশাসনের সময় স্টেট ডিপার্টমেন্ট আর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি)-র মধ্যেই বিরোধ ছিল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যেও ফাটল ছিল।
আজকের বিশ্বে রাশিয়ার সীমানা বেড়েছে; তারা আগের চেয়ে বেশি অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ রাখছে। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে, যা ভীষণ ধ্বংসাত্মক। ইউরোপে ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। আর অনেকে ভাবে, আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে সরে আসাই পুতিনকে সুযোগ দিয়েছিল আমাদেরকে দুর্বল বা অমনোযোগী ভাবতে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন আমাদের মিত্রদের হুমকি দিচ্ছে—তাইওয়ান, ফিলিপাইন, এমনকি আরও দূরের দেশগুলোকেও অর্থনৈতিক-সামরিক প্রভাবের মাধ্যমে চাপে রাখছে।
সুতরাং আমি বলব না ওরা (বাইডেন প্রশাসন) আমাদের মিত্রদের শক্তিশালী রেখেছে বা প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বল করেছে। বড় শক্তিগুলো গোপনে হলেও আমাদের দৃঢ় নেতৃত্ব চায়, স্পষ্ট অবস্থান চায়, আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে স্পষ্ট আর কার্যকর নেতা আধুনিক কালে কমই দেখা গেছে।
প্রশ্ন: প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মানসিক সামর্থ্যের অবনতির যে কথা শোনা গিয়েছিল, সেটির কারণে কি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতি হয়েছে?
সচিব রুবিও: আমাদের প্রতিপক্ষ আর মিত্ররা সবাই আমাদের নেতৃত্ব পর্যবেক্ষণ করে। যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা কীভাবে কথা বলে, সিদ্ধান্ত নেয়—এসব দেখে হিসাব কষে। বাইডেন প্রশাসনের সময় চীনের ধারণা শক্ত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্র হয় অবনমনের পথে, নয় ক্লান্ত—আর তারা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে। ওরা ভাবে, আমেরিকা আর পশ্চিমা দুনিয়ার পতন অনিবার্য, আর চীনের উত্থান অনিবার্য।
যখন আমেরিকান নেতৃত্ব তাদের চিরাচরিত ধারণার সঙ্গে মিলে যায়—যে আমরা দুর্বল—তখন তারা বেশি দ্বিধাহীন হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন: সেই যুক্তিতে ট্রাম্পের inauguration-এর দিন থেকেই আমরা কি বেশি নিরাপদ হয়ে গেলাম?
সচিব রুবিও: নিঃসন্দেহে, আমি নিজে দেখেছি। ধরুন, কলম্বিয়ার প্রসঙ্গ: ওই দেশের প্রেসিডেন্ট চুক্তি থাকা সত্ত্বেও প্লেন ফিরিয়ে নিলেন। অন্য যেকোনো প্রেসিডেন্ট হলে হয়ত নোট পাঠিয়ে অভিযোগ জানিয়ে, মাসের পর মাস আলোচনা করত। ট্রাম্প একদম ঘণ্টা-খানেকের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করে ফেললেন। এতে তারা বুঝতে পারল, তিনি সত্যিই যা বলেন, তা করেন।
ওখানকার বেশির ভাগ মানুষই মার্কিন-বন্ধুসুলভ, ওনারা হতবাক—কেন তাদের প্রেসিডেন্ট এমন পাগলামি করলেন! কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি রাষ্ট্রপতিকে উন্মাদ বলেছেন।
তবে হ্যাঁ, ট্রাম্পের অধীনে পররাষ্ট্রনীতি সহজ, কারণ সবাই জানে উনি যা বলেন, তা-ই করেন। এতে আমার কাজও সহজ হয়।
প্রশ্ন: মানে আপনি বলতে পারেন: “দেখুন, প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন, সেটাই সত্য।”
সচিব রুবিও: একদম। সবাই জানে অনেক রাজনীতিবিদ কথায় কথা বাড়ালেও কাজ করেন না। কিন্তু ট্রাম্প বললে কাজটি সত্যিই হয়ে যায়।
প্রশ্ন: “নিউ ইয়র্ক টাইমস” বলছে, কলম্বিয়ার মতো দুর্বল দেশের সঙ্গে আপনারা যা করলেন, তা হয়তো চীন বা রাশিয়া বা ইরানের ক্ষেত্রে পারবেন না। আপনারা হয়তো “বুলিং” করতে পারবেন না। আপনি কী বলবেন?
সচিব রুবিও: আমরা কাউকে “বুলিং” করছি না। কলম্বিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি ছিল; ওরা সেটি লঙ্ঘন করেছে। আমরা বলেছি, বিমানে আপনাদের নাগরিকদের ফেরত নেবার কথা ছিল, এখন অর্ধেক পথ থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন—তা হলে আপনারা এসেই তাদের নিয়ে যান। এখানে যেটা ঘটেছে, সেটা ঠকালো নয়, বরং ওদেরই করা অন্যায্যতা।
চীনের মতো দেশের সঙ্গে আচরণ অবশ্যই আলাদা। চীন পরাশক্তি, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আছে, বিশাল অর্থনীতি আছে। রাশিয়াও তাই। সুতরাং ক্ষমতাধর দেশের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট-স্তরে কথা হবে। কিন্তু আমি মনে করি না আমরা কলম্বিয়াকে “বুলিং” করেছি।
মিডিয়ায় কেউ কেউ বলছে, ওরা এখন চীনের দিকে ঝুঁকবে—ওরা এমনিতেই অনেক ক্ষেত্রে চীনের প্রভাব বলয়ে ছিল। আর আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা বন্ধ করতে পারি না এই ভয়ে যে “ওরা চীনের দিকে চলে যাবে।”
প্রশ্ন: আপনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি ফোনে কথা বলেছিলেন, শোনা গিয়েছিল তিনি আপনাকে সাবধান করে দিয়েছেন।
সচিব রুবিও: কেউ কেউ বলছে ওই কথোপকথনের চীনা আর ইংরেজি ভার্সনে কিছু অমিল ছিল—যেন আমাকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সত্যি বলতে, ফোনে তেমন কিছু আমি শুনিনি বা বুঝিনি। ওরা হয়তো নিজেদের দিক থেকে প্রোপাগান্ডার জন্য আলাদা অনুবাদ প্রকাশ করে।
সত্যিটা হলো—আমি বলেছি: তোমরা তোমাদের স্বার্থ দেখবে, আমরা আমাদের। আমরা বড় দুই শক্তি। যেখানে মিল হবে, কাজ করতে পারি; যেখানে অমিল, চেষ্টা করব সংঘাত এড়াতে। কিন্তু আমাদের স্বার্থে যা করা দরকার, করব।
প্রশ্ন: আপনি প্যানামায় যাচ্ছেন। সেখানে চীনের উপস্থিতি আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা খাল ফিরিয়ে চাই; চীনের হাতে কখনো দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল না।” তবে técnicamente ওদের হাতে খাল নেই, কিন্তু বন্দরে ওদের বড় বিনিয়োগ আছে। ব্যাখ্যা করবেন?
সচিব রুবিও: কয়েক বছর আগে প্যানামা তাইওয়ানকে অস্বীকার করে বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়, আর এর বদলে আগের প্রেসিডেন্ট প্রচুর চীনা অর্থ পেয়েছেন। তখন চীনারা দুই দিকের বন্দরে বিনিয়োগ করে, অনেক ক্রেন ও সুবিধা তৈরি করে, যা আসলে ঐতিহাসিকভাবে হংকং ভিত্তিক “বেসরকারি” কোম্পানি—কিন্তু বাস্তবে সবই চীনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে।
যদি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সংঘাত হয়, চীন খুব সহজেই খালে প্রবেশ-প্রস্থানে জট লাগাতে পারে। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিশাল ঝুঁকি। ট্রাম্প বলেছেন, “প্যানামা খাল আমরা তৈরি করেছি; আমরা রক্ত ও অর্থ ঢেলেছি। ওটা চীনের হাতিয়ার হতে পারে না।”
প্রশ্ন: তাহলে সমাধান কী? প্যানামা কি বলবে, “চীনের বন্দরে আপনারা থাকতে পারবেন না”?
সচিব রুবিও: ওগুলো হংকং-ভিত্তিক হলেও আসলে চীনা কোম্পানি। সুতরাং হ্যাঁ, আমাদের দৃষ্টিতে এটা চলতে পারে না। যদি চীন সেখানে শক্ত ঘাঁটি করে, হামলার সময় বা সংঘাতে সেটা ব্যবহার করবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
আরেকটা বিষয়: আমরা খাল বানিয়েছি, কিন্তু মার্কিন জাহাজগুলো অন্য দেশের চেয়ে বেশি টোল দিচ্ছে—যা অন্যায্য। প্যানামা সরকার বলে, “এটা স্বাধীন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে।” কিন্তু তারা তো নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সেটার দায় আমাদের কেন নিতে হবে?
প্রশ্ন: আপনারা কি খুব কঠোর হবেন না, যাতে ওরা পুরোপুরি চীনের কোলে চলে যায়?
সচিব রুবিও: খালের দুটি প্রধান বন্দরে চীনের নিয়ন্ত্রণ ইতিমধ্যেই। আমাদের নিরাপত্তা ইস্যু আটকাতে পারে না এই আশঙ্কায় যে ওরা অন্য কারো দিকে চলে যেতে পারে। তবে আমি আশা করি, সবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় থাকবে। প্যানামার বেশিরভাগ নেতৃত্বই যুক্তরাষ্ট্রপন্থী। কিন্তু আমাদের জন্য এটা মৌলিক স্বার্থের বিষয়।
প্রশ্ন: আসলে প্যানামার পেছনে আসল ইস্যু চীনের ক্রমাগত সম্প্রসারণ। আপনি আগেই বলছিলেন, চীন ১০ বছরের মধ্যেই হয়তো বিশ্ব চেহারা বদলে দিতে পারে।
সচিব রুবিও: হ্যাঁ, এমনকি তার আগেও। কারণ আধুনিক প্রযুক্তি—চিপ, ব্যাটারি, সবকিছু—দুর্লভ খনিজের ওপর নির্ভরশীল, যা চীন বিশ্বজুড়ে কিনে নিয়েছে। আমরা কোভিডের সময় দেখেছি, সামান্য মাস্ক পর্যন্ত আমাদের তৈরি করতে কষ্ট হয়। আবার ৮০-৯০% জেনেরিক ওষুধের উপাদান চীনে তৈরি হয়। ওরা চাইলে আমাদের সরবরাহ থামিয়ে দিতে পারে—এটা বড় leverage।
চীন সেটা করছেও—critical minerals রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে, প্রযুক্তিতে আমাদের ক্ষতি করার জন্য। সুতরাং ওরা শিপিং লেন, খনিজ, শিল্প—সব ক্ষেত্রেই প্রভাব বিস্তার করছে। আমরা এর মোকাবিলা না করলে বড় বিপদ।
প্রশ্ন: গ্রিনল্যান্ড প্রসঙ্গে জড়িত এটাও; ট্রাম্প বলেছেন আমাদের ভূমিকাও জোরালো হওয়া দরকার, কারণ চীন সেখানেও প্রভাব ফেলতে চায়।
সচিব রুবিও: আর্কটিক বা মেরু অঞ্চলে বিপুল সম্পদ আর নৌপথ আছে, যা বরফ গলার কারণে আরও ব্যবহারযোগ্য হচ্ছে। চীনের সেখানে সরাসরি উপস্থিতি নেই, তাই “বেসরকারি কোম্পানি”র ছদ্মবেশে কোনো বন্দর বা অবকাঠামো বানিয়ে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। যদি ওরা আর্কটিকে নিয়ন্ত্রণ পায়, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামরিকভাবেই আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করবে।
ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে গ্রিনল্যান্ড—কিন্তু সামরিক রক্ষণাবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রকেই নির্ভর করতে হয়। ট্রাম্প বলছেন, আমরা যখনই আক্রমণ হলে সুরক্ষা দিই, তখন কেন আমরা সেটির ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ নেব না?
প্রশ্ন: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রীর ফোনকলে গুঞ্জন আছে, ওখানে নাকি তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ডেনমার্ক বলছে, “আমরা বিক্রি করব না।” তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী? সামরিক বা অর্থনৈতিক চাপে রাখবেন?
সচিব রুবিও: প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি কিনতে চান। কূটনীতিতে এসব আলাপ ঘরের ভেতরেই হওয়া শ্রেয়। এটা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য ডেনমার্কের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও প্রভাব ফেলতে পারে।
কিন্তু এটা নিছক কোনো কৌতুক নয়। বহু বছর ধরেই অনেকে এ নিয়ে কথা বলছে। আমাদের জাতীয় স্বার্থ ঝুঁকিতে আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিতে “কিনে নেওয়া” একটা উপায় হতে পারে। এ ব্যাপারে কঠোর বা সহজ—সবই আলোচ্য। তিনি কোনো বিকল্প বন্ধ করে দেবেন না, কারণ ব্যবসায়িকভাবে আলোচনায় leverage দরকার।
প্রশ্ন: চার বছর পর কি আপনার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডের মালিক হবে?
সচিব রুবিও: দেখাই যাক। আমি বলতে পারি, চার বছর পর আমরা আমাদের আর্কটিক স্বার্থ অনেক বেশি সুরক্ষিত করতে পারব, প্যানামা খালে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে পারব, পশ্চিম গোলার্ধে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
মধ্য আমেরিকার অনেক দেশ আসলে অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক কারণে আমাদের সাথে কাজ করতে চায়, কারণ ওখানে “ট্রানজিট” দেশ হিসেবে অভিবাসন নিয়ে বিস্তর সমস্যা হয়। এই ধরনের অবৈধ প্রবাহ বন্ধ করার ব্যাপারে তারা আমাদের সহযোগী হতে পারে।
প্রশ্ন: কলম্বিয়ার প্রসঙ্গ আবার আসছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাইছেন অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠাতে—কানাডা আর মেক্সিকোও সেই তালিকায়। তিনি বলছেন, শনিবার থেকেই হয়তো শুল্ক বসিয়ে দেবেন যদি ওরা সাহায্য না করে। ওরা বলছে, “সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যাক।” আপনি কী মনে করেন?
সচিব রুবিও: আমি গতকাল কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, মেক্সিকোর সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত। দুটি প্রধান বিষয়:
এক. অবৈধ অভিবাসন; বিশেষ করে মেক্সিকোর অঞ্চল দিয়ে কার্টেলগুলো মানুষ পাচার করছে, ফেন্টানিল নিয়ে আসছে। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। মেক্সিকোকে এতে সহযোগিতা করতেই হবে।
দুই. আমরা মেক্সিকোর সঙ্গে বাণিজ্যে “চীনা ফ্রন্ট কোম্পানি” নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা মেক্সিকোতে পণ্য বানিয়ে নামমাত্র শুল্কে আমাদের বাজারে ঢুকছে। এ কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন।
কানাডার ক্ষেত্রেও সীমান্ত অনেক বড়। ওরাও চাইবে না পলায়নকারী অপরাধী বা মাদক কারবারীরা সেদিকে ঢুকে পড়ুক। আর ট্রাম্প মনে করেন, ওদের সঙ্গেও কিছু বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা আছে, সেটাও ঠিক করতে হবে।
প্রশ্ন: শনিবারে কি শুল্ক কার্যকর হবে?
সচিব রুবিও: সেটি প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত। তিনি শনিবার কিংবা এক সপ্তাহ বা এক মাস পরেও কার্যকর করতে পারেন। আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকব। তাঁর উদ্দেশ্য অবৈধ অভিবাসন আর বাণিজ্য বৈষম্য একসঙ্গে সামলানো।
প্রশ্ন: কে আগে ৫১তম রাজ্য হবে? কানাডা, না গ্রিনল্যান্ড?
সচিব রুবিও: (হাসি) এটা বেশ দূরের ব্যাপার। প্রেসিডেন্টের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, গ্রিনল্যান্ড আমাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিনে নেওয়া সম্ভব হলে সেটাই চান। আর কানাডার ব্যাপারে তিনি একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমি যদি শুল্ক দিই, ওদের কি অস্তিত্ব থাকবে? যদি নিজেরাই টিকতে না পারে, তাহলে রাজ্য হয়ে যাক।” এটাই ছিল তার নিপুণ রসিকতা।
প্রশ্ন: কিন্তু ওরা তো বলছে, ওরা যদি না পারে, তাহলে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেবে? কানাডা কি আমাদের “লাইটস অফ” করে দিতে পারবে?
সচিব রুবিও: সেটাও ওদের নিজেদের ক্ষতি করবে। এই বিদ্যুৎ ওরা আর কোথায় বেচবে? আসলে এটি মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, আমাদের শক্তির স্বাধীনতা থাকা কত জরুরি। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নিজেদের জ্বালানি উত্পাদন বজায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন: “নেটো” নিয়েও রিপাবলিকানদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে—অনেকে বলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটা দরকার ছিল, এখন আমরা কেন ইউরোপকে “পালছি”? ওরা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করুক। আপনি কী বলবেন?
সচিব রুবিও: ট্রাম্পের অবস্থান এখানে অন্যসব প্রেসিডেন্টের মতোই—ইউরোপিয়ান মিত্ররা নিজেদের প্রতিরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যয় করে না। পোল্যান্ড বা বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলো—রাশিয়ার কাছাকাছি—ওরা অনেক ব্যয় বাড়িয়েছে। কিন্তু জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো বড় অর্থনীতিগুলো নিরাপত্তায় কম ব্যয় করে, কারণ জানে আমেরিকা আছে। তারা বরং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় সে টাকা ঢালে। ফলে এ যেন আমাদের ওপর নির্ভরশীলতা, যাকে সত্যিকার মিত্রতা বলা যায় না।
আমরা চাই ইউরোপের দেশগুলোও শক্তিশালী হোক, যাতে ন্যাটো হয় প্রকৃত অর্থে একটি শক্ত জোট, যেখানে সবাই অবদান রাখে। তাই ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড এরা আমাদের ভালো মিত্র হতে পারে। আমি মনে করি, এই কথাগুলো ট্রাম্প জোর দিয়েই বলেছেন।
প্রশ্ন: ইউক্রেনের যুদ্ধ এখন রিপাবলিকানদের মধ্যেও বিতর্কের বিষয়। অনেকে বলে, রাশিয়া ভয়ংকর হলেও আমরা অনেক অর্থ ব্যয় করেছি, পরিস্থিতি অচল; সময় এসেছে আলোচনা করে একটা চুক্তি করার। আপনি কী বলেন?
সচিব রুবিও: আমরাও মনে করি পুতিন যা করেছে, তা জঘন্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা ইউক্রেনকে আশ্বাস দিয়েছিলাম যে ওরা রাশিয়াকে সম্পূর্ণ পরাজিত করতে পারবে। কিন্তু যা দেখছি, সেটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ, এক প্রকার অচলাবস্থা—এতে ইউক্রেন ধ্বংস হচ্ছে, মানুষ দেশছাড়া হচ্ছে। শেষমেশ কে এর পুনর্গঠন করবে?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, এখানে আলোচনাই সমাধান, যাতে যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে থেমে যায়। আলোচনা মানেই দুটি পক্ষকেই কিছু দিতে হবে। কীভাবে দেবে, সেটা কঠিন কূটনীতি। কিন্তু অন্তত আমাদের একজন প্রেসিডেন্ট আছেন, যিনি বোঝেন যে এই লড়াই অনন্তকাল চলতে পারে না; এটা থামাতে হবে।
প্রশ্ন: কে বেশি সমস্যা তৈরি করছে—পুতিন, না জেলেনস্কি? খবর আছে, ইউক্রেন আশা করছে পুতিন অন্যায় দাবি জানিয়ে ট্রাম্পকে বিরক্ত করবেন, এবং ট্রাম্প শেষমেশ ইউক্রেনের অবস্থানে আসবেন।
সচিব রুবিও: পাবলিক উচ্চারণ আর ব্যক্তিগত আলাপ আলাদা। পুতিনেরও দেশে নিজস্ব রাজনীতি আছে। জেলেনস্কির দেশেও মানুষ রাশিয়ার হাতে প্রচুর জুলুম সয়েছে, তাই রাশিয়াকে যা ইচ্ছে তা দিতে নারাজ। কিন্তু বাস্তবে, দুপক্ষই ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রই পারে এর মধ্যস্থতা করতে, আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে এটা সম্ভব। সহজ হবে না, সময় লাগবে।
প্রশ্ন: ইসরায়েল আর জিম্মিদের প্রসঙ্গ… এখনো আমেরিকান জিম্মি আছে। প্রথম ধাপের মুক্তিতে নাকি তিনজন আমেরিকান ফেরত আসবে। আপনার কি মনে হয়, আসবে? আর না এলে কী হবে?
সচিব রুবিও: মনে করি, আসবে। এটাই চুক্তি। কিন্তু আসল সমস্যা হলো গাজায় হামাসের মতো সংগঠন আছে, যারা ইসরায়েল ধ্বংস করতে চায়, অকল্পনীয় নৃশংসতা চালায়। ৭ অক্টোবরের ঘটনায় অমানবিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ দেখলাম। কোনো দেশ কি পারে এমন একটা সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পাশেই থাকার সুযোগ দিতে?
যুদ্ধবিরতি সাময়িক; মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে, জিম্মি মুক্তির পথ খুলেছে। তবে প্রত্যেক জিম্মির বদলে শত শত হামাস যোদ্ধা ছাড়া হচ্ছে—এটা অত্যন্ত অন্যায্য বিনিময়। তবু আমরা জীবনকে মূল্য দিই।
আগামীতে আবার কী হবে? গাজায় কে শাসন করবে? যদি আবারও হামাস ক্ষমতায় থাকে, তাহলে তো একই সমস্যা থেকে যাবে। লেবাননে হিজবুল্লাহ আছে, সিরিয়ায় ইরান-রাশিয়া আছে—সবই একটা জটিল চক্র। তবে সুযোগ আছে আজকের অস্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে সৌদি আরব আর ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি করার, ইরানকে কমজোরি করার। দেখতে হবে কীভাবে এগোই।
প্রশ্ন: ঘরোয়া বিষয়: ডোনাল্ড ট্রাম্প মাইক পম্পেওর নিরাপত্তা প্রত্যাহার করেছেন। অনেকে বলছে, ওনাকে বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলা হলো। আপনার মত?
সচিব রুবিও: প্রেসিডেন্টের এটা করার অধিকার আছে। গোয়েন্দা ঝুঁকির ওপর নির্ভর করে এসব সিদ্ধান্ত হয়। যদি ইরান সক্রিয়ভাবে সবাইকেই মারতে চায়, তাহলে তো সবারই সুরক্ষায় বিশাল বাহিনী লাগবে। তাই “ঝুঁকি বনাম ব্যয়” হিসাব করে দেখা হয়। প্রয়োজনে আবার বদলানো হবে।
প্রশ্ন: পররাষ্ট্র সহায়তা সাময়িক স্থগিত করে অনেক বিপদ ডেকে এনেছিল বলে অভিযোগ শোনা গেছে—জরুরি ওষুধ সরবরাহও নাকি আটকে ছিল। এখন আবার কিছুটা শিথিল হয়েছে। কেন শুরুতে এতটা কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন?
সচিব রুবিও: আমরা বলেছিলাম, ইসরায়েল-মিসর বাদে সব বিদেশি সহায়তা ৯০ দিনের জন্য “পজ” থাকবে, তবে জীবন রক্ষাকারী খাদ্য ও জরুরি পণ্যে ছাড় থাকবে। পরে দেখা গেল, কেউ কেউ যুক্তি দিল, “আমরা ওষুধ পাঠিয়ে রেখেছি, সেগুলো আটকে আছে।” আমরা বললাম, “ঠিক আছে, মুক্ত করে দিন।”
আসল বিষয় হলো, এই সাময়িক স্থগিতের উদ্দেশ্য ছিল একটা পরিষ্কার চিত্র পাওয়া। অনেক এনজিও, প্রকল্প—এগুলোতে কী কী ব্যয় হয়, কোথায় যায়। তথ্য চাইলে আগে দিত না। এখন দিচ্ছে, কারণ টাকা বন্ধ আছে। হয় ওদের প্রমাণ করতে হবে কেন এটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ, না হলে টাকা যাবে না।
এই “ফরেন এইড ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স” যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে। এক ডলারের মধ্যে ১২ সেন্ট প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছালে বাকি ৮৮ সেন্ট কোথায় যায়? আমরা জবাবদিহি চাই।
প্রশ্ন: ঠিক। শেষ দিকে বলি—আট বছর আগে আমাদের দুজনের মধ্যে ডিবেটে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের দুজনকেই অপমান করছিলেন। এখন আপনি তার অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এত পরিবর্তন কীভাবে হলো?
সচিব রুবিও: রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিক। তখন আমি ট্রাম্পকে চিনি না; পরে জানলাম। আমি সিনেটে ছিলাম, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেন—আমরা একসঙ্গে কাজ করে দেখলাম কত কিছু সম্ভব। ট্রাম্প একজন বাস্তব মানুষ, টিভিতে দেখা রূপের বাইরে তার মানবিক গুণও আছে।
আর আমরা এমন একটা পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি, যেখানে পরাজয়ের পরও দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। ভিন্ন দলে হলেও সেটা আশা করা হয়। তাহলে একই দলে হলে তো আরও বেশি করে সহযোগিতা করা উচিত।
আমি রাজনীতিতে এসেছি দেশসেবা করতে, ব্যক্তিগত শত্রুতা পুষে রাখতে নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গেও আমার পারস্পরিক শ্রদ্ধা গড়ে উঠেছে, যার ফল আমি আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রশ্ন: তিনি আপনাকে বরাবরই আক্রমণাত্মক ভাষায় আক্রমণ করতেন, আপনিও কম যাননি। ওই প্রাইমারি বিতর্কগুলো প্রায় এক দশক আগে হয়ে গেছে। কিন্তু “ডিপ স্টেট” নিয়ে যে কথা হয়, অনেকে মনে করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভেতরে আপনারা যা করবেন, কেউ কেউ তা ব্যর্থ করতে চেষ্টা করবে।
সচিব রুবিও: সত্যি কথা হলো, যে–কোনো বিশাল প্রতিষ্ঠানে কিছু কর্মী থাকে যারা হয়তো নতুন প্রশাসনের নীতি মানতে চায় না। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে দিয়েছি: আপনার ব্যক্তিগত মত যা-ই হোক, প্রেসিডেন্টের নির্দেশ পালন করতে হবে। না চাইলে বেসরকারি খাতে চলে যান। স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করবে।
এবং ট্রাম্প প্রশাসন এটা করেছেও। কেউ যদি এতে বিশ্বাস না করে, চেষ্টা করে বাধা দিতে—তাহলে সে এখানে থাকার দরকার নেই। আমেরিকান করদাতারা আপনাকে বেতন দিচ্ছেন, আপনি যদি প্রশাসনের নীতিকে বাধা দেন, তাহলে সেটা ঠিক নয়।
আমরা তাই এখানে এক নতুন পরিবেশ তৈরি করছি। প্রেসিডেন্টের নির্দেশমতো আমরা কাজ করব; কেউ যদি বিশ্বাস না করে, তারা অন্যত্র যেতে পারে। এটি আদর্শিক সমস্যা নয়, বরং ন্যায্য কর্তব্যবোধ।
(“ দ্য মেগিন কেলি শো” র ট্রান্সক্রাইব থেকে অনূদিত)
Leave a Reply