শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৪০)

  • Update Time : শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ৮.০০ পিএম

আর্কাদি গাইদার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

নিজনি নভগরোদে ট্রেন এসে পৌঁছল রাতে। রেলস্টেশন থেকে বেরিয়েই প্রকাণ্ড একটা চৌকো চত্বরে এসে পড়লুম। রাস্তার আলো পড়ে একেবারে আনকোরা নতুন রাইফেলের বেয়োনেটগুলো ঝকমক করছে দেখলুম।

চত্বরটায় একজন বেশ লালচে দাড়িওয়ালা লোক সৈন্যদের কাছে বক্তৃতা করছিল। বলছিল, স্বদেশের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনের কথা। ‘ঘৃণ্য জার্মান সাম্রাজ্যবাদীরা’ যে অবশ্যই অচিরে পরান্ত হবে তারও নিশ্চয়তা দিচ্ছিল লোকটি।

বক্তৃতা দিতে-দিতে লোকটি বারবার তার পাশে দাঁড়ানো এক বুড়ো কর্নেলের দিকে তাকাচ্ছিল। আর কর্নেলটিও তাঁর গোল-মতো টাক-মাথাটা বারবার নেড়ে সায় দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেন ওই লালচে দাড়িওয়ালা বক্তার কথাগুলো যে কত সঠিক তারই সার্টিফিকেট দিচ্ছিলেন।

বক্তাকে মনে হচ্ছিল খুবই পরিশ্রান্ত। কখনও হাতের তেলো দিয়ে বুক থাপড়াচ্ছিল সে, আবার কখনও একটা হাত, কখনও বা দুটো হাতই ওপর দিকে তুলছিল। বারবার আবেদন জানাচ্ছিল সৈনিকদের বিবেকের কাছে। শেষের দিকে ওর বোধহয় ধারণা হল, ওর বক্তৃতা সেই পাঁশুটে রঙের জমাট বাঁধা জনতার মর্মভেদ করতে পেরেছে। তাই হঠাৎ একটা হাত পাশের দিকে ছুড়ে তারপর একটা চক্কর দিয়ে ঘুরিয়ে এনে একেবারে গলা ছেড়ে ‘মাসাই’ জাতীয়-সঙ্গীত গাইতে শুরু করে দিলে।

হাতটা ঘোরানোর সময় বেশ একটা মজা হল। পাশে দাঁড়ানো কর্নেল বক্তার হঠাৎ এই উচ্ছ্বাস দেখে চমকে উঠে চট করে সরে যাওয়ায় তাঁর কানটা বক্তার চপেটাঘাত থেকে অতি অল্পের জন্যে বে’চে গেল। যাই হোক, গান শুনে এদিকে ওদিকে জনা কুড়ি কি জনা চল্লিশ লোক তার সঙ্গে গলা মেলাল। বাকি সবাই বেবাক চুপ করে রইল।

এরপর লালচে দাড়িওয়ালা বক্তাটি হঠাৎ গান থামিয়ে মাথার টুপিটা সোজা মাটিতে ছুড়ে দিল। তারপর মঞ্চ থেকে পড়ল নেমে।

বুড়ো কর্নেল আর কী করেন। অসহায়ের ভঙ্গিতে হাত দুটো দু-পাশে ছড়িয়ে দিয়ে মাথাটি নিচু করে তিনিও মঞ্চের সিড়ির রেলিঙ ধরে ধরে নেমে পড়লেন।

শুনলুম, এই সৈন্যদল হচ্ছে নতুন রঙরুট। শক্তিবৃদ্ধির জন্যে জার্মান ফ্রন্টে নাকি ব্যাটালিয়নটাকে পাঠানো হচ্ছে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024