আর্কাদি গাইদার
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
সৈন্যরা এরপর কুচকাওয়াজ করে গান গাইতে-গাইতে স্টেশনে ঢুকল। আর দু-পাশ থেকে ওদের দিকে ফুলের তোড়া আর নানান উপহার ছোড়া হতে লাগল। স্টেশন-প্ল্যাটফর্মে ওরা পৌঁছনো পর্যন্ত সবই চলল ভালোভাবে। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছে দেখা গেল কোথাও কারো একটা ভুলের জন্যে সকলের চা খাওয়ার উপযুক্ত গরম জল তৈরি নেই আর কয়েকটা মালগাড়ির কামরায় বিছানা পাতার উপযোগী যথেষ্ট পরিমাণে তক্তার বন্দোবস্ত হয়ে ওঠে নি। ফলে অসন্তুষ্ট সৈন্যরা ওইখানেই একটা জমায়েত ডেকে ফেললে।
জমায়েতে কর্তৃপক্ষের অননুমোদিত সব বক্তাকে দেখা গেল। চায়ের অসুবিধের কথা দিয়ে আলোচনা শুরু করে শেষপর্যন্ত সারা ব্যাটালিয়নটা হঠাৎ এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছল: ‘আর না, যথেষ্ট হয়েছে। দেশগাঁয়ে খেতখামার সব নষ্ট হয়ে গেল গিয়ে, জমিদারদের জমি এখনও ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হল নি, খালি যুদ্ধ-যুদ্ধ করে আমরা জ্বালাতন হয়ে গেলাম!’
বেরিয়ে দেখি আগুন পোহানোর জন্যে এখানে ওখানে কুণ্ড জ্বালানো হয়েছে। বাতাস ম-ম করছে চেরা কাঠের আঠার গন্ধে, মাখোরকা তামাক, কাছের স্টিমারঘাটায় জড়ো-করে-রাখা শুটকি মাছের গন্ধে আর ভলগা নদীর স্বচ্ছ সুবাতাসের সুবাসে।
দেখে শুনে উত্তেজিত, রোমণ্ডিত হয়ে ওই সব অগ্নিকুণ্ড ছাড়িয়ে, রাইফেল আর উত্তেজিত সৈন্যদের পেরিয়ে, চিৎকার-করা সব বক্তা আর আতঙ্কিত, ক্রোধোন্মত্ত সামরিক অফিসারদের পেছনে ফেলে রেলস্টেশনের সংলগ্ন অপরিচিত সব রাস্তার অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে হেটে চললুম আমি।
প্রথম যে রাস্তার লোকটিকে সরমোতো যাওয়ার পথ জিজ্ঞেস করলুম সে একটু অবাক হয়েই বললে:
‘আরে ইয়ার, এখেন থেকে হে’টে সরমোভো যাওয়া যায় না। নোকে ইস্টিমারে চেপে যায়। পঞ্চাশ কোপেক দাম নাগে ইস্টিমারে চাপতে, বুয়েছ? তবে এখন তো যেতি পারবে না, সকাল পর্যন্ত ওপিক্ষে করতি হবে।’
আরও কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক ঘুরে এক জায়গায় একটা পাঁচিলের গায়ে জমা-করা বড় বড় খালি প্যাকিং বাক্স দেখে তারই একটাতে ঢুকে পড়লুম। ভাবলুম, সকাল পর্যন্ত ওইখানে বসেই কাটিয়ে দেব। কিন্তু বসে বসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি কে জানে।
Leave a Reply