শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:১২ পূর্বাহ্ন

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৪৩)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ৮.০০ পিএম

আর্কাদি গাইদার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

অসহায় ক্ষোভে আঙুল কামড়ে একান্ত দুঃখে দাড়িয়ে রইলুম স্টিমারঘাটার একপাশে। দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে স্টিমারঘাটা আর স্টিমারের মধ্যে কলকলিয়ে বয়ে-যাওয়া তেলভাসা জলটুকুর দিকে তাকিয়ে রইলুম। তরমুজের খোসা, কাঠের কুচি, খবরের কাগজের টুকরো আর আরও সব জঞ্জাল জলে ভেসে যাচ্ছিল, তাই দেখছিলুম।

‘আচ্ছা, টিকিট কালেক্টরের কাছে একবার বলে দেখলে হয় না?’ মনে মনে ভাবছিলুম। ‘যদি গল্পো বানিয়ে বলি, আমি বাপ-মা মরা অনাথ ছেলে, বা ওই রকম কিছু? যদি বলি, অসুস্থ দিদিমাকে দেখতে যাচ্ছি? মশাই, দয়া করে যদি বুড়ো ভদ্রমহিলাকে একটু দেখতে যেতে দেন! তাহলে, কী হয়?’

তেলভাসা ঘোলা জলে আমার রোদে-পোড়া মুখখানার ছায়া পড়েছে, দেখতে পাচ্ছিলুম। ছোট-করে-ছাঁটা চুলসুদ্ধ বড়সড় একটা মাথা আর ইশকুলের টিউনিকের চকচকে পেতলের বোতামগুলোর ছায়া দুলছিল জলে।

নিশ্বাস ফেলে ভাবলুম, নাঃ বাপ-মা-মরা ছেলের ও-সব গল্পো চলবে না। অনাথ ছেলের এমন গোলগাল মুখ দেখে মোটেই কেউ বিশ্বাস করবে না।

বইয়ে পড়েছি, কত ছেলে কপর্দকশূন্য অবস্থায় জাহাজে খালাসির কাজ করেও দেশবিদেশ পাড়ি দেয়। কিন্তু এখানে ওই কায়দা খাটবে না, আমাকে শুধু নদী পার হতে হবে।

‘বলি, এখেনে কী কাজ তোমার? সরো, সরো!’ পেছনে কার কাপ্তেনি গলা শুনে ফিরে দেখি মুখে-বসন্তের-দাগওয়ালা ছোট্ট একটা ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে।

একটা বাক্সের ওপর একগোছা ইস্তাহার ছুড়ে ফেলে ছেলেটা আমার পায়ের তলা থেকে চট করে মোটা, নোংরা একটা আধপোড়া সিগারেটের টুকরো কুড়িয়ে নিল।

‘এঃ, আচ্ছা জবুথবু তো!’ বলে উঠল ছেলেটা। ‘এমন সিগারেটের টুকরোটা পেলে না তো?’

জানালুম, সিগারেটের টুকরোর জন্যে আমার প্রাণটা এমন কিছু বেরিয়ে যাচ্ছে না, কারণ আমি সিগারেটই খাই না। পরে পালটা প্রশ্ন করলুম, ওখানে ওর কী কাজ।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024