আর্কাদি গাইদার
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
‘কার? আমার?’ বলেই ছেলেটা জলে-ভেসে যাওয়া একটা চেলাকাঠের ঠিক মধ্যিখানে নিখুঁতভাবে থুথু ফেললে। ‘আমাদের কমিটির ইস্তেহার বিলি করচি আমি।’
‘কোন কমিটির?’
‘কোন কমিটি আবার? শ্রমিকদের কমিটি। তুমিও বিলি করবে?’
‘করতুম, কিন্তু এখন যে আমায় সরমোভো যেতে হবে। এদিকে আমার টিকিট নেই।’
‘সরমোভোয় তোমার দরকারটা?’
‘মামার কাছে যাব। মামা ওখানে ফ্যাক্টরিতে কাজ করে।’
‘খুব খারাপ,’ ছেলেটা ধমকের সুরে বললে, ‘পকেটে এট্টা পয়সা নেই আর উনি এসেছেন মামার সঙ্গে মোলাকাত করতি!’
‘পয়সা নিতে সময় পাই নি, ভাই! ব্যাপারটা হঠাৎই হল কিনা বাড়ি থেকে আমি পালিয়ে এসেছি।’ কথাগুলো হুড়মুড় করে পেট থেকে বেরিয়ে গেল।
‘সত্যি? সত্যি বলচ?’ খানিকটা অবিশ্বাস আর খানিকটা কৌতূহল নিয়ে ছেলেটা আমার সর্বাঙ্গে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর শোঁ করে একটা নিশ্বাস টেনে সহানুভূতির সঙ্গে বললে: ‘বাড়ি ফিরলি বাবার হাতে যা একচোট খাবে না।’
‘বাড়ি আমি আর ফিরছি না। তাছাড়া, আমার বাবাই নেই। জারের আমলে তাঁকে ওরা খুন করেছে। আমার বাবা বলশেভিক ছিলেন কিনা।’
‘আরে, আমার বাবাও তো বলশেভিক,’ আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ছেলেটা বললে, ‘তবে আমার বাবা বেঁ’চে আছে। জানো, আমার বাবা না মস্ত নোক, সরমোভোয় আমার বাবার চেয়ে বড় আর কেউ নেই। ওখেনে গিয়ে যারে খুশি শুধোও ‘পাভেল কোরচাগিন কোথায় থাকেন?’ আর অমনি সে কবে: ‘ও, কমিটির কথা কাচ্চ? তা, ভারিখায় তের-আকোপভের কারখানায় চলি যাও’। বুঝলে মশায়, আমার বাবা ওইরকম নোক!’
কথাটা শেষ করেই সিগারেটের পোড়া টুকরোটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে অনবরত-পিছলে-নেমে-আসা ট্রাউজার্সটা ও টেনে তুলল, তারপর এক দৌড়ে মিশে গেল ভিড়ে। এদিকে ইস্তাহারগুলো পড়ে রইল আমার পাশে।
একটা ইস্তাহার কুড়িয়ে নিয়ে পড়ে দেখলুম। তাতে লেখা রয়েছে, কেরেনষ্কি বিশ্বাসঘাতক। প্রতিবিপ্লবী জেনারেল কর্নিলভের সঙ্গে একটা চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চলেছে সে। ইস্তাহারটায় খোলাখুলি অস্থায়ী সরকারকে উৎখাত করার আর সোভিয়েত রাষ্ট্রশক্তি প্রতিষ্ঠা করার ডাক দেয়া হয়েছিল।
সকালবেলায় শোনা মজুরদের দুঃসাহসিক গানের চেয়েও ইস্তাহারের এই চড়া সুর আমায় অবাক করে দিল। হঠাৎ সেই ছেলেটা আবার কোত্থেকে এসে উদয় হল। মজুত করা হেরিং মাছের পিপেগুলোর আড়াল থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে এসে চে’চিয়ে বললে, ‘নাঃ, সুবিধে হল না, ইয়ার!’
Leave a Reply