শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

 “নির্বান নগরী” বাজার: এক খন্ড সংস্কৃতির উপহার

  • Update Time : শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ৯.৫৫ পিএম

রেজাই রাব্বী

রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই হ্রদের অথৈজল রাশির মাঝে অবস্থিত “ নির্বান নগর”  নামে আদিবাসী পাড়ার। সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে এই নির্বান নগর বৌদ্ধ মন্দির ও হস্তশিল্প মার্কেট। মাকের্টের পাশেই প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও কাপ্তাই হ্রদে ছোট বড় অনেক বোট ও লঞ্চ আসা যাওয়ার দৃশ্য যা সেখানে ঘুরতে আসা মানুষের মনকে করে আরও উৎফুল্ল। নিয়ে যায় কিছুক্ষনের জন্যে জীবনের একটা ভিন্ন মুহূর্তে।

এই নির্বান নগরের আদিবাসীদের নিজেদের হাতে বোনা বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন ডিজাইনের কাপড়,ব্যাগ,জামা বিক্রয় হয় খুব সূলভ মূল্যে আর এই অঞ্চলে জুমে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের ফল মূল, ডাব, ও চা-নাস্তা তো আছেই।

এখানে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের নিজেদের পোশাক নিজেরাই তৈরি করে থাকেন। তাদের প্রত্যেকের ঘরে রয়েছে নিজস্ব তাঁত। যা দিয়ে তারা চরকা ও তাঁতের সাহায্যে অত্যন্ত চমৎকার বস্ত্র তৈরি করে থাকেন। এমনকি হস্তশিল্প মার্কেটে অসংখ্য এখানে চাকমা নারীরা তাদের কাজের অবসরে বসে বসে বাশ ও রেশমি সুতা দিয়ে বানিয়ে থাকেন তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনোন-হাদি।  এগুলো তাদের অনেক ব্যায়বহুল পোশাকও বটে। চাকমা আদিবাসী মেয়েরা বিভিন্ন রংয়ের পিনোন-হাদি পরেন। তবে তাদের প্রধান রঙ কালো ও লাল।

ঝিমিৎ চাঙ্মা নামে তাঁত শিল্পীর সাথে কথা হয় সারাক্ষণ প্রতিবেদকের সাথে তিনি জানান, চাকমাদের ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি রয়েছে। এই হস্তশিল্প মার্কেটে নিজেদের হাতে বোনা অসংখ্য কাপড়ের দোকান আছে আর এই দোকান গুলোতে আদিবাসী মেয়ে বা মহিলারা পরিচালনা করেন।

রিমু দেব ভার্মা বলেন, একটি ওড়না তৈরি করতে খরচ হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং সেটি তৈরি করতে এক সপ্তার সময় লাগে। আর ওড়নাটি তারা ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন।

 জাহিদ নামে একজন সারাক্ষণ প্রতিবেদককে জানান, এখানকার আনারস খুবই সুমিষ্ট ও কম দাম হওয়ায় আনারসের প্রতি সবারই একটু আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে। আরো আছে ডাব। খাওয়ার পর্ব শেষ হলে পোশাক কেনার উদ্দেশে রওনা হবো।

ঢাকা থেকে ঘুরতে যাওয়া রাজু আহমেদ বলেন, আসছি একটা গ্রূপ নিয়ে রাঙামাটির সৌন্দৰ্য উপভোগ করতে। কিছুক্ষন আগে এলাম হস্তশিল্প বিক্রিকরা এই মার্কেটে। হাতের তৈরী পোশাক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রায় সব পণ্যই ভালো লাগার মতো, একটা পোশাকের দামাদামি চলছে দামে মিলেগেলে নিয়ে নিব।

আদিবাসীরা বলেন তারা প্রতিদিন সকালে রাঙ্গামাটি শহর থেকে এই নির্বান নগর বাজারে আসেন এবং সারাদিন বেচাকেনা করে সন্ধ্যায় আবার তারা তাদের নিজ ঘরে ফিরে যান। প্রতি দিন মার্কেটে অসংখ্য পর্যটকদের সমাগম ঘটে। অনেকে আসে ঘুরতে আর কেউ বা যায় কিছু কিনতে।

 এই নির্বান নগরের বাজারের মতই চারপাশে নানান ধরনের সৌন্দর্যে ভরপূর এই রাঙ্গামাটি জেলা। শুধুমনোমুগ্ধকর পরিবেশ বললেও কম বলা হয়।আগে বলা হতো বাংলার সুইজার‍্ল্যান্ড। আর সবুজের দিক থেকে ছিলো সুইজার‍্ল্যান্ড থেকে আরো এগিয়ে। অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়। বিশাল জলরাশি।ইচ্ছে করলেউপভোগ করা যায় জেলেদের মাছ ধরা উপভোগ করা। বাস্তবে কাপ্তাই হ্রদের বয়ে চলা স্রোতধারা আর প্রকৃতির অপার বৈচিত্রকে সঙ্গে নিয়ে সৌন্দর্যের রানী ‘রাঙামাটি’ ।

এ জেলার মানুষের খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যও বৈচিত্রময়, বা পরিবেশ ও মানুষের মন একসঙ্গে মিলে গড়া। এখানকার মানুষ বেশ অতিথি পরায়ন। যে কোন উত্‌সবের দিনে দেখতে পাওয়া যায় তাদের নিজস্ব কোরিও গ্রাফির নৃত্য।

ব্যাঙ সাধারনত তাদের অনেকের পছন্দের খাবার। ব্যাঙ তারা রান্না করে বা পুড়িয়ে খেতে বেশ পছন্দ করেন। চাকমাদের ঐতিহ্য হলো বাঁশের তৈরি দাবা। আর তামাক পুড়িয়ে কলকিতে দিয়ে ঘরে বাইরে বাজারে নৌকায় সব জায়গাতেই চাকমা নারী পুরুষরা এই ঐতিহ্যবাহী দাবা খেয়ে থাকেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024