মার্কো রুবিও
আমেরিকাকে অগ্রাধিকারে রাখার অর্থ হলো আমাদের নিজস্ব গোলার্ধের ওপর আরও নিবিড়ভাবে মনোযোগ দেওয়া। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম আন্তর্জাতিক সফর এই বার্তাই দেয়। আমি পানামা, এল সালভাদর, কোস্টা রিকা, গুয়াতেমালা এবং ডোমিনিকান রিপাবলিক সফরে যাচ্ছি। আমাদের পারস্পরিক অগ্রাধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করে আমরা আমাদের দেশ ও অঞ্চল উভয়ের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারি।
আমি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত আমার মতামতমূলক নিবন্ধে বলেছিলাম, দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি অন্য অঞ্চলে অতিমাত্রায় মনোনিবেশ করে নিজের গোলার্ধকে উপেক্ষা করেছে, ফলে অনেক সুযোগ নষ্ট হয়েছে এবং মিত্র ও বন্ধুদেশগুলোর প্রতি অবহেলা দেখা দিয়েছে। এখন সেই সময় শেষ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচ্চাভিলাষী পররাষ্ট্রনীতি শুরু হয় আমাদের ঘরের কাছ থেকেই—সীমান্ত সুরক্ষার মাধ্যমে। এই লক্ষ্যে কূটনীতি অত্যন্ত জরুরি। আমাদের আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা দরকার, যাতে অবৈধ অভিবাসন প্রবাহ থামানো যায় এবং যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা যায়। এসব আলোচনা সবসময় সহজ নাও হতে পারে, কিন্তু সেগুলো অপরিহার্য।
প্রেসিডেন্ট এমন এক সমৃদ্ধ পশ্চিম গোলার্ধের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে সবার জন্য সুযোগ রয়েছে। আমরা বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে পারি, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারি এবং আমাদের গোলার্ধের নিরাপত্তা বাড়াতে পারি।
এই সফরে আমি এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, কোস্টা রিকা, পানামা এবং ডোমিনিকান রিপাবলিক যাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অধিকতর সহযোগিতার মাধ্যমে এ দেশগুলো বিপুলভাবে লাভবান হবে। কোভিড মহামারিতে সুদূরপ্রসারী সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর আমেরিকার নির্ভরতায় যে ভঙ্গুরতা প্রকাশ পেয়েছে, তা আমাদের সংকেত দেয় যে গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ শৃঙ্খলকে পশ্চিম গোলার্ধের কাছাকাছি নিয়ে আসা প্রয়োজন। এটি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করবে এবং একই সঙ্গে আমেরিকার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সুরক্ষিত করবে।
আমাদের লক্ষ্য এসব দেশে একটি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির চক্র তৈরি করা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলে আরও বেশি কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি হবে, যা অভিবাসনের প্রলুব্ধতা কমিয়ে দেবে। একই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, যাতে তারা স্থানীয় পর্যায়ে অপরাধ দমন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। যখন এই অঞ্চলের অংশীদাররা নিজেদের উন্নয়নকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারবে, তখন তারা সহজেই চীনের মতো দেশের প্রভাবকে প্রতিহত করতে পারবে, যারা প্রায়ই কথার চেয়ে কম ডেলিভার করে।
ভূমধ্যসীমা ছাড়িয়ে ব্যাপক অভিবাসন আমাদের পুরো অঞ্চলকেই অস্থির করে তুলেছে। মাদক চোরাচালানচক্র—যাদের এখন যথার্থভাবেই বৈদেশিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে—তারা আমাদের সম্প্রদায়গুলো গ্রাস করছে, সহিংসতা ছড়াচ্ছে এবং ফেন্টানিলের মাধ্যমে আমাদের পরিবারকে বিষাক্ত করে তুলছে। কিউবা, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলার অবৈধ শাসনব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবেই এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বাড়িয়ে তুলছে। সেই সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব—যেমন পানামা খাল সংক্রান্ত সুযোগ—ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে অবস্থান নিচ্ছে।
আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সুদূরপ্রসারী প্রতিশ্রুতি বা কল্পনাপ্রসূত মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে নয়; এটি গড়ে উঠেছে বাস্তবভিত্তিক যৌথ স্বার্থের ভিত্তিতে। এটি হ‘ল সেই দৃষ্টিভঙ্গি, যা থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এখন থেকে কাজ করবে। আমরা সদিচ্ছাসম্পন্ন সকল জাতির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত, দৃঢ় বিশ্বাস যে তারা বুঝতে পারবে—আমরা একসঙ্গে কী করতে পারি।
আমাদের অংশীদারিত্বকে আরও নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে তোলার মাধ্যমে আমরা সবাই উপকৃত হব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটি আমার অন্যতম লক্ষ্য। এই ভূমিকা পালন করা সত্যিই বিরল সৌভাগ্যের বিষয় এবং আমি অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অসাধারণ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমাদের কাজের অগ্রগতি নিয়মিতভাবে আপনাদের জানাতে আমি উদগ্রীব।
মার্কো রুবিও, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
Leave a Reply