শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন

মেয়েটি এবং সূঁচ: বাস্তব জীবনের বিভীষিকা

  • Update Time : রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ৯.০০ পিএম

মাইকেল ও’সুলিভান

অস্কারের সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের জন্য মনোনীত ডেনমার্কের শ্বাসরুদ্ধকর, ধীরগতির থ্রিলার “দ্য গার্ল উইথ দ্য নিডল” অনেকের কাছে একটি ভয়াবহ চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিকৃত, বিদ্রূপাত্মক মুখের এক হ্যালুসিনেটরি উদ্বোধনী দৃশ্যের মাধ্যমে এই সাদাকালো নাটকটি এক দুঃস্বপ্নের মতো অনুভূতি সৃষ্টি করে।

কিন্তু যারা অতিপ্রাকৃত আতঙ্কের প্রত্যাশা করছেন, তারা হতাশ হবেন। পরিচালক ম্যাগনাস ভন হর্নের এই কঠোর ও অস্বস্তিকর গল্পটি পুরোপুরি বাস্তব জীবনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা পরিচালক “প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রূপকথা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি সত্য ঘটনার দ্বারা অনুপ্রাণিত।

১৯১৮ সালে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অস্ত্রবিরতির ঠিক পূর্বমুহূর্তে কাহিনী শুরু হয়। কোপেনহেগেনের একটি টেক্সটাইল কারখানার তরুণ সেলাইশিল্পী ক্যারোলাইন (ভিক কারমেন সোনের মনোমুগ্ধকর অভিনয়ে) তার শূন্য গৃহ থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর আশ্রয়ের সন্ধানে রয়েছে। তার সৈনিক স্বামী পিটার (বেসির জেসিরি) নিখোঁজ অথবা যুদ্ধে নিহত বলে মনে হচ্ছে। (পিটার আসলে কোন পক্ষের হয়ে যুদ্ধ করছে, তা স্পষ্ট নয়। যদিও ডেনমার্ক যুদ্ধে নিরপেক্ষ ছিল, কিছু ডেন যুদ্ধের জন্য জার্মানির পক্ষে লড়াই করেছিল। এছাড়া, ডেনিশ ব্যবসায়ীরা যুদ্ধরত উভয় পক্ষের কাছে সামগ্রী বিক্রি করতে পারত, যার ফলে ক্যারোলাইনের কারখানায় সামরিক ইউনিফর্ম তৈরির কাজ বেড়ে যায়, যেখানে সূঁচ প্রায়শই ভেঙে যাচ্ছিল।)

শীঘ্রই ক্যারোলাইন জানতে পারে যে পিটার যুদ্ধ থেকে আহত অবস্থায় ফিরে এসেছে, যার মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে গেছে, যা সিনেমার সূচনায় দেখা বিকৃত মুখগুলোর সঙ্গে মিলে যায়। সে তার দাগ ঢাকতে মুখোশের মতো একটি কৃত্রিম মুখাবরণ পরে থাকে। মরফিন তাকে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট থেকে সাময়িক মুক্তি দেয়।

কিন্তু স্বামীকে দেখে বিমুখ হওয়া ক্যারোলাইন শীঘ্রই আবিষ্কার করে যে সে গর্ভবতী—তার বসের (জোয়াকিম ফজেলস্ট্রুপ) সন্তান গর্ভে ধারণ করেছে। বসের অহংকারী মা (বেনেডিক্টে হ্যানসেন) সামাজিক অবস্থান নিচু হওয়ার কারণে তার ছেলেকে বিয়েতে বাধা দেয়। ফলে ক্যারোলাইন কর্মহীন, নিঃস্ব ও একা হয়ে পড়ে এবং সে তার গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেয়। গর্ভপাতের জন্য তার ব্যবহার করা যন্ত্র—একটি দীর্ঘ বোনা সূঁচ—চলচ্চিত্রের শিরোনামের অনুপ্রেরণা।

এমন সময়ে হাজির হয় ডাগমার (ট্রিনে ডিরহোলম), এক বৃদ্ধা যিনি একটি ক্যান্ডি শপ চালান এবং অবাঞ্ছিত শিশুদের কালোবাজারি করেন। তিনি ক্যারোলাইনকে তার গর্ভপাত করতে বাধা দেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে তার সন্তানকে একটি ভালো বাড়ি খুঁজে দেবেন। পরে, ডাগমার তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়, যেখানে ক্যারোলাইন সাত বছর বয়সী এক মেয়ের জন্য দুধমাতা হিসেবে কাজ করে। সেই মেয়ে ডাগমারের কন্যা কি না, তা নিশ্চিত নয়।

একজন সাত বছর বয়সী শিশুর জন্য দুধমাতা? এটি চলচ্চিত্রের অন্যতম অস্বস্তিকর উপাদান।

কিন্তু সিনেমাটি এখানেই শেষ নয়। এটি ধীরে ধীরে আরও ভয়ঙ্কর ও অস্বস্তিকর সত্য উন্মোচন করতে থাকে। এ ছাড়া, চলচ্চিত্রে আরও কিছু অস্বাভাবিক দৃশ্য রয়েছে: একটি কার্নিভাল ফ্রিক শোতে পিটার কাজ পায়, যেখানে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে প্রদর্শিত হয় এক স্থূলকায় দাড়িওয়ালা মহিলা। তিনি মঞ্চে এসে তার বুক উন্মুক্ত করেন এবং এক বামন ব্যক্তিকে, যাকে শিশু হিসেবে সাজানো হয়েছে, স্তন্যপান করান।

অনেক সময়, “দ্য গার্ল উইথ দ্য নিডল” ডেভিড লিঞ্চের অতিপ্রাকৃত “ইরেজারহেড” চলচ্চিত্রের মতো দুঃস্বপ্নময় অনুভূতি সৃষ্টি করে। ভন হর্নের ফ্রেমের প্রতিটি কোণ যেন কালো তেলচিটে ময়লায় আচ্ছন্ন। ক্যারোলাইনের বড় বড় ভীত চোখ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাখে। সোনের অভিনয় ক্রমাগত স্নায়বিক টানাপোড়েন সৃষ্টি করে, যা কখনো নীরব আত্মসমর্পণে, কখনো প্রচণ্ড ক্রোধে প্রকাশ পায়। ভন হর্ন ও লিন ল্যাঙ্গেবেক নুডসেনের যৌথ চিত্রনাট্য ধীরগতিতে আবর্তিত হয়, কিন্তু মাঝে মাঝে তা বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে।

এটি এক নারীর গল্প। চলচ্চিত্রের অধিকাংশ পুরুষ চরিত্র—ক্যারোলাইনের বাড়িওয়ালা, বস/প্রেমিক, ডাক্তার, এমনকি ডাগমারের কামুক প্রেমিক—প্রদর্শিত হয়েছে দুর্বল, শোষক বা উদাসীন হিসেবে। একমাত্র পিটার ক্যারোলাইনের শিশুকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন করার প্রস্তাব দিয়ে সামান্য মানবিকতা প্রদর্শন করে।

কিন্তু সবচেয়ে আতঙ্কজনক দিক হলো ডাগমারের বিকৃত প্রতিক্রিয়া, যা সে ক্যারোলাইনের এবং অন্যান্য তরুণ নারীদের দুর্দশার প্রতি দেখায়। সে ব্যাখ্যা করে, “পৃথিবী একটি ভয়ঙ্কর জায়গা। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে তা নয়।”

অবশেষে, ডাগমার নিজেও সেই ভয়াবহতার অংশ হয়ে ওঠে, নিজের অপরাধবোধকে নেশার মাধ্যমে দমন করার চেষ্টা করে।

“দ্য গার্ল উইথ দ্য নিডল” দর্শকদের জন্য কোনো মুক্তি বা সান্ত্বনার পথ রাখে না। এটি শুধু ডাগমারের কটু সত্যটি মনে করিয়ে দেয় না—যে জীবনের নিষ্ঠুরতা, যেমন অবাঞ্ছিত সন্তান, যুদ্ধ, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, লজ্জা, নির্ভরতা এবং বৈষম্য, আমাদের কল্পিত যে কোনো আতঙ্কের চেয়ে ভয়ঙ্কর। এটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে সেই নির্মম বাস্তবতা দেখিয়ে দেয়।

(রেটিং: অনির্ধারিত। অ্যাঞ্জেলিকা ফিল্ম সেন্টার মোজাইক-এ প্রদর্শিত। এতে রয়েছে সহিংসতা, ভয়ঙ্কর দৃশ্য, যৌনতা, নগ্নতা ও মাদকাসক্তির উপাদান। চলচ্চিত্রটি ড্যানিশ ভাষায় সাবটাইটেল সহ ১২৩ মিনিটের দৈর্ঘ্যের।)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024