সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
১. উত্পাদনকারীদের পাওনা সঠিকভাবে শোধ করা সম্ভব হচ্ছে না
২. ফার্নেস ওয়েল আমদানী ও কয়লা আমদানীতে অর্থ সংকট
৩. গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়
৪. রমজান ও সেচ মৌসুম একই সঙ্গে, যা বিদ্যুতের চাহিদা আরো বাড়াবে
গত বছরের তুলনায়, চলমান শীতে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং দেখা যাচ্ছে, যদিও তা ততটা গুরুতর নয়। তবে, রমজান মাসের আগমন ও সেচ মৌসুমের চূড়ান্ত সময় ঘনিয়ে আসার কারণে গ্রাহকরা আশঙ্কা করছেন যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যদি বন্ধ থাকে, তাহলে গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সংকট তীব্র হতে পারে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) গত দুই বছর ধরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের পাওনা পরিশোধে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে।
বিপিডিবির আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে, যার ফলে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পাওনার পরিমাণ প্রায় ৪০০ বিলিয়ন টাকা ছুঁয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন টাকা বকেয়া, যার মধ্যে ১০০ বিলিয়ন টাকা শুধুমাত্র ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য এবং বাকি ৬০ বিলিয়ন টাকা অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের জন্য।
গত বছর পর্যন্ত ১০ শতাংশ এলসি মার্জিন দিয়ে ফার্নেস অয়েল আমদানি করা গেলেও, এবার ব্যাংকগুলো ১০০ শতাংশ মার্জিন দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাওনাদি দ্রুত পরিশোধ করা না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা তহবিল সংকটের কারণে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং ব্যাংকগুলো এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) মার্জিন দিতে রাজি হচ্ছে না।
তারা সরকারকে অনুরোধ করেছেন যে কমপক্ষে ২৫-৩০ বিলিয়ন টাকা দ্রুত পরিশোধ করা উচিত, যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো রমজান মাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখতে পারে।
অপরিশোধিত পাওনার কারণে কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা হয়তো আসন্ন গ্রীষ্মে নজিরবিহীন লোডশেডিং এর কারণ হতে পারে।
বিপিডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ফার্নেস অয়েল-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কম থাকার পাশাপাশি কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় গত বছরও বড় ধরনের লোডশেডিং হয়েছিল।
পায়রা ১,২৪৪ মেগাওয়াট কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হওয়ার ফলে বিদ্যুৎ সংকট আরও তীব্র হয়েছিল, কারণ ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি সম্ভব হয়নি।
গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদন বাড়ানোর সম্ভাবনাও কম, কারণ বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি পুনরায় গ্যাসিফাই করা হচ্ছে, যা প্রায় সর্বোচ্চ ক্ষমতা।
বর্তমানে পেট্রোবাংলা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, মাত্র ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে, যা গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ ১,২০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে, তবে এটি চাহিদার মাত্র অর্ধেক।
২০২৪ সালের গ্রীষ্মে বাংলাদেশে গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, যার ফলে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ঢাকায় ২০২৪ সালের ২৮ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং যশোরে ৩০ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
অত্যধিক তাপপ্রবাহের ফলে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রথমবারের মতো তাপপ্রবাহ সংক্রান্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা চালু করেছিল।
বিদ্যুৎ উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও, দেশে ব্যাপক লোডশেডিং অব্যাহত ছিল, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে।
জাতীয় লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল দুপুর ২টায় বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ৩,১৯৬ মেগাওয়াট।
Leave a Reply