● নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট নিয়ে ডিপসিক (DeepSeek) কী অর্জন করতে চলেছে, এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কী প্রভাব পড়তে পারে? চীনা এই প্রতিষ্ঠানটি চ্যাটজিপিটি-র (ChatGPT) মতোই শক্তিশালী পরিষেবা প্রায় অর্ধেক খরচে সরবরাহ করতে সক্ষম বলে দাবি করেছে। ফরিদ বলছেন, এ ঘটনার জেরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে আমেরিকার কৌশল নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
● ওয়াশিংটন চীনের এআই-খাতের অগ্রযাত্রা থামানোর লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু ফারিদের মতে, এ পদক্ষেপ হয়তো চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় নতুন এআই সক্ষমতা হাতে পাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু কয়েক মাস পেছনে রাখতে পারবে। তাছাড়া, এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীন উন্নত প্রযুক্তিতে প্রয়োজনীয় খনিজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। এর ফলাফল আসলে কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
● এরপর: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি এখন বাস্তব। এই সপ্তাহান্তে তিনি কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫% শুল্ক এবং চীনের পণ্যে ১০% শুল্ক আরোপ করেছেন (কানাডিয়ান জ্বালানিকে আংশিকভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেটিতে ১০% শুল্ক)। এর জবাবে কানাডা ও মেক্সিকো কী করবে? ফারিদ কথা বলেছেন ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের (Chrystia Freeland) সঙ্গে, যিনি কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। গত ডিসেম্বরে ফ্রিল্যান্ড মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি টেসলা গাড়ি ও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ওয়াইন, বিয়ার ও স্পিরিটসে ১০০% পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন।
● তার পরে: ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে—এমন অভিযোগ নিয়ে আলোচনা। “বিয়িং জিউইশ আফটার দ্য ডেস্ট্রাকশন অব গাজা” গ্রন্থের লেখক পিটার বাইনার্ট (Peter Beinart) ব্যাখ্যা করছেন কেন তিনি একসময় ইসরায়েল সমর্থন করতেন, আর এখন তার কঠোর সমালোচকে পরিণত হয়েছেন।
● টেক উদ্যোক্তা ও লিঙ্কডইন-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান (Reid Hoffman) জানাচ্ছেন কেন তিনি এআই নিয়ে আশাবাদী এবং কেন তিনি চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের নতুন এআই মডেল নিয়ে বেশি উৎকণ্ঠিত নন।
● সবশেষে: লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের (LSE) অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক কেয়ু জিন (Keyu Jin) দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে ফরিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন—কীভাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন বাণিজ্যযুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।
বৃহত্তর এআই-প্রশ্ন
ডিপসিকের খবর কিংবা কোন প্রযুক্তি সংস্থা এআই থেকে বেশি মুনাফা ঘরে তুলবে—এসব প্রশ্ন একপাশে রাখলে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে এআই প্রতিযোগিতার ব্যাপারটি বৃহত্তর ঝুঁকি ইঙ্গিত করে, যা ফরিদ আজকের জিপিএসে উল্লেখ করেছেন। চীনের এআই-সংক্রান্ত প্রযুক্তি-উন্নয়নের পথ বন্ধ করে দিতে গিয়ে, অথবা উচ্চপ্রযুক্তি খাত থেকে পুরোপুরি চীনকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে, যুক্তরাষ্ট্র এমন এক অনিয়ন্ত্রিত প্রতিযোগিতার সূচনা করতে পারে যেখানে এআই ক্ষমতা লাগামছাড়া গতিতে বাড়তে থাকবে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির এমন দৌড় পরমাণু অস্ত্র-সহ সামরিক ক্ষেত্রে সুপারইনটেলিজেন্স ব্যবহারের দিকে চালিত করতে পারে। এটি সহজেই বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে, ফারিদ সতর্ক করছেন।
এই বিষয়েই এমআইটি টেকনোলজি রিভিউতে (MIT Technology Review) সম্প্রতি অ্যালভিন ওয়াং গ্রেলিন (Alvin Wang Graylin) ও পল ট্রিওলো (Paul Triolo) লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এআই-অস্ত্র প্রতিযোগিতায় কারও জয় নেই।
অনেক এআই বিশেষজ্ঞই সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতে কম্পিউটার মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়ে উঠলে তা মানবজাতির অস্তিত্বই হুমকির মুখে ফেলতে পারে। কিন্তু গ্রেলিন ও ট্রিওলো মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের শূন্য-যোগ প্রতিযোগিতা এবং “জঙ্গি সংগঠনসহ বিভিন্ন দূরভিসন্ধিমূলক গোষ্ঠীর” হাতে এআই চলে যাওয়ার ঝুঁকি আরো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
তাঁদের মত হলো, বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা ও মানদণ্ড প্রয়োজন, যাতে এআই-এর বিকাশ ও ব্যবহার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। “বাস্তবে, অধিকতর সক্ষম এআই ক্রমেই ‘দুষ্ট’ হয়ে উঠবে—এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য গবেষণা নেই,” তাঁরা লিখেছেন। “পরিবর্তে আমাদের উচিত বর্তমান ‘সবচেয়ে দ্রুত এগোনো বনাম সর্বনাশের আশঙ্কা’ ধরনের ভুল ধারণা ভেঙে যৌথভাবে নিরাপদ ও সমন্বিত অগ্রগতির দিকে নজর দেওয়া। … আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে দৌড়াতে থাকলে পারস্পরিক ক্ষতি ছাড়া আর কিছু পাব না। বরং সহযোগিতায় মনোযোগী হলে সবাইকে নিয়ে সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতির বড় চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানের সুযোগ এনে দিতে পারে, তবে সেটি নির্ভর করছে আমরা একে প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেব, না সহযোগিতামূলক পথ বেছে নেব তার ওপর।”
ট্রাম্পের ‘হার্ডবল’ রাজনীতি—কিন্তু শেষ অবধি কে খেলায় জিতে যাবে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বপরিস্থিতিতে ‘শক্তির রাজনীতি’ ফিরিয়ে আনতে চান। অনেকে তাকে নিছক ‘নির্বিশেষবাদী’ বা ‘আইসোলেশনিস্ট’ ভাবলেও, পল পোস্ট (Paul Poast) ওয়ার্ল্ড পলিটিকস রিভিউতে (World Politics Review) লিখেছেন, ট্রাম্প আসলে উনিশ শতকের কায়দায় বিশ্বের প্রধান শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পরিণত করতে চান—যেন তারা নিজেদের স্বার্থে প্রয়োজনে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে, কিন্তু স্থায়ীভাবে এক শান্তিপূর্ণ বৈশ্বিক শৃঙ্খলা গড়ে তোলার জন্য বিশেষ উদ্যোগী হবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অন্তত কথিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এমন একটা আদর্শ ধরে রেখেছিল।
এতে কী ঝুঁকি আছে? ফরেন অ্যাফেয়ার্সে (Foreign Affairs) ইভো এইচ. ডালডার (Ivo H. Daalder) ও জেমস এম. লিন্ডসে (James M. Lindsay) সতর্ক করছেন—যুক্তরাষ্ট্র হয়তো অভিজ্ঞ অন্য দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীকে সামনে পেয়ে একসময় পিছিয়ে পড়তে পারে।
তাঁদের ভাষায়, “ট্রাম্পের এই নতুন ‘শক্তির রাজনীতি’ বাস্তবে কার্যকর করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের হাত শক্তিশালী বলেই মনে হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি, সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও সবচেয়ে অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। কিন্তু একটা বড় দূর্বলতা হল, যুক্তরাষ্ট্রের এ ক্ষেত্রে নেই উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা। সরাসরি শক্তিনির্ভর রাজনীতি (নেগেট পাওয়ার পলিটিকস) তাদের কাছে নতুন মাঠ, অথচ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে এটি চিরপরিচিত অঙ্গন। প্যাক্স আমেরিকানা দীর্ঘদিন ধরে তাদের ভূরাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ দমিয়ে রেখেছিল। এখন তারা মিলিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব করতে চেষ্টা চালাবে, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথে। আর ট্রাম্পের মতো তাদের ভিতরে কোনো ভারসাম্য বজায় রাখা বা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বাধ্যবাধকতা নেই। তারা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়, ট্রাম্পের এই জুয়া ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি বিশ্ব দুই-ই কম সুরক্ষিত ও কম সমৃদ্ধ হয়ে পড়বে।”
Leave a Reply