ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
গুলো দিয়ে দাড়ীটাকে চিকণ করতে করতে মৃদু গলায় ফের বললেন: “কিন্তু, কি পাপের?”
ডিয়াল’বভ থেকেই-টডর-অন পর্যন্ত যে রাস্তা গেছে, সেই রাস্তায় তাঁর সংগে একবার বেড়াছিলাম। তিনি যুবকের মতো হাল্কা পা ফেলে হাঁটছিলেন। আমাকে দৃপ্তভাবে বললেন: “দেহটা মানুষের মনের পোষা কুকুর হয়ে থাকবে, তার হুকুমে ছুটবে। কিন্তু আমর-আমরা কি করি? দেহটা শাসন করে, দৌরাত্ম্য করে, আর মন নিরুপায় অসহায়ের মতো তাকে অনুসরণ করে।”
তিনি হৃৎপিণ্ডের ঠিক উপরে বুকে শক্ত ক’রে কয়েকবার দলা দিলেন।
ভ্রূ দুটি উপরের দিকে তুললেন, তারপর কী যেন অকস্মাৎ স্মরণ ক’রে ব’লে চললেন, “মস্কাও শহরে এক শরৎকালে একবার সুপাবিঅভ গেটের কাছাকাছি একটি গলিতে একটি মাতাল মেয়েকে নর্দমায় প’ড়ে থাকতে দেখেছিলাম। একটা বাড়ির উঠান থেকে নোংরা জল এসে গড়িয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তার ঘাড় আর পিঠের তলা দিয়ে। সে এই ঠাণ্ডা জলে প’ড়ে কাঁপছিল, কাৎরাছিল আর অস্ফুট গলায় বিড়বিড় ক’রে কি বকছিল, কিন্তু উঠতে পারছিল ন।”
তিনি শিউরে উঠলেন। চোখ দুটিকে অর্ধনিমীলিত করলেন, তারপর মাথা নেড়ে ধীরকণ্ঠে ব’লে চললেনঃ “এসো, এখানে বসি।… মাতাল মেয়ের মতো ভয়ংকর এবং জঘন্য জিনিষ আর নেই। আমি তাকে ওঠার জন্যে সাহায্য করতে চাইলাম। কিন্তু সে উঠতে পারলো না। আমার অত্যন্ত বিশ্রী লাগলো। মেয়েটা এমন পিছল আর নোংরা যে আমার মনে হোলো, আমি যদি ওকে ছুঁতাম, তবে সারা একমাস ধরে-ও আমার হাত ধুলে আমি তা পরিষ্কার করতে পারতাম না। ভয়াবহ। রাস্তার পাশে একটি ছোকরা বসেছিল।
ছেলেটি বেশ চটপটে, চোখদুটো কটা। তার ছ গাল গড়িয়ে চোখের জল পড়ছিল। সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, আর কেবলই নিরুপায় হ’য়ে বলছে “মা-মা, ওঠো না, মা….।” মেয়েটি হাত নেড়ে অস্ফুট কণ্ঠে কথা বললো, মাথা তুললো-আবার পরক্ষণেই ছলাৎ ক’রে তার ঘাড়টা নোংরার ভেতরে ডুবে গেলে।”
Leave a Reply