ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
তিনি নীরব হলেন। তারপর চারিদিকে একবার তাকিয়ে কতকটা ফিসফিস ক’রেই বললেন, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, ভয়ানক। তুমি কি অনেক মাতাল মেয়ে দেখেছ? অনেক-? ও হরি! না, না, এদের সম্বন্ধে তুমি লিখো না, কখনো লিখো না।”
“কেন?”
তিনি আমার চোখের পানে সোজা এক দৃষ্টিতে তাকালেন, মৃদু হেসে আমারই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘কেন?” তারপর চিন্তাজড়িত ভাবে ধীরে ধীরে বললেন, “জানি না, কেন। কথাগুলো আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো, কোনো নোংরা জিনিষ সম্পর্কে লেখাটা-ও লজ্জাজনক। কিন্তু না লেখাই বা উচিত কেন? হ্যাঁ, সব কিছু সব কিছু সম্পর্কেই লেখা দরকার।”
তাঁর চোখে জল এলো। তিনি চোখ মুছে মৃদু হেসে রুমালের দিকে তাকালেন। আবার তাঁর কুঞ্চিত গণ্ড ব’য়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। বললেন, “আমি কাঁদছি। আমি বুড়ো মানুষ। ভয়াবহ কোনো স্মৃতি মনে পড়লেই আমার বুকের ভেতরটা যেন ছিঁড়ে যায়।”
তারপর সস্নেহে আমার কনুই-এ মৃদু স্পর্শ দিয়ে বললেন, “তুমিও -তোমার-ও যদি জীবনের দিনগুলি ফুরিয়ে আসে-আর সব কিছুই রয়ে যায় আগের মতো-তবে তুমি-ও, তুমি-ও কাঁদবে, আমার চেয়েও কাঁদবে। তাই সব কিছুই লেখা দরকার, সব কিছু সম্পর্কে, সব কিছু। নইলে ওই ছোটো ছেলেটা হয়তো ব্যথা পাবে, আমাদের তিরস্কার করবে, বলবে-‘না, এ মিথ্যা, এর সবটুকু সত্যি নয়।”
তারপর অকস্মাৎ তিনি নিজেকে ঝেড়ে নিয়ে স্নেহসিক্ত গলায় বললেন: “নাও, এখন তুমি আমায় একটা গল্প বলো। গল্পগুলি চমৎকার বলো তুমি। কোনো ছেলে সম্পর্কে বলো, তোমার নিজের ছেলেবেলা সম্পর্কে। তুমি যে কোনো দিন ছেলে ছিলে, এ কথাটা সহজে ভাবা-ও যায় না।
Leave a Reply