শরিফাহ মহসিনাহ আব্দুল্লাহ ও লুকমান হাকিমের প্রতিবেদন
একজন সীমান্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা বলছে, কেলান্তানে সীমিত কর্মসংস্থানের সুযোগই সুনগাই গোলক নদীর মাধ্যমে পণ্য চোরাচালানের অন্যতম প্রধান কারণ। নতুন গঠিত মালয়েশিয়ান সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন প্রচেষ্টা এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারে।
সীমান্ত সংস্থার নতুন উদ্যোগ
১২,০০০ জন সদস্য থাকবে ১৪১টি প্রবেশপথে
২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৭,২৭৪ জন গ্রেফতার
৪৭০ মিলিয়ন রিঙ্গিত মূল্যের চোরাচালান পণ্য আটক
কেলান্তানে চোরাচালানের প্রবণতা
মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তে মানব পাচার, মাদক চোরাচালান ও অবৈধ পণ্যের ব্যবসা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
জেনারেল অপারেশন ফোর্স (জিওএফ) দক্ষিণ-পূর্ব ব্রিগেডের কমান্ডার দাতুক নিক রস আজহান নিক আবদ হামিদ জানুয়ারি ২৩ তারিখে বলেন, সুনগাই গোলক এখন চোরাচালানকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে। এখানে উচ্চ বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে।
সুনগাই গোলক নদী মালয়েশিয়ার রানতাউ পানজাং ও দক্ষিণ থাইল্যান্ডের সুনগাই গোলককে আলাদা করে। তিনি বলেন, “চোরাচালান বাড়ছে এবং বাজেয়াপ্ত পণ্যের পরিমাণও বাড়ছে। পুলিশ এই হুমকির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
চোরাচালানের কারণ ও প্রতিরোধ
নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, সস্তা থাই পণ্যের চাহিদা এবং সীমান্তে সুরক্ষা প্রাচীর না থাকায় চোরাচালান সহজতর হচ্ছে।
নিক রস আরও বলেন, “প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা চোরাচালান এবং সীমিত চাকরির সুযোগ এই সমস্যাকে আরও প্রকট করছে।”
থাইল্যান্ডের সঙ্গে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা বহু বছর ধরে আলোচনায় রয়েছে। কেলান্তানের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দাতুক মোহাম্মদ ফাদজলি হাসান মনে করেন, চোরাচালান দমনে এই প্রাচীর অত্যন্ত জরুরি।
সাম্প্রতিক অভিযানে চোরাচালানের চিত্র
২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৬,০০০টিরও বেশি চোরাচালান মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এই সময়ে ৪৭০ মিলিয়ন রিঙ্গিতেরও বেশি মূল্যের অবৈধ পণ্য আটক করা হয়েছে।
এই সময়ে ৭,২৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬,২৬৩ জন পুরুষ এবং ১,০১১ জন নারী। তারা চোরাচালান করছিল প্রধানত থাই খাবার, প্রসাধনী এবং গবাদি পশু। এইসব পণ্য সীমান্ত বরাবর ১৪০টিরও বেশি অবৈধ জেটি ব্যবহার করে পাচার করা হয়।
নিক রস বলেন, “চোরাচালান চক্র শক্তভাবে গেঁথে গেছে। জিওএফ-এর টহল ও অভিযান সত্ত্বেও প্রতিবছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।”
চোরাচালানকারীদের জীবনের বাস্তব চিত্র
এমনই এক চোরাচালান চক্রের সদস্য ২৫ বছর বয়সী ইজানি (ছদ্মনাম), যিনি রানতাউ পানজাংয়ের কাছে কাম্পুং লুবোক সেতোল গ্রামের বাসিন্দা। চাকরির অভাবের কারণে পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়ায় তিনি থাইল্যান্ড থেকে চাল ও গরু চোরাচালান শুরু করেন।
তিনি বলেন, “মালয়েশিয়ায় এই পণ্য বিক্রি করে ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা যায়। আমি আইন ভাঙতে চাই না, কিন্তু এখানে করার মতো কিছু নেই। চাকরি পাওয়া খুব কঠিন।” ১৮ বছর বয়সে তিনি প্রথম চোরাচালানের কাজে নামেন।
মানব পাচারের সংকট
মানব পাচারও ক্রমবর্ধমান সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে অনেক মানুষ মালয়েশিয়ায় পাচার হচ্ছে, যারা কাজের সন্ধানে এবং নিজ দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে পালিয়ে আসছে।
নিক রস আজহান বলেন, “জিওএফ সর্বদা সতর্ক রয়েছে, কিন্তু পাচারকারীরা ধরা পড়ার হাত থেকে বাঁচতে কৌশল পরিবর্তন করছে।”
তিনি আরও বলেন, “সীমান্ত অপরাধ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, কর্মকর্তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের অভাব মূল সমস্যা
কেলান্তান মালয়েশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম আয়ের একটি রাজ্য। এখানে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও সীমিত অর্থনৈতিক সুযোগ বিরাজ করছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই অপরাধের মূল কারণগুলো দূর করতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
কেলান্তান পিপলস অ্যাকশন কাউন্সিলের সভাপতি আইমান ইউসরি মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, “দারিদ্র্য এবং চাকরির অভাব দূর না করা গেলে চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব হবে না।”
সীমান্ত সুরক্ষা বনাম অর্থনৈতিক উন্নয়ন
জিওএফ যখন তাদের অভিযান জোরদার করছে, তখন কেলান্তান এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি – এই দুই চ্যালেঞ্জের সমাধান এখন অত্যন্ত জরুরি।
(নিউ স্ট্রেইটস টাইমস থেকে অনূদিত)
Leave a Reply