সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:২০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ভাষার গান’ নিয়ে আসছেন রিজিয়া ও দিঠি ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৫৮) আমেরিকা- ভারত সম্পর্ক ২১ শতকের বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রেশন–সুবিধা চালুর প্রস্তাব ডেমোক্র্যাটরা মাস্ক ডেরেঞ্জমেন্ট সিনড্রোমে ভুগছে প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৯২) কিয়েভ রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনা শুরুর আগে ‘নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ চায় বুর্জোয়া নেতৃত্ব না থাকায় আমেরিকার ডেমোক্র্যাট দল এখন বিপাকে অ্যাপল এনক্রিপশণ সেবাকে বিপজ্জনক বলছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা মোবাইল ইন্টানেটের অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী প্যাকেজে যুক্ত করতে হাইকোর্টের রুল

ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন: ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’   

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১২.৩০ এএম

(ভারতের রাষ্ট্রীয় টিভি দূরদর্শনে দেয়া সাক্ষাৎকার)

প্রশ্ন: কর কাঠামোতে বদল এনে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে অর্থনৈতিক ভিত্তি কী?

উত্তর (নির্মলা সীতারামন): আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁর নির্দেশ ছিল রাজস্ব ক্ষতির হিসাব সরিয়ে রেখে মানুষের হাতে অর্থ ফেরত দিতে হবে। কে এই মানুষ? করদাতারা। যখন আমরা জনগণের হাতে অর্থ ফেরত দিতে চাই, তখন বিষয়টি ভিন্ন—কখনো আমরা বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিই, কখনো দরিদ্র প্রবীণ নাগরিকদের পেনশন দিই; এভাবে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে সাহায্য করা হয়। কিন্তু এখানে আমরা বিশেষত সেই করদাতাদের কথা বলছি, যারা দেশ চালাতে সাহায্য করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব করেছিলেন, সৎ করদাতাদের স্বস্তি দিতে উপযুক্ত হিসাব-নিকাশ করে দেখতে। আমরা সেই হিসাব কষে তাঁর কাছে উপস্থাপন করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে অনুমোদন দেন। তাই আমি একে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়া বলে দেখছি না; বরং করদাতাদের হাতে আরও অর্থ তুলে দেওয়া বলেই মনে করছি।

প্রশ্ন: পরবর্তী পাঁচ বছরে এমএসএমই (ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প) খাতে অতিরিক্ত ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই ঋণ কী হারে পাওয়া যাবে?

উত্তর: ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বাজেটে আমি বলেছিলাম, শিল্প ও এমএসএমই ক্লাস্টারগুলিতে সিডবিআই (স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া) সরাসরি শাখা খুলবে। এমএসএমই মন্ত্রকের অধীনে প্রায় ১৮০টি ক্লাস্টার রয়েছে। প্রতিটি ক্লাস্টারে আমরা সিডবিআই-এর শাখা চাই। সাধারণত সিডবিআই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ দেয়, ব্যাঙ্ক আবার এনবিএফসি-কে (নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানি) দেয়, তারাও পরবর্তীতে ছোট আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেয়। প্রতিটি স্তরে সুদের হার একটু একটু করে বেড়ে যায়। কিন্তু সিডবিআই সরাসরি ঋণ দিলে সুদের হার অনেক যুক্তিযুক্ত থাকবে।

এমএসএমই-দের সাধারণ অভিযোগ, ঋণদানকারী সংস্থাগুলি তাদের ব্যবসার চক্র বা মূলধন প্রয়োজনের ধরন ঠিকমতো বোঝে না। সিডবিআই যদি সরাসরি কাজ করে, তবে তাদের মূলধন চাহিদা অনুযায়ী সঠিক নিয়মে ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে। আমাদের ভাবনায় ব্যাঙ্ক যা করে, করতে থাকবে; পাশাপাশি সিডবিআই সরাসরি ঋণ দিলে এমএসএমই-রা অনেক সহজে ও যুক্তিসংগত সুদে ঋণ পেতে পারে।

প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী বাজেটের প্রশংসা করে বলেছেন, এই বাজেট দেশে চাহিদা, বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি—সবকিছুকেই শক্তিশালী করবে। আপনি কীভাবে বাজেটকে ৭%-এর নিচের প্রবৃদ্ধির হার থেকে ৮-১০%-এর দিকে নিয়ে যাওয়ার যোগসূত্র হিসেবে দেখছেন?

উত্তর: এই বাজেটের মাধ্যমে আমরা একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলছি যে, অর্থসংস্থানে (ক্রেডিট অ্যাক্সেস) সহজ সুবিধা থাকা খুবই জরুরি। যখন মানুষের আয় বাড়ে, তখন তারা প্রয়োজনীয় সঞ্চয় রেখে অতিরিক্ত অংশ ব্যয় করার কথা ভাবতে পারে। আমরা চাই সঞ্চয় বাড়ুক, কিন্তু সঞ্চয় রেখে মানুষের হাতে যেন কিছু অতিরিক্ত টাকা থাকে, যা তারা স্বাস্থ্য বা সন্তানের শিক্ষায় ব্যয় করতে পারবে। ঠিক যেমন কোম্পানিগুলো আশা করে বাজারে চাহিদা বাড়লে তাদের উৎপাদনও বাড়াতে পারবে।

আমরা সবার হাতে অর্থ দিচ্ছি না; দিচ্ছি করদাতা তথা মধ্যবিত্তদের হাতে। প্রধানমন্ত্রী মোদি শুরু থেকেই মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বিশেষ সম্মান করেন। মানুষের মনে আমাদের সরকার সম্পর্কে কী প্রত্যাশা আছে, সেদিকে আমরা নজর রাখছি। আমরা ‘করদাতা সনদ’ (ট্যাক্সপেয়ার চার্টার) নিয়ে এসেছি। এটি সেই দিকেই একটি ধাপ—করদাতাদের সম্মান করা, তাদের বিশ্বাস করা এবং তারা যেন তাদের ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।

প্রশ্ন: বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের (গ্লোবাল ইনভেস্টর) কাছে কি এই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে যে, ভারত ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত?

উত্তর: আমরা দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি (বাইল্যাটেরাল ইনভেস্টমেন্ট ট্রিটি) পর্যালোচনা করছি, তার বিভিন্ন ধারা ও কাঠামোকে আরও মজবুত করছি। বিনিয়োগ আকর্ষণে যত রকম উদ্যোগ নেওয়া দরকার,আমরা নেব।

প্রশ্ন: চর্মশিল্প, জুতো ও খেলনা শিল্পকে সহায়তার কথা উল্লেখ করেছেন। এদের জন্য সরকারের পরিকল্পনা কী?

উত্তর: ইলেকট্রনিকস খাতে পিএলআই (প্রোডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ) স্কিমের সুফল আমরা বেশ ভালোভাবে পেয়েছি। এখন আমরা কয়েকটি অন্যান্য খাতে আরও সহযোগিতা দিতে চাই। এই তিনটি ক্ষেত্রের চাহিদা কী, তা খতিয়ে দেখে সমর্থন দেব।

চর্মশিল্পের ক্ষেত্রে আমরা আমদানি শুল্কে কিছুটা পরিবর্তন এনেছি, আর কিছু রপ্তানি শুল্কেও সংশোধন করেছি। উদ্দেশ্য হলো, উপযুক্ত মানের কাঁচামাল বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে ছোট ট্যানারিগুলোও যেন লাভবান হয়। পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে কোথাও আমদানি শুল্ক কমানোর দরকার হলে, সেদিকেও আমরা নজর দিয়েছি। মোট কথা, কেবল উৎপাদনে প্রণোদনা নয়, কাঁচামালের খরচ কমানোর দিকেও নজর দিচ্ছি।

প্রশ্ন: ইন্ডিয়া পোস্টকে (ভারতীয় ডাক বিভাগ) পরিবহন ও সরবরাহ সংস্থা (লজিস্টিকস অর্গানাইজেশন) রূপে পরিণত করার যে পরিকল্পনা, তার উদ্দেশ্য কী?

উত্তর: এখনো ডাকসেবকরা বহু রকম কাজ করেন। দেশজুড়ে বিশাল ডাকঘর নেটওয়ার্ক রয়েছে। এসব যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করি, সেগুলো হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পড়বে। আমরা ভারতীয় ডাক বিভাগের সঙ্গে মানুষের ঐতিহাসিক সংযোগকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাই এবং একে দেশের বিকাশের একটি স্নায়ুকেন্দ্রে পরিণত করতে চাই।

তার পাশাপাশি আমরা চাই যে, তারা লজিস্টিকস ফাংশনও নিক। কারণ বহু বৈশ্বিক মার্কেটিং কোম্পানি সারা দেশে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক খুঁজছে। সেই সুযোগটাই আমরা ইন্ডিয়া পোস্টকে ব্যবহার করে নিতে চাই।

প্রশ্ন: বাজেটে ‘বিকশিত ভারত’ সংজ্ঞায়িত হয়েছে। ভবিষ্যতে কি এই লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখেই যাবতীয় নীতি নেওয়া হবে?

উত্তর: অবশ্যই। এটি রাজ্যগুলোকেও তাদের অর্থনীতি গড়ে তুলতে একটি স্পষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছে। গত এক বছরে আমরা এই লক্ষ্য নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছি; রাজ্য ও কেন্দ্র মিলে কীভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যায়, তা স্থির করেছি।

আমরা অতি বিশদ পরিকল্পনা করছি—প্রতিটি সূচকের জন্য কী কী উপাদান দরকার, কোথায় কত ব্যয় বরাদ্দ করতে হবে ইত্যাদি। রাজ্যগুলো যে অর্থ পায়, তার বড় অংশও যেন তাদের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হয়, যাতে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলেমিশে দেশকে সেই লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন: দশ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ মনিটাইজেশনের লক্ষ্য (অ্যাসেট মনিটাইজেশন) আর বিনিয়োগ থেকে বেরিয়ে আসা (ডিসইনভেস্টমেন্ট)—এই দুটোর মধ্যে কী পার্থক্য?

উত্তর: ডিসইনভেস্টমেন্ট ও অ্যাসেট মনিটাইজেশন একেবারেই ভিন্ন বিষয়। অ্যাসেট মনিটাইজেশনে সম্পদ বিক্রি করা হয় না, বরং অপ্রযুক্ত সম্পদকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করা হয়।

যদি সেগুলো কোনো ব্যক্তিগত সংস্থা ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তারা দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে লিজে নিতে পারে। সেখান থেকে আমাদের আয় হবে, কিন্তু সম্পদ আমাদেরই থাকবে। আসলে ব্যবহারহীন সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আয় করার উপায়।

আমরা আগেও এটি করেছি এবং ভালো সাড়া পেয়েছি। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও কিছু সম্পদ চিহ্নিত করেছি, যা এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করব।

প্রশ্ন: আপনি বলেছেন নিয়ন্ত্রকদের (রেগুলেটর) ক্ষেত্রে ‘লাইট টাচ’ মডেল ব্যবহৃত হবে। অ্যাসেট মনিটাইজেশনের ক্ষেত্রেও কি এমনটি হবে?

উত্তর: আমরা রাজ্যগুলোর সঙ্গে লাগাতার আলোচনা চালাচ্ছি। অনেক রাজ্যই তাদের সম্পদ এমনভাবে ব্যবহার করতে চাইছে, যাতে তাদের লাভ হয়। কিছু সম্পদ কেন্দ্রীয় সরকারের মালিকানাধীন, যা রাজ্যগুলো ব্যবহার করতে চাইলে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা করা হবে। ২০২০ সালে প্রথম দফায় যে অ্যাসেট মনিটাইজেশন ঘোষণা করেছিলাম, সেখানকার পদ্ধতিই এ ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হবে।

সে অনুযায়ী আরও সম্পদ মনিটাইজ করা হবে। এখান থেকে যে অর্থ আসবে, তা নতুন সম্পদ গড়ে তোলার পেছনে ব্যয় হবে।

প্রশ্ন: এবারের বাজেটে মহিলাদের জন্য বহু উদ্যোগ দেখা গেছে। অন্যদিকে ভারতীয় জ্ঞানভাণ্ডার (নলেজ রিপোজিটরি) তৈরি করার কথাও আছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন?

উত্তর: প্রাচীন পান্ডুলিপির ডিজিটাইজেশন করা হবে, আর এটি দেশজুড়েই হবে। কারণ বেশির ভাগ পান্ডুলিপি ব্যক্তিগত মালিকানায় আছে। আমরা সেগুলোর স্বত্বাধিকার নিচ্ছি না, বরং শুধু ডিজিটাইজ করার অনুরোধ করছি, যাতে সেগুলোর ডিজিটাল সংস্করণ একটি কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে সংরক্ষিত থাকে। গবেষকেরা এখানে প্রবেশাধিকার পাবেন।

মহিলাদের ক্ষেত্রে, এবারের বাজেটে আমরা চারটি শ্রেণিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি—মহিলা, দরিদ্র, যুবক এবং ‘অন্নদাতা’ (কৃষক)। মহিলাদের জন্য একটি নতুন টার্ম লোন স্কিম ঘোষণা করা হয়েছে, যার নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

 

আমরা গত নয় বছরে ‘স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’ প্রোগ্রামে ভালো ফল পেয়েছি। সেটিকে আরও সম্প্রসারণ করতে চাই, যাতে আরও ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হতে পারেন। প্রত্যন্ত এলাকার ব্যাংক শাখা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন টার্ম লোন দেওয়া সম্ভব হবে।

প্রশ্ন: ‘সোয়ামিহ’ (SWAMIH) স্কিমের মাধ্যমে আরও এক লক্ষ আবাসিক ইউনিট তৈরির কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরবরাহ কি পর্যাপ্ত?

উত্তর: এখনও বহু প্রকল্প আটকে আছে। মধ্যবিত্ত মানুষেরা ইএমআই দিচ্ছেন, কিন্তু আশা করা ফ্ল্যাটগুলো সময়মতো পাননি। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প বহু বছর দেরি করছে।

২০১৯-২০ সালের শেষ দিকে সোয়ামিহ তহবিল যখন চালু করা হয়, তখন থেকেই আমরা ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। এটা খুব নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে—টাকা ধাপে ধাপে ছাড়া হয়, অন্য কোনো কাজে যাতে diversion না হয়, সে দিকে নজর রাখা হয়। এগুলো রেরা (RERA) অনুমোদিত প্রকল্প, ফলে কাজের অগ্রগতি ট্র্যাক করা যায়। এমন বহু মানুষ রয়েছেন, যাদের ফ্ল্যাট ডেলিভারির তারিখ পেরিয়ে গেছে। এই প্রকল্প সেইসব বাড়ি-ক্রেতাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে পারে।

প্রশ্ন: বিমা খাতে এফডিআই (FDI) সীমা ৭৪% থেকে বাড়িয়ে ১০০% করার সম্ভাবনা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

উত্তর: এখনো বহু সংস্থা ও বিদেশি বিনিয়োগকারী এতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং মালিকানা পেতেও আগ্রহী। এর ফলে বিমা খাতে আরও বেশি অর্থ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, ভারতে সংগৃহীত প্রিমিয়ামের অর্থ অবশ্যই ভারতের মধ্যেই বিনিয়োগ করতে হবে। এ বিষয়ে যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা (গার্ডরেল) রেখেছি।

প্রশ্ন: জাতীয় উৎপাদন মিশন (ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং মিশন) নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী? কী ফলাফল আশা করা যায়?

উত্তর: ভারতের রপ্তানির সম্ভাবনা বিশাল, কিন্তু জিএসটি আসার আগে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা সীমিত ছিল। এখন বৈশ্বিক অস্থিরতার ফলে নতুন রপ্তানি বাজার খুঁজতে কিছু সমস্যা হচ্ছে।

আমরা ইসিজিসি (ECGC) বা এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের আরও বেশি মূলধন সহায়তা দিতে চাই, যেখানে তাদের রাজধানী বাড়ানোরও ব্যবস্থা করা হবে। রপ্তানিকারকদের অভিযোগ বিদ্যুৎ খরচ ও পরিবহন খরচ বেশি, বিশেষ করে ছত্তিশগড়ের মতো অঞ্চল থেকে পণ্য সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত নিয়ে যেতে গিয়ে খরচ বাড়ে।

৩২টি রপ্তানি প্রচার পরিষদের (এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল) সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সমাধান করতে চাই। নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য ‘রিভার্স বায়ার সেলার মিট’ ভারতে আয়োজনের মতো পরিকল্পনাও হবে।

এফটিএ (ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট) সবার জন্য সমানভাবে সহজলভ্য করতে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হবে। তার সঙ্গে ‘ভারত নেট’ ব্যবহার করে ডিজিটাল ডেটা ব্যাংক ও ড্যাশবোর্ড তৈরির পরিকল্পনাও আছে।

প্রশ্ন: সমুদ্র খাতে উন্নয়নের জন্য ২৫,০০০ কোটি টাকার ‘মেরিটাইম ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’-এর উদ্দেশ্য কী?

উত্তর: আমাদের রয়েছে বহু বন্দর। প্রতিটি বন্দরে বহু সম্ভাবনা আছে। পাশাপাশি জাহাজ ভাঙার (শিপ ব্রেকিং) বড় বাজার একসময় ভারতে ছিল। সময়ের সাথে প্রতিযোগিতা বেড়েছে, পরিবেশ সচেতনতার কারণেও সেখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

আমরা চাচ্ছি বড় টননেজের জাহাজ তৈরির শিল্পকে উৎসাহ দিতে। তার জন্য সমর্থন দরকার। সেই কারণেই এই তহবিল তৈরি করা হয়েছে।

প্রশ্ন: ভারতের জ্বালানি রূপান্তরের (এনার্জি ট্রানজিশন) মডেল কী হবে? আর পারমাণবিক শক্তিকে (নিউক্লিয়ার পাওয়ার) অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ কী?

উত্তর: এটি বাজেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা। গতবার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পাম্পড স্টোরেজ স্কিমের কথা বলেছিলাম, যা কম খরচে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।

ভারতে ভবিষ্যতে জ্বালানির চাহিদা অনেক বাড়বে। আমাদের একটি টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমাধান দরকার। আমরা আবার কয়লা বা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়াতে চাই না, বরং উন্নত পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছোট আকারের রিঅ্যাক্টর গড়ার দিকে যাচ্ছি। বেসরকারি খাতকেও এতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

প্রশ্ন: এতো কর ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও ৪.৪% আর্থিক ঘাটতির (ফিসকাল ডেফিসিট) লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে পূরণ করবেন?

উত্তর: আমরা হিসাব-নিকাশ করে দেখেছি কেমন দূরত্ব পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব। আমরা নিশ্চিত যে মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ এলে খরচও বাড়বে, ফলে অর্থনীতিতে এই অর্থ ঘুরে আসবে।

দ্বিতীয়ত, আগেই বলেছি সম্পদ মনিটাইজেশনের মাধ্যমে আয় বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি আমরা করের আওতা (ট্যাক্স নেট) আরও বাড়াব।

প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী এই বাজেটকে ‘জনতার বাজেট’ বলেছেন। আপনার দৃষ্টিতে এটা কেন ‘জনতার বাজেট’?

উত্তর: কারণ, মানুষ সময়ে সময়ে যে যে দাবি তুলেছে—শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, শিশুদের পুষ্টি উন্নতি, চিকিৎসাবিজ্ঞানের আসন সংখ্যা বৃদ্ধির মতো জিনিস—we’re responding to all of that (ব্যাখ্যা করেছি উপরে)। সে কারণেই আমরা আসন্ন সপ্তাহে আয়কর আইনকে আরও সরল করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। মানুষ যা চায়, এই বাজেট সেটি বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টা করছে। এটাই একে ‘জনতার বাজেট’ করে তুলেছে।

(হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত দূরদর্শনের সঙ্গে নির্মলা সীতারামনের সাক্ষাৎকারের নির্যাস এর বাংলা অনুবাদ)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024