শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চের সুপারিশ কতটুকু যৌক্তিক?

  • Update Time : বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ৫.৫৭ পিএম
সুপ্রিম কোর্ট

জান্নাতুল তানভী

পাঁচই অগাস্টের পরে পরিবর্তিত বাংলাদেশের সংস্কারে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে একটি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এ বিভাগের সংস্কারের জন্য কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ও সম্প্রসারণ।

রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন।

একইসাথে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালত সম্প্রসারণ এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনেরও সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

বুধবার এই কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

বাংলাদেশে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের জুনে সংবিধান সংশোধন করে বিভিন্ন বিভাগে হাইকোর্টের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়।

সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাবে এমন যুক্তিসহ নানা কারণ দেখিয়ে সে সময় ঢাকায় আইনজীবীরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।

হাইকোর্টে ওই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটও হয়। পরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ অষ্টম সংশোধনীর বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের অংশটুকু অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

এবারও আইনজীবীরা বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ নিয়ে সন্দিহান।

তবে কমিশনের পক্ষ থেকে যুক্তি দেয়া হয়, বিচারকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেই

বিভাগীয় সদরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের প্রস্তাব করা হচ্ছে ।

এরশাদ সরকারের আমলে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী এনে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করা হয়

এরশাদ সরকারের আমলে কী হয়েছিল ?

বাংলাদেশে ১৯৮২ সালের মার্চে একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে দেশের কর্তৃত্ব নেন জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

সামরিক ফরমান জারি করার পর তিনি জাতীয় সংসদ ও প্রেসিডেন্টসহ মন্ত্রিপরিষদ বাতিল করে সংবিধানের কার্যকারিতা স্থগিত ঘোষণা করেন।

একইসাথে ওই বছরের নভেম্বরে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। ওই বছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়।

সে সময়ের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়, চার বছর পর ১৯৮৬ সালের জুনে হাইকোর্টের বিভিন্ন বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চগুলোকে সার্কিট বেঞ্চে রূপান্তরিত করা হয়।

দুই বছর পর ১৯৮৮ সালের এপ্রিলে ১৩৭ দিন পর জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়।

পরে সংবিধান পুনরুজ্জীবিত হলে ওই বছর জুন মাসে সংবিধান সংশোধন করে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ছয়টি বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়।

কিন্তু ঢাকার আইনজীবীরা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।

ছয় বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চের প্রতিবাদে সে সময় কর্মবিরতিও পালন করা হয় বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী।

সে সময় হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত না হলেও নিয়মিত যাতায়াত করতেন রমজান আলী শিকদার। যিনি পরে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে কাজ শুরু করেন।

বিবিসি বাংলাকে মি. শিকদার বলেন, “বেশ কিছু ইস্যুতে সেসময় আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেছিলেন। সেসব দাবির অন্যতম ছিল অষ্টম সংশোধনী পাস করার ফলে জুডিশিয়ারি ডিসেন্ট্রালাইজড (বিচারবিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ) হয়ে চট্টগ্রাম, রংপুরসহ ছয় বিভাগে চলে যায়। তখন সংবিধানের বেসিক ক্যারেক্টার (মূল বৈশিষ্ট্য) পরিবর্তন হয়ে যায়।”

একইসাথে বিভিন্ন বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ হলেও বিচারকদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা, অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা, আইনজীবীদের জন্য লাইব্রেরির সীমাবদ্ধতাসহ নানা প্রতিকূলতা দেখা দেয়।

এমন প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেছিলেন বলে জানান এই আইনজীবী।

মি. শিকদার জানান এই আন্দোলনের বাইরে থাকেন শুধু জাতীয় পার্টির আইনজীবীরা।

“বিক্ষোভ-আন্দোলনের এক পর্যায়ে দেখা যায় আইনজীবীদের ওপর বিভিন্ন রকম নির্যাতন- নিপীড়ন চলতে থাকে। আজ ওর বাড়ি, কালকে তার বাড়িতে হামলা শুরু হয়। শুধু তাই না, এরশাদ সাহেবের আমলে ড. কামাল হোসেনের বাড়ির ইলেকট্রিসিটি লাইনও ডিসকানেক্ট করে দিলো।” বলেন মি. শিকদার।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অবশ্য মনে করেন, সে সময় ঢাকার আইনজীবীরা নিজেদের স্বার্থে ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আন্দোলন করেছিলেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “স্রেফ নিজেদের স্বার্থে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চের বিরোধিতা করেছিলেন ঢাকার আইনজীবীরা। কারণ তাদের ঢাকা থেকে মফস্বলে যাতায়াতে ঝামেলা, মামলা অন্যের ভাগে চলে যাওয়া এমন সব কারণে নিজ স্বার্থে তারা বিক্ষোভ করেন।”

আপিল বিভাগের রায়ে কী রয়েছে?

ছয় বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের ওই অষ্টম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে তিনটি রিট হয়। তবে সেসব রিটই খারিজ হয়ে যায়।

পরে ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে দুইটি সিভিল আবেদন করা হয়।

১৯৮৯ সালে করা এ মামলা ‘আনোয়ার হোসাইন চৌধুরী বনাম বাংলাদেশ’ নামে বহুল পরিচিত ও আলোচিত।

এই মামলার শুনানিতে প্রশ্ন ওঠে–– একক দেশে একটার বেশি হাইকোর্ট থাকতে পারে কি না।

অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশ নিয়ে গড়া দেশে প্রতিটি প্রদেশে একটি করে হাইকোর্ট থাকে, যেমন ভারত।

কিন্তু বাংলাদেশ প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্য ছাড়া একটি একক দেশ, সেই দেশে একাধিক হাইকোর্ট সংবিধান-সম্মত কি না এমন প্রশ্ন তুলে ধরেন আইনজীবীরা।

সংবিধানের সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে করা এ মামলায় সে সময় বাংলাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবীরা আবেদনকারীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।

তাদের মধ্যে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন, সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ (দেশের তৃতীয় অ্যাটর্নি জেনারেল ও বর্তমান প্রধান বিচারপতির বাবা), সংবিধান বিশেষজ্ঞ আমীর উল ইসলাম ও মাহমুদুল ইসলাম ছিলেন অন্যতম।

তারা তাদের যুক্তিতে উল্লেখ করেন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন সংবিধানের মূল চেতনার বিরোধী এবং এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।

পরে ওই বছরই ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে রায় দেয় আপিল বিভাগ।

চার জন বিচারপতির মধ্যে তিন জন সংশোধনী বাতিলের পক্ষে এবং একজন বিপক্ষে মত দেন।

রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে, একক দেশে একাধিক হাইকোর্ট থাকতে পারে না। অতএব, সংশোধনীর একাধিক হাইকোর্ট বানানোর অংশটাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো।

হাইকোর্ট ডিভিশন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হওয়ার কারণে, সংশোধনীর ফলে সেখান থেকে হাইকোর্টের বিলোপ সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিবর্তন বলে রায়ে উল্লেখ করে আপিল বিভাগ।

একইসাথে আপিল বিভাগ আগের মতো একটি হাইকোর্টের ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার ঘোষণা দেয়।

এই মামলার আইনজীবী ও দেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম (প্রয়াত) তার লেখা ‘কন্সটিটিউশনাল ল অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক বইয়ে এই রায়ের কথা উল্লেখ করেছেন।

রায়ের ব্যাখ্যায় তিনি লিখেছেন, বিচারকার্যের প্রয়োজনে রাজধানীর বাইরে যে কোনো স্থানে হাইকোর্ট ডিভিশনের কার্যক্রম আয়োজনের এখতিয়ার রয়েছে প্রধান বিচারপতির।

কিন্তু এর সাথে যেহেতু আর্থিক ব্যয় ও নির্বাহী কর্তৃপক্ষের সহায়তার বিষয়টি জড়িত, সে কারণে এর জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তেমন সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতি তখনই নিতে পারবেন যখন স্থায়ী হাইকোর্ট ডিভিশনের কার্যক্রম কোনো ক্ষতির মুখে পড়বে না।

আদালত, প্রতীকী ছবি

কমিশনের সুপারিশে যা বলা হয়েছে

সংস্কার কমিশনের খসড়া সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্থায়ী বেঞ্চ কোন কোন এলাকা থেকে উদ্ভূত মামলা গ্রহণ করতে পারবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে বিচার কাজ পরিচালনা এবং রায়, আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদি দেয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বজায় রাখতে হবে।

অর্থাৎ স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশব্যাপী কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা দিয়ে বিভাজিত হবে না এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ্ণ হবে না।

এতে আরও বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বা কোনো স্থায়ী বেঞ্চে বিচারাধীন মামলার কোনো পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে যৌক্তিক কারণে বা ন্যায়বিচারের স্বার্থে ওই মামলা অন্য কোনো যথাযথ বেঞ্চে স্থানান্তর করতে পারবেন।

সবগুলো স্থায়ী বেঞ্চ এক সঙ্গে কার্যকর করা কঠিন মনে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ কার্যকর করা যেতে পারে বলে সংস্কার কমিশনের খসড়ায় সুপারিশ করা হয়েছে।

বিভাগীয় স্থায়ী বেঞ্চগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আদালত ও সহায়ক কার্যালয়, বিচারক ও সহায়ক জনবলের জন্য উপযুক্ত বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে বলেও সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিশনের সুপারিশ কতটুকু যৌক্তিক?

বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চের অতীত ইতিহাস অথবা আপিল বিভাগের পূর্বের রায়ের বিষয় বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন আমলে নিয়েছে কি না এমন প্রশ্নে কমিশনের সদস্য মাসদার হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানান, আগের রায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেই এই সুপারিশ করা হয়েছে।

মি. হোসেন বলেন, “এরশাদ সাহেব হাইকোর্টগুলাকে ডিসেন্ট্রালাইজড করার পরে হাইকোর্টে যে মামলাটা হয়েছে তাতে অ্যাপিলেট ডিভিশনে বিভক্ত রায় হয়েছিল। সেখানে বিচারপতি এ টি এম আফজাল সাহেব ডিসেন্ডিং (বিভক্ত) রায় দেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে রায়টি হয়েছিল।”

অষ্টম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে করা আবেদনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের রায়ে হাইকোর্টের স্বকীয়তা নষ্ট, একক ইউনিটের ক্ষতিসহ তিনটি কারণ উল্লেখ করে হাইকোর্ট বাইরে যাওয়া সংবিধান বিরোধী বলে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

মি. হোসেন জানান এই সুপারিশের যুক্তি হিসেবে যেই বিচারপতি বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন সেই অংশ গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে জানান।

তিনি বলেন, “এ টি এম আফজাল স্যার তার ডিসেন্ডিং জাজমেন্টে বলেছেন- যে তিনটি কারণ দেয়া হয়েছে একটিও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সংবিধানের একক চরিত্র আদৌ ক্ষুণ্ণ হয়নি।”

“হাইকোর্টের যে বেঞ্চ ঢাকাতে আছে তারা যেভাবে কাজ করছে, ওখানেও সেভাবে কাজ করবে। তিনি এতো সুন্দর করে যুক্তিগুলো খণ্ডন করেছেন। কিন্তু যেহেতু তিনি বেঞ্চের মাইনর, একজন মাত্র (একজন বিপক্ষে), তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতেই রায় হয়।” বলেন মি. হোসেন।

এটি করার ক্ষেত্রে সংবিধান আদৌ অন্তরায় বা প্রতিবন্ধকতা নয় উল্লেখ করে মি. হোসেন বলেন, সরকার প্রয়োজন মনে করলে সংবিধান সংশোধন করতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে।

মি. হোসেন মনে করেন কিছু স্বার্থান্বেষী আইনজীবীদের কারণেই ওই রায় হয়েছিল।

সংস্কার কমিশনের এই সদস্য মনে করেন সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে না।

এর জন্য সংবিধানে সংশোধনী না করেও বাস্তবায়ন করা যাবে। কারণ এটি প্রধান বিচারপতির বিচারিক প্রশাসনের এখতিয়ার। কীভাবে সেগুলোর ব্যাখ্যাও খসড়া সুপারিশে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া একক বিভিন্ন দেশের উদাহরণও খসড়া সুপারিশে তুলে ধরা হয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানের পর বিচার বিভাগের সংস্কারের জোরালো দাবি উঠে

আইনজীবীরা কী বলছেন?

সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম মনে করছেন, এটি একেবারেই অযৌক্তিক একটি সুপারিশ।

“এটা একেবারেই অযৌক্তিক কথা। একটা গণতান্ত্রিক সরকার আসুক নির্বাচন হোক, তারপর তারা করবে এসব। কারণ ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট নেয়ার কথা একেবারেই ইউনিটারি ফর্ম অব দ্য কন্সটিটিউশনের এগেইনস্টে (সংবিধান বিরোধী), যেটি অষ্টম সংশোধনীর মামলায় ইতিমধ্যেই স্যাটেল হয়ে গেছে।” বলেন মি. করিম।

সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে মি. করিম বলেন, ” হাইকোর্ট একটা ডিভিশন যেটি শুধু ঢাকাতেই হবে। এটি প্রাদেশিক সরকারের মতো না। ভারতে যেমন বিভিন্ন প্রদেশে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব বিভিন্ন স্থানে হাইকোর্ট আছে। আমাদের দেশে একটাই হাইকোর্ট বিভাগ।”

মি. করিম মনে করেন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট হলে একাধিক হাইকোর্ট হবে যা কিনা আমাদের সংবিধানের স্পিরিটের পরিপন্থী।

তবে অস্থায়ীভাবে সার্কিট কোর্ট হতে পারে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম।

তবে ভিন্ন মতও রয়েছে আইনজীবীদের। এমন একজন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।

তিনি মনে করেন, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার নিশ্চিত করে বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ করা জরুরি। তবে আগে স্থায়ী বেঞ্চ না করে সার্কিট বেঞ্চ (অস্থায়ী বেঞ্চ) করা উচিত বলে মনে করেন এই আইনজীবী।

বিবিসি বাংলাকে মি. খান বলেন, “এখন অবশ্যই বিচারবিভাগ ডিসেন্ট্রালাইজ করা জরুরি। তবে আগের মতো প্রথমেই স্থায়ী বেঞ্চ না করে সার্কিট বেঞ্চ করতে পারে। প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করে অর্থাৎ অবকাঠামো, লাইব্রেরি, আইনজীবী – বিচারক উভয়ের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করে তবেই স্থায়ী বেঞ্চ করা যেতে পারে।”

বিবিসি নিউজ বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024