“দূতবাসে আমরা বাংলাদেশ থেকেও ফোন পাচ্ছি। তাদের দেয়া তথ্য ধরেও ওই এজেন্সির মাধ্যমে লাশ শনাক্তের চেষ্টা করছি,” বলেন তিনি। এছাড়া যে দুইজন জীবিত আছেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলে তথ্য জানার চেষ্টার কথা জানান তিনি।
তিনি জানান, “গত দেড় বছরে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে চার হাজার ২০০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখনো হাজারের বেশি অবৈধ বাংলাদেশি আটকে আছে লিবিয়ায়।”
আর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রলালয়ের আফ্রিকা ডেস্কের মহাপরিচালক বিএম জামাল হোসেন জানান, “জায়গাটি ত্রিপোলি থেকে এক হাজার মাইল দূরে। ওটা বেনগাজিতে। ওখানে আলাদা সরকার। ত্রিপোলির অনুমোদনে কাজ হয় না। আমরা বেনগাজিতেও আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো অনুমতি পাইনি। ওই জায়গাটি অনেক দুর্গম। যাওয়াও কঠিন। তবুও আমাদের দূতাবাসের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।”
“তাদের লাশগুলো আগেই দাফন করা হয়েছে এবং অনেকটাই পচে গেছে। তারপরও আমরা আশা করছি শনাক্ত করতে পারবো। তবে ওখানকার রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, লাশগুলো বাংলাদেশিদের। তারা চেহারা এবং অন্যান্য আলামত দেখে বলছে,” জানান তিনি।
ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, “আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে ওই লাশগুলো বাংলাদেশিদের। তবে লাশগুলো পচে গেছে।”
“গত ১০ বছর ধরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যারা ইউরোপে যায়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি। গত বছর কমপক্ষে ১৪ হাজার বাংলাদেশি এভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮৪ হাজার বাংলাদেশি এভাবে সমূদ্রপথে ইউরোপে গিয়েছে। প্রতি বছর গড়ে অন্তত ১০০ বাংলাদেশি এভাবে মারা যায়।”
আর অভিবাসন বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনির ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আসলে আগে এরা আকাশ পথে যেতেন। কিন্তু কড়াকড়ি হওয়ার পর এখন ভূমধ্যসাগর হয়ে যান। যারা যান, তারা নিজেরাও জানেন যে, এটা ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও যান। কারণ, কেউ কেউ তো শেষ পর্যন্ত যেতে পারেন।”
“তারা দালাল ধরে যান। এর সঙ্গে শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক চক্রও জড়িত। যারা যান, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলে দেখেছি, প্রতিজনের ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগে। কিন্তু এই টাকা খরচের পর অনেকেই বিপদে পড়েন, মারা যান বন্দি হন, ক্যাম্পে আটক হন.” বলেন তিনি।
আসিফ মুনির মনে করেন, “এখানে সচেতনতার অভাব আছে। অনেকেই জানে না যে, ইউরোপে গেলেই যে সেখানে থাকা যায় না। আর এইসব পাচারকারীদের ধরতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনও খুব বেশি কাজ করছে না। ফলে প্রলোভনে পড়ে, উন্নত জীবনের আশায় আর এই সময়ে পরিস্থিতির কারণে হয়তো অনেকে যে-কোনো উপায়ে ইউরোপে যেতে চাইছেন।”
তিনি বলেন, “ফরিদপুর, মাদারিপুর, নোয়াখালী ও সিলেটসহ কয়েকটি এলাকার মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে ইটালিতে থাকা বাংলাদেশিদের একটি অংশ আবার তাদের স্পন্সরের কাগজ পাঠিয়ে সহায়তা করেন।”
Leave a Reply