হুমায়ুন ফরিদি ও রাইসুল ইসলাম আসাদ দুজনেই বাঙালি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ও উচ্চ শিক্ষিত। পারিবারিক পরিবেশ ও শিক্ষা জীবনের বেড়ে ওঠা পরিবেশের ভেতর দিয়ে একজন মানুষের স্বাভাবিক যে আচার আচরণ বা চলাফেরার স্টাইল গড়ে ওঠে- অভিনেতা হবার পরেও সেখান থেকে বের হয়ে আসা অনেক শক্ত একটি অধ্যায়। আর শুধু বের হয়ে আসা নয়, সেটাকে একেবারে স্বাভাবিক করে তোলাই একজন অভিনেতার উচ্চতায় পরিমাপের পারদ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী এ যাবত অনেক অভিনেতা জম্মেচ্ছেন। সুনামের সঙ্গে, দাপটের সঙ্গে তারা মঞ্চে, ছোট পর্দায় ও বড় পর্দায় অভিনয় করেছেন। সুনাম শুধু নয়, মানুষের হৃদয় থেকে তারা তাদের প্রাপ্য আদায় করে নিয়েছেন।
এই সব সেরাদের মাঝে অনন্য হয়ে ওঠেন অন্য একটি অবস্থানে গিয়ে হুমায়ুন ফরিদি ও রাইসুল ইসলাম আসাদ। বাস্তবে নিজের জম্মও বেড়ে ওঠার পরিবেশকে সম্পূর্ণ মুছে দিয়ে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নির্ম্ম বর্গীয় কোন মানুষের চরিত্রে অভিনয়ের সময়ে একেবারে বাস্তবে সেই মানুষটি হয়ে ওঠাই অভিনয়ের ক্ষেত্রে কঠিনতম কাজ। অনেক বড় অভিনেতা একাজে সাহসী হননি আবার বড় পরিচালক হয়েও তাঁরা ওই বড় অভিনেতাদের ওই ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য মনোনীত করেননি।
শহীদুল্লাহ কায়সারের বাস্তবতার ওপর লেখা শক্তিশালী উপন্যাস সংশ্প্তক উপন্যাসের নিম্মবর্গীয় দুটি চরিত্র। একটি রমজান, অন্যটি লেুক। উপন্যাসিক শহীদুল্লাহ কায়সার লেকুকে তার অবস্থানে গোটা কাহিনী জুড়ে রাখলেও একই অবস্থানে রেখে বার বার চরিত্রটিকে ভেঙ্গেছেন ও গড়েছেন। অন্যদিকে রমজান চরিত্রটিকে তিনি সর্ব নিম্ম বর্গ থেকে এক দীর্ঘ জার্নিতে নিয়ে গেছেন। সত্যি অর্থে অসম্ভব দীর্ঘ এক চরিত্র। একেবারে সর্ব নিম্মবর্গ থেকে রাষ্ট্রক্ষমতার সহায়তায় অবৈধ অর্থের মালিক ও রাষ্ট্র’র ক্ষমতার সহায়তায় ক্ষমতাবানও করেছেন তাকে। তবে শুরু থেকে শেষ অবধি এ চরিত্রের জন্যে কত লক্ষ সিড়ির ধাপ যে উপন্যাসিক শহীদুল্লাহ কায়সার তৈরি করেছেন তা কল্পনাতীত।
এই লেকু ও রমজান চরিত্রে হুমায়ুন ফরিদি ও রাইসুল ইসলাম যে সবালীলভাবে ছোট পর্দায় এগিয়ে গেছেন তাকে কেউ কোনদিন অভিনয় মনে করবে না। মনে করবে দুটি বাস্তব চরিত্র যেন এগিয়ে চলেছে । কোন উপন্যাসের চরিত্র এভাবে খুব কম অভিনেতাকে নিজের ভেতর নিতে দেখা যায়। এমনকি চিত্রনাট্যের সংলাপে কখনও কখনও সামান্য দুর্বলতা থাকলেও দুজনেই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে অবলীলায় পার করে দিয়েছেন। রমজান চরিত্রটি কেন্দ্রিয়, অনেক বেশি ব্যপ্তি তাই স্বাভবিকই দর্শকের চোখ লেকুর থেকে হুমায়ুন ফরিদিই বেশি টেনেছেন। কিন্তু অভিনয় বিচারের নিক্তি নিয়ে বসলে পাল্লা দুটোই সমান থাকে।
পাশাপাশি তাদের দুজনের এই অভিনয় বার বার মনে করিয়ে দেয় অভিনয়ে গল্প কত বড়। বাস্তবে গল্পই যে মূল ভূমি, সেখানেই যে সকল চাষাবাদ, এতো আর নতুন কোন কথা নয়।
তাই অনেক দূর অতীত না হলেও যতটুকু অতীত সেই অতীতকে ঠেলে এখনও ইউ টিউব বা অন্য মাধ্যমে প্রতিদিন দর্শক টানছে সংশ্প্তক। আর যারা কাহিনীর শেষের থেকে অভিনয়ের প্রতি চোখের লেন্সটি রাখেন তাদের চোখের সামনে কেবলই নানা জগত খুলে দেন হুমায়ুন ফরিদি ও রাইসুল ইসলাম আসাদ।
– কালান্তর
Leave a Reply