নিজস্ব প্রতিবেদক
চাকরিপ্রার্থী ও নিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে একটি কার্যকর যোগসূত্র গড়ে তোলা প্রয়োজন। সে লক্ষ্য এবার খুলনায় ক্যারিয়ার হাব শুরু করেছে ব্র্যাক। ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির (এসডিপি) আয়োজনে গতকাল শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনায় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে ক্যারিয়ার হাবের উদ্বোধন করা হয়।
ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড (সিবিএফ)-এর সহায়তায় কেএফডাব্লিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাথে অংশীদারিত্বে ব্র্যাক খুলনায় এ কার্যক্রম শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি রাশিদা বেগম। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের পিপল, কালচার, অ্যান্ড কমিউনিকেশনস-এর ঊর্ধ্বতন পরিচালক মৌটুসী কবীর, ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড–এর হেড অফ সেক্রেটারিয়েট ড. মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, ব্র্যাক এসডিপি-র সহযোগী পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান এবং ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহরিয়ার ইসলাম।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি রাশিদা বেগম তার বক্তব্যে বলেন, ‘চাকরির ইন্টারভিউতে গেলে পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাওয়া হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও ক্যারিয়ার হাবের মাধ্যমে স্কিল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ রয়েছে। যা পরবর্তীকালে চাকরি প্রার্থীদের বিভিন্ন কর্মসংস্থানের বিষয়ে জানতে সহায়তা করে।’
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক মৌটুসী কবীর বলেন, ‘ক্যারিয়ার গড়তে ক্যারিয়ার হাবটাকে আপনারা বন্ধুর মতো মনে করবেন। যে বন্ধুর কাছে গেলে ক্যারিয়ার সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে। শিক্ষা জীবন শেষ করে কোন পথে গেলে একটা সফল জীবন গড়ে তোলা যাবে, সেরকম একটি ধারণা আপনারা এখানে পাবেন। চাকরির বাজারে বিদ্যমান চাকরিগুলোর সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি করা, নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা সৃষ্টি এবং চাকরি প্রার্থীদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে কাজ করছে ব্র্যাক ক্যারিয়ার হাব।’
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়ার পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো চাকরির বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়া, ক্যারিয়ার বিষয়ক দিক-নির্দেশনা না পাওয়া এবং চাকরির সুযোগ খুঁজে না পাওয়া। ক্যারিয়ার হাবের মাধ্যমে চাকরি প্রার্থীরা এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা পাবেন।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অন্যতম আকর্ষণ ছিল আর্টসেল-এর মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালকে ভিত্তি ধরে দেশে বর্তমান বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩. ৫৩ শতাংশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২ বলছে, দেশে স্নাতক ডিগ্রিধারীর হার ২০১৭ অর্থবছরের ১১.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জরিপ আরো বলছে, এই পাঁচ বছরে বেকার স্নাতকের সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, যা ২০১৭ অর্থবছরে প্রায় ৪ লাখ ছিল।
গত কয়েক বছরের সরকারি তথ্যে বলা হয়েছে, যৎসামান্য বা একেবারে প্রায়োগিক জ্ঞান ও দক্ষতা ছাড়াই দেশে ২০ লাখের বেশি যুবশক্তি প্রতিবছর কর্মজীবনে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ২০২৩ সালের বার্ষিক সম্মেলনে একটি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৪২ থেকে ৪৮ শতাংশই বেকার অবস্থায় রয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের অধিকাংশই কখনও ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং বা দিক-নির্দেশনা পাননি। ফলে চাকরিদাতার চাহিদা অনুযায়ী তারা নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে না।
প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জনে সুযোগ কম থাকা, সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, চলাচলের সীমিত সুযোগ এবং সামাজিক চাপের কারণে নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো শোচনীয়। এই অবস্থার বিপরীতে চাকরিদাতারাও দক্ষ জনবল খুঁজে বেড়ান। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে ২০২০ সালে রংপুর ও সিলেটে ক্যারিয়ার হাব কেন্দ্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করে ব্র্যাক। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম ও সর্বশেষ ২০২৪ সালে খুলনায় চতুর্থ ক্যারিয়ার হাব-এর কার্যক্রম শুরু হয়।
যুবশক্তির কাছে আরও নিবিড়ভাবে পৌঁছাতে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মও চালু রয়েছে। কক্সবাজার ও ঢাকাতেও চলতি বছর ক্যারিয়ার হাব-এর কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। খুলনায় এই আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ, চাকরিদাতা, সরকারের অংশীদার প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের জন্য ক্যারিয়ার হাব সেবা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সুবিধাগুলো চালু হবে।
Leave a Reply